Image description

বাংলাদেশে গত দশ বছরে যে পরিমাণ বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক হয়েছে তা চিন্তার বাইরে। কিন্তু তারপরও মানুষ দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থাশীল না। এর কারণ হিসাবে দেখা গেছে ডাক্তাররা রোগীর কথা ভালো করে শোনে না, অজস্র টেস্ট এবং ওষুধ লেখেন। চিকিৎসাও ব্যয়বহুল। সবচেয়ে বড় কথা হলো রোগী ও চিকিৎসকের সম্পর্কের মিথস্ক্রিয়াটি ভালো না। বিধায় খুব সংকটে না পড়লে ডাক্তারদের কাছে সাধারণ মানুষ যেতে চায় না।

সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে মেডিকেল ভিসায় যত পর্যটক গত বছর ভারতে গেছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ বাংলাদেশের। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ভারতে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যাওয়া বিদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোক গেছে বাংলাদেশ থেকে। কম খরচে ভালো চিকিৎসার পাশাপাশি একই খাবার, ভাষার মিল এবং সাংস্কৃতিক স্বাচ্ছন্দ্য বাংলাদেশের জন্য ভারতের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির মূল কারণ। ভারতে প্রতিবছরই চিকিৎসার জন্য প্রচুরসংখ্যক বিদেশি রোগীর যাতায়াত রয়েছে। দেশটির বিভিন্ন রাজ্যের নামি-দামি হাসপাতালে এই রোগীদের আনাগোনা বেশি।

তবে দেশটির পর্যটন মন্ত্রণালয় বলছে, বিদেশি রোগীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশিদের সংখ্যা। গত বছর শুধু বাংলাদেশ থেকে ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৫৭০ জন মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছেন। যা আগের বছরের তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেশি। ভারতভিত্তিক একটি গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালে মোট ৩ লাখ ৪ হাজার ৬৭ জন বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। আর গত বছর (২০২৩ সালে) গিয়েছেন ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৫৭০ জন।

ভারতের একটি বেসরকারি হাসপাতাল চেইন ম্যাক্স হেলথকেয়ারের প্রধান বিক্রয় ও বিপণন কর্মকর্তা এবং জ্যেষ্ঠ পরিচালক আনাস আব্দুল ওয়াজিদ জানান, বাংলাদেশি রোগীরা সাধারণত প্রতিস্থাপন, কার্ডিগান বিজ্ঞান, নিউরো, অর্থো এবং অনকোলজি-সম্পর্কিত (ক্যান্সার) চিকিৎসার জন্য ভারতে আসেন। গত আর্থিক বছরে ভারতের বেসরকারি হাসপাতাল চেইন ম্যাক্স হেলথকেয়ারের একাই আগের বছরের তুলনায় আন্তর্জাতিক ব্যবসায় ২২ শতাংশ বৃদ্ধি রেকর্ড করেছে। ভারতীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরো জানিয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত সম্পর্কও রোগীদের আকৃষ্ট করতে সাহায্য করে।

ভারতের আরেকটি হাসপাতাল চেইন পারাস হেলথের গ্রুপ চিফ অপারেটিং অফিসার সান্তি সাজন বলেন, ভৌগোলিক নৈকট্য (কেউ বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় সড়কপথে যাতায়াত করতে পারে) এবং ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক সখ্যতা বাংলাদেশের চিকিৎসা পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এটি ছাড়াও প্রাইভেট মেডিকেল শুরু থেকেই সম্পূর্ণ প্যাকেজ আকারে বিভিন্ন পরিষেবা অফার করে যার মধ্যে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট এবং চিকিৎসা উপদেষ্টা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা প্রক্রিয়াটিকে আরো সহজলভ্য করে তোলে। চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারতে বাংলাদেশি পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ার কারণে দুই দেশের মধ্যকার বিমান চলাচল ব্যবস্থাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে চিকিৎসার মান খারাপ তা বলা যাবে না, ভালো ডাক্তারেরও অভাব নেই। কিন্তু আমাদের সরকারি হাসপাতালগুলোর অব্যবস্থাপনা বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ব্যবসাকে রমরমা করেছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ এই ব্যয়বহুল চিকিৎসার কাছে যেতে চায় না। এ কারণে মধ্যবিত্তরা ভারতমুখী হয়, বাকিরা সিঙ্গাপুর বা থাইল্যান্ড যায়। চিকিৎসাক্ষেত্রে আমাদের যে সংকট সেটা নিরসন করলে এত টাকা বিদেশে চলে যেত না। এ কারণে রোগীদের দেশের চিকিৎসা ও চিকিৎসকের প্রতি আস্থা ফেরানো দরকার।

মানবকণ্ঠ/এসআরএস