Image description

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকার দেশত্যাগ করার পর থেকে দেশে অনেক ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। মন্দির, উপাসনালয়, ঘরবাড়ি এবং ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে এক শ্রেণির দুর্বৃত্ত লুট ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে সরকারকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। আদালত, আইনশৃঙ্খলা, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, জনপ্রশাসন, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, সড়ক-ট্রাফিক সবখানেই বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। এসব খাতের অনেকগুলোতেই বিশৃঙ্খলা চরমে উঠেছিল বিগত সরকারের আমলে। জনগণের প্রত্যাশা ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে- কিন্তু  তা আসেনি, বরং কিছু খাতে বিশৃঙ্খলা আরও বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে। তবে আশার সংবাদ হচ্ছে- প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির বৈঠকে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় উভয় পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছেছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারা সরকারের কাছে দ্রুত সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছেন। গত ১৫ বছরে বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে যেসব মিথ্যা মামলা দায়ের হয়েছে তা প্রত্যাহারের দাবি করেছেন। সারা দেশে একের পর এক নৈরাজ্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। বিক্ষোভকারীদের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা সরকার অসহায় হয়ে পড়েছে। মনগড়া মামলায় মানুষকে হয়রানি করার প্রবণতা সর্বকালের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। পার্থক্য শুধু আগে গৎবাঁধা বুলিতে মামলা করা হতো আইনশৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে। আর এখন দায়ের করা হচ্ছে মতলববাজদের পক্ষ থেকে। এটা দেশ ও জাতির জন্য ভালো খবর নয়। দেশের মানুষের প্রত্যাশা ছিল জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর সব সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। ন্যায় ও নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হবে সবকিছু। আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দেয়ায় মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল, সুদিন ফিরবে শিগগিরই। কিন্তু মানুষের এই প্রত্যাশা ও বিশ্বাস ভাঙতে শুরু করেছে। বাস্তবে তারা দেখছেন, কোথাও শৃঙ্খলা নেই। সরকার এখন এই শৃঙ্খলা ফেরানোর কঠিন পরীক্ষায়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টেরও চেষ্টা চলছে অশুভ মহলের পক্ষ থেকে। ঠিক এমন এক পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে যে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয়া হয়েছে, তাতে সাড়া দিয়েছে বিএনপি। শুধু বিএনপি নয়, সকল দলকে দেশ বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এতো দেরিতে কেন এমন বোধদয় হলো? দেরি হলেও এখনো সময় আছে। তবে সকল দলকে জাতীয় ঐক্যে একমত হতে হবে।

আমরা মনে করি, জাতীয় ঐক্য এবং জনগণের সম্পৃক্তার মধ্য দিয়ে এই সংকটের সমাধান সম্ভব। মনে রাখতে হবে- অন্তর্বর্তী সরকারের শক্তির ভিত রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন। সেই সমর্থন নিশ্চিত করতে তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে। জনসম্পৃক্ততা পারে সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের রুখে দিতে।

মানবকণ্ঠ/এসআরএস