Image description

চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত ১৮ আসামিকে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা না হলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ করা হবে বলে সম্প্রতি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হয়।

আলিফ হত্যা মামলায় পলাতক এবং আত্মগোপনে থাকা চার্জশিট ভুক্ত ১৮ জন আসামি হলেন, শুভ কান্তি দাস (২৪), ওমকার দাস (২০), বিশাল (২০), লালা ওরফে লাল দাস (১৯), বিগলাল ওরফে বিকরাল দাস (২০), পরাশ (২২), গণেশ ওরফে শ্রী গনেজ (১৯), পপি ওরফে জয়দেব দাস, (২০), দেব (২৫), জয় (৩০), লালা ওরফে লালা দাস মেথর (৪০), সুক দাস (৩৭), ভাজন ওরফে ভজন দাস (৩৭), আশিক (৩৪), শহিত (৩০), শিবা দাস (৩০), দ্বীপ দাস (২৯) ও সুকান্ত দত্ত (৩০)।

২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ইসকন থেকে বহিষ্কৃত এবং সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর হলে আদালত চত্বরে তার অনুসারী সন্ত্রাসীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে 'তার অনুসারীরা' চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে সড়কে পিটিয়ে ও কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ওই বছরের ২৯ নভেম্বর কোতয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫-১৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

পুলিশ মামলাটি তদন্ত শেষে ৩৯ জনকে আসামি করে চলতি বছরের ১ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতয়ালি অঞ্চল) মাহফুজুর রহমান চট্টগ্রাম আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় অভিযোগপত্র জমা দেন। গত ২৫ আগস্ট চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দীন আদালতে অভিযোগপত্রের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে অভিযোগপত্র গ্রহণের আদেশ দেন আদালত।

অভিযোগপত্রে থাকা আসামিরা হলেন, চিন্ময় দাস, চন্দন দাস মেথর, রিপন দাস, রাজীব ভট্টাচার্য্য, শুভ কান্তি দাস, আমান দাস, বুঞ্জা, রনব, বিধান, বিকাশ, রমিত প্রকাশ দাস, রুমিত দাস, নয়ন দাস, ওমকার দাস, বিশাল, লালা দাস, সামীর, সোহেল দাস, শিব কুমার, বিগলাল, পরাশ, গণেশ, ওম দাস, পপি, অজয়, দেবী চরণ, দেব, জয়, লালা মেথর, দুর্লভ দাস, সুমিত দাস, সনু দাস, সকু দাস, ভাজন, আশিক, শাহিত, শিবা দাস, সুকান্ত দত্ত ও দ্বীপ দাস।

আলিফ হত্যার আসামিদের মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তারা উল্লেখ করেন, আইনজীবী আলিফের ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে তারা ১৫ থেকে ২০ জন পিটিয়ে হত্যা করেন।

সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলার আইনজীবী চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বলেন, ‘আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত মোট আসামি ৩৯ জন। এরমধ্যে ২১ জন গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। এখনও ১৮ জন আসামি পলাতক।'

পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে রায়হানুল বলেন, ‘বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়ে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে দায়রা জজ আদালতে যাবে। সেখানে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার কাজ শুরু হবে।’

আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই। আমার ছেলেকে যারা নির্দয়ভাবে সাপ মারার মতো পিটিয়ে হত্যা করেছে, আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ছেলেকে হারিয়েছি এক বছর হয়েছে এখনও বিচার হয়নি। মামলার অনেক আসামি গ্রেফতার হয়নি। তাদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।’