Image description

ভুল ব্যবস্থাপনা, জনবল নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে চাহিদার ৮৬ শতাংশ কম জনবল দিয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলছে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থায়নে গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বিশেষায়িত এ হাসপাতাল। নিয়োগ জটিলতা না কাটলে পূর্ণাঙ্গ সেবা চালু সম্ভব নয়। চিকিৎসায় বিদেশমুখিতা কমানো ও দেশেই প্রযুক্তিনির্ভর অত্যাধুনিক সেবা নিশ্চিত করতে বিপুল অর্থ ব্যয় করে তৈরি করা হয়েছে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। তবে ১ বছর ৯ মাস পার হলেও হাসপাতালটিতে পূর্ণাঙ্গ সেবা চালু করা যায়নি।

জনবল সংকটে রোগ নির্ণয়ে কেনা ২৮৩ কোটি টাকায় আধুনিক চিকিৎসাযন্ত্র অলস পড়ে আছে। মৌলিক পরীক্ষায় হাতেগোনা কয়েকটি যন্ত্র কালেভদ্রে ব্যবহার হলেও আদতে স্বল্পমূল্যের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগী।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিএসএমএমইউ সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে, অবকাঠামো নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি কেনা বাবদ খরচ হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪০৩ রকমের ৬ হাজার ৬১২টি চিকিৎসাযন্ত্র কেনা হয় ৩৩ মিলিয়ন ডলারে। সেসময় ১ ডলারের মূল্য ছিল ৮৬ টাকা। সে হিসাবে এ যন্ত্র কিনতে টাকা লেগেছিল ২৮৩ কোটি। এসব যন্ত্রপাতি ২০২২ সালের আগস্ট ও ডিসেম্বরে দুই ধাপে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে সরবরাহ করে দক্ষিণ কোরিয়ান বেসরকারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান স্যামসাং।

যন্ত্রগুলো সেবার উপযোগী থাকলেও জনবল না থাকায় ৯০ শতাংশ যন্ত্রপাতি এক দিনও ব্যবহার হয়নি। এসব যন্ত্রের সর্বোচ্চ মেয়াদ রয়েছে তিন বছর। ফলে ব্যবহারের আগেই শেষ মেয়াদের প্রায় দুই বছর। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জনবল সংকটের সমাধান না হলে যন্ত্র রক্ষণাবেক্ষণে নতুন করে টাকা খরচ করতে হবে সরকারকে। আসলে স্বাস্থ্য খাত এমনিতেই কম বরাদ্দ পায়। তারপরেও এ বরাদ্দের যথাযথ ব্যবহার হয় না। বিশেষ করে ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে দুর্নীতির কারণে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের ২৮৩ কোটি টাকার যন্ত্রে মানুষের সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া বিচারহীনতার সংস্কৃতি লক্ষ্য করা গেছে।

১০০ শয্যার জরুরি ইউনিট, ছয়টি ভিভিআইপি, ২২টি ভিআইপি ও ২৫টি ডিলাক্স কেবিনের কোনোটিই ব্যবহার হচ্ছে না। উদ্বোধনের পর কিছুদিন বেশ কিছু অস্ত্রোপচার হলেও এখন তা-ও বন্ধ। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণু আছে কিনা, তা শনাক্তসহ ২৬টি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আরটিপিসিআর মেশিন কেনা হয়।

সম্প্রতি এ মেশিনে ব্যবহার করা হয় চায়না কিট। এর ফলে মেশিনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। যন্ত্রটি চালু করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়া সরকারকে চিঠি দেয়। দুই সপ্তাহ আগে কোরিয়ার সরকার যন্ত্রটি মেরামতে একটি প্রকৌশলী দল পাঠায়। প্রকৌশলী দলের এক সদস্য বলেন, এ মেশিন এক বছর পর পর সার্ভিসিং করতে হয়। তবে দুই বছরে একবারও সার্ভিসিং করা হয়নি। এ ছাড়া কোরিয়ার যন্ত্রে চায়না কিট ব্যবহার করা হয়েছে। এমন করলে যন্ত্রটি নষ্ট হয়ে যাবে। আরটিপিসিআর মেশিনটি সচল রাখতে পরীক্ষামূলকভাবে চায়না কিট ব্যবহার করা হয়। এ হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্র থাকার পরও কেন বাইরে থেকে পরীক্ষা করতে হবে? কেন দ্বিগুণ টাকা রোগীকে গুনতে হবে? সে উত্তর দিতে পারে না কেউ। বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব দুর্নীতির বাইরের লোক। তিনি এ যন্ত্র সচলে ব্যবস্থা নেবেন। তাতে উপকৃত হবে গরিব রোগীরা। যেটা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে জনগণের একান্ত প্রত্যাশা।

মানবকণ্ঠ/এআই