ইতালির স্বপ্ন এখন ভূমধ্যসাগরে: লিবিয়া উপকূলে নিখোঁজ শিবচরের একদল তরুণ
ইতালিতে গিয়ে পরিবারের ভাগ্য বদলানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন তারা। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। লিবিয়া উপকূলে ভূমধ্যসাগরে ইতালিগামী ট্রলার ডুবির খবরে মাদারীপুরের শিবচরের কয়েকটি গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। নিখোঁজ সন্তানদের ফিরে পাওয়ার আশায় এবং অজানা শঙ্কায় ভেঙে পড়েছেন স্বজনরা।
নিখোঁজদের তালিকায় রয়েছেন উপজেলার বহেরাতলা দক্ষিণ ইউনিয়নের নিশাত মাতুব্বর, বাঁশকান্দির ফারহান খান রোমান, মুন্সীকান্দির মুন্না এবং শিবচর পৌরসভার আরও দুই যুবকসহ অন্তত ছয়জন। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় দালাল কুদ্দুসের প্রলোভনে পড়ে তারা এই ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেছে নিয়েছিলেন।
বহেরাতলা দক্ষিণ ইউনিয়নের নিশাত মাতুব্বরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় হৃদয়বিদারক দৃশ্য। ছয় মাসের শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে নির্বাক বসে আছেন স্ত্রী মেহেনাজ। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ নিশাতের মা।
বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ‘এক মাস ধরে কোনো খবর নাই। এখন হুনতাছি সমুদ্দুর ডুইবে গেছে। আমার একমাত্র পোলাডারে আমি ফেরত চাই।’
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২২ লাখ টাকার চুক্তিতে গত ৩ অক্টোবর ঘর ছাড়েন নিশাত। সৌদি আরব, কুয়েত ও মিসর হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছান তিনি। গত ১০ নভেম্বর লিবিয়া উপকূল থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে ‘গেম’-এ (নৌকা যাত্রা) নামার পর থেকেই তার ফোন বন্ধ।
নিশাতের শ্বশুর মিজান মোল্লা বলেন, ‘১০ নভেম্বর শেষ কথা হয়েছিল। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। দালাল কুদ্দুস এখন শুধু বলছে ট্রলার ডুবে গেছে, বেশিরভাগ যাত্রীর কোনো খোঁজ নেই।’
২৩ বছর বয়সী ফারহান খান রোমান ছিলেন সৌদি আরব প্রবাসী। কিন্তু দালাল কুদ্দুসের প্রলোভনে পড়ে তিনিও ইতালির পথ ধরেন। ১৮ লাখ টাকার চুক্তিতে গত ৫ সেপ্টেম্বর সৌদি আরব থেকে লিবিয়ার পথে যাত্রা করেন রোমান। তার পরিবারও লোকমুখে জানতে পেরেছে নৌকাডুবিতে রোমানসহ অনেকেই মারা গেছেন। কিন্তু কোনো মরদেহের সন্ধান না পাওয়ায় এখনো অপেক্ষায় আছেন তারা।
এ বিষয়ে শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘এর আগে লিবিয়ায় জিম্মি করে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং আসামি গ্রেপ্তারও হয়েছে। তবে সাগরে নিখোঁজের বিষয়ে এখনো কোনো পরিবার লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্থানীয়রা জানান, নিখোঁজ তরুণদের বেশিরভাগই একই দালাল চক্রের মাধ্যমে লিবিয়ায় পৌঁছেছিলেন। স্বপ্ন বুকে নিয়ে ঘর ছাড়া এসব তরুণের খোঁজ না পেয়ে অনিশ্চয়তার আগুনে দগ্ধ হচ্ছে পরিবারগুলো। লিবিয়ার সাগরে ট্রলার ডুবির এই ঘটনায় শিবচরের আকাশ-বাতাস এখন স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে।




Comments