Image description

গাজীপুরের পূবাইলে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় উঠে এসেছে ১৯৭১ সালের রণাঙ্গনের স্মৃতি, আবেগ, বেদনা আর বিজয়ের উল্লাস। রোববার (৭ ডিসেম্বর) সকালে মানবকণ্ঠ প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা ফিরে যান সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোতে।

আলোচনায় উঠে আসে সম্মুখযুদ্ধ, সহযোদ্ধা হারানোর বেদনা আর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের চিত্র। তবে সব ছাপিয়ে ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এই বীর সেনানিরা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা হালিম ভূঁইয়া সেই দিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের খবর নিশ্চিত হওয়ার পর পুরো এলাকা যেন আনন্দে ফেটে পড়েছিল। কেউ আনন্দে কাঁদছিল, কেউ চিৎকার করে স্লোগান দিচ্ছিল। আকাশজুড়ে ভেসে আসছিল জয়ের ধ্বনি। সেই মুহূর্ত আজও চোখে ভাসে।’

আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা জানতাম, হয়তো আর ঘরে ফিরতে পারব না। কিন্তু তবুও জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি। কারণ আমরা স্বাধীনতা চাইতাম, চাইতাম নিজের পরিচয়ে বাঁচতে।’

বিজয়ের গল্পের পাশাপাশি কথোপকথনের একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কণ্ঠে বর্তমান সমাজব্যবস্থা নিয়ে হতাশা ঝরে পড়ে। তাঁরা আক্ষেপ করে বলেন, ‘আজকাল সমাজে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আগের সেই সম্মান ও যত্ন অনেক কমে গেছে। জাতীয় দিবসে কিছুটা গুরুত্ব দেওয়া হলেও বছরের বাকি সময় তাঁদের খোঁজখবর নেওয়ার মানসিকতা খুব একটা দেখা যায় না।’

তাঁরা আরও বলেন, ‘আজকের তরুণদের বড় একটা অংশ মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ঠিকভাবে জানে না। ইতিহাস জানা ছাড়া দেশপ্রেম জাগে না। জাতি হিসেবে এগোতে চাইলে নতুন প্রজন্মকে সত্যিকারের ইতিহাস জানানো জরুরি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের চর্চা যদি নিয়মিত না হয়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভুলে যাবে কারা তাঁদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে।’

মুক্তিযোদ্ধারা তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে বলেন, দেশপ্রেম শুধু দিবস পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; দৈনন্দিন জীবনে দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমেও তা প্রকাশ করতে হবে।

স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হালিম ভূঁইয়া, মো. নুরুজ্জামান, মো. মোজাম্মেল হক, মো. বশিরুল হক, শামসুল আলম, মো. নুরুল ইসলাম, জালাল উদ্দীন, মো. বিল্লাল হোসেন, আলী আকবর ভূঁইয়া, মো. হারুন আর রশিদ, মো. হাছেন আলী, মো. শাজাহান মিয়া, মনির হোসেন, আব্দুস ছালাম মিয়া, বাচ্চু মিয়া ও মো. আমির হোসেন প্রমুখ।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সাংবাদিক আশরাফুল আলম আইয়ুব, আল-আমিন সরকার, দৈনিক যুগান্তর স্বজন সমাবেশের পূবাইল শাখার সভাপতি শাহেদ সরকার রাকিব প্রমুখ।