Image description

নড়াইলের লোহাগড়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়ির গতিরোধ, চাঁদা দাবি এবং অশ্লীল কবিতা লিখে মানহানির অভিযোগে চাকরিচ্যুত এক প্রধান শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর ওই শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, তিনি চাকরিতে পুনর্বহালের জন্য দেওয়া ২ লাখ টাকা ফেরত চাওয়ায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

গ্রেপ্তার মো. আবদুর রহিম খান (৫৮) লোহাগড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) তাকে আটক করার পর বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

লোহাগড়ার বিদায়ী ইউএনও মো. আবু রিয়াদ বাদী হয়ে বুধবার রাতে লোহাগড়া থানায় আবদুর রহিমসহ অজ্ঞাত ৩-৪ জনকে আসামি করে চাঁদাবাজি, হুমকি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১ ডিসেম্বর অফিস শেষে ডাকবাংলোয় ফেরার পথে ইউএনওর গাড়ির গতিরোধ করে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন আবদুর রহিম ও তার সহযোগীরা। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা ইউএনওকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এছাড়া ইউএনওর ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে কুরুচিপূর্ণ বার্তা এবং ‘সাড়ে হারামজাদা’ শিরোনামে একটি অশ্লীল কবিতা বারবার পাঠান রহিম। একই কবিতা তিনি ফেসবুকে প্রচার করে ইউএনওর মানহানি করেন।

গ্রেপ্তারের পর আবদুর রহিম সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, রাজনৈতিক কারণে ২০২৪ সালের শুরুতে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এরপর চাকরিতে পুনর্বহালের আশ্বাস দিয়ে তৎকালীন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া ও শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন তার কাছ থেকে ইউএনওকে ‘ম্যানেজ’ করার কথা বলে ২ লাখ টাকা নেন।

রহিমের অভিযোগ, ‘দীর্ঘদিনেও চাকরি ফিরে না পাওয়ায় আমি টাকা ফেরত চাই। বিষয়টি জানাজানি হলে নবগঙ্গা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন মোল্লার মধ্যস্থতায় আমাকে ৮০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়। বাকি টাকা ফেরত চাওয়াতেই আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে।’

টাকা ফেরতের বিষয়ে জানতে চাইলে মধ্যস্থতাকারী অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন মোল্লা বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরে আমি আনোয়ার মাস্টারকে বলি। পরে তিনি ৮০ হাজার টাকা রহিমকে ফেরত দেন।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সবই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। রহিমের টাকার সঙ্গে আমার নেওয়া ব্যক্তিগত ধার-দেনার কোনো সম্পর্ক নেই।’

এ বিষয়ে সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ ভূঁইয়ার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

ইউএনও মো. আবু রিয়াদ বলেন, ‘কে কাকে টাকা দিয়েছে, সে বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে আমার সঙ্গে রাস্তায় অসদাচরণ, চাঁদা দাবি এবং কুরুচিপূর্ণ কবিতা লিখে সামাজিকভাবে হেয় করার কারণেই আমি আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছি।’

লোহাগড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অজিত কুমার রায় বলেন, ‘আবদুর রহিমকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন।’