Image description

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‘আঞ্চলিক জনসংখ্যা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট’ চার বছর ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। ২০২১ সালে নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি কোনো প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। অব্যবহৃত থাকায় নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান আসবাবপত্র ও সরকারি সম্পদ। এতে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে মাইজবাড়ি ইউনিয়নে তিন একরেরও বেশি জায়গাজুড়ে এই প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ইনস্টিটিউটের কাজ শেষ হয় ২০২১ সালে। লক্ষ্য ছিল প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষা, মিডওয়াইফারি, অফিস ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে বছরে অন্তত ১ হাজার ২৫০ জন কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া। কিন্তু চার বছর পেরিয়ে গেলেও সেই লক্ষ্য কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে।

প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অত্যাধুনিক চারটি ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। ৮০ আসনবিশিষ্ট চারতলা হোস্টেলটি একদিনের জন্যও ব্যবহৃত হয়নি। ডাইনিং রুমের চেয়ার-টেবিলের মোড়কও খোলা হয়নি। অধ্যক্ষের বাসভবন ও একাডেমিক ভবনও তালাবদ্ধ। অফিসার্স কোয়ার্টারের আটটি ইউনিটের মধ্যে মাত্র একটিতে অফিস সহকারী আতাহার আলী বসবাস করছেন। বাকিগুলো খালি পড়ে আছে। নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, দিনভর পাহারা দেওয়া ছাড়া তাদের কোনো কাজ নেই।

ইনস্টিটিউটের পানি ব্যবহার অযোগ্য বলে অভিযোগ রয়েছে। একমাত্র বাসিন্দা অফিস সহকারী আতাহার আলী বলেন, ‘টিউবওয়েলের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আয়রন। এই পানি খেয়ে আমার পরিবারের সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। চিকিৎসায় প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পানির সমস্যা সমাধান না হলে এখানে প্রশিক্ষণার্থীরা এসে টিকতে পারবে না।’

মাইজবাড়ি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘এত টাকা খরচ করে ভবন বানানোর কী লাভ হলো, যদি মানুষ সেবা না পায়? চার বছর ধরে ভবনগুলো অকেজো পড়ে আছে। এলাকাবাসী আশা করেছিল এখানে কর্মসংস্থান হবে, স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়বে। কিন্তু এখন মানুষ উল্টো সমালোচনা করছে।’

প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. মো. মোদ্দাবেরুল ইসলাম বলেন, ‘ইনস্টিটিউটটি চালুর জন্য ১৫টি পদের জনবল ও আর্থিক অনুমোদন পাওয়া গেছে। তবে পানিতে অতিরিক্ত আয়রনের বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের (২০২৬) শুরুর দিকেই কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।’

স্থানীয়রা দাবি জানিয়েছেন, সরকারি সম্পদের অপচয় রোধে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পানির সমস্যা সমাধান করে ইনস্টিটিউটটির কার্যক্রম শুরু করা হোক।