বাজারে অস্থিরতা কাটছে না- নিত্যপণ্যের বাড়তি টাকা গুনতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। এরই মধ্যে আবার সয়াবিন তেলের তেলেজমাতিকাণ্ড। সয়াবিন তেল এ দেশে সব শ্রেণির মানুষের রান্নার প্রায় অপরিহার্য একটি উপাদান। এ অপরিহার্য উপাদান হঠাৎ উধাও, বাজারে নেই সয়াবিন তেল- উৎপাদনে সংকট হলে বাজারে প্রভাব পড়তেই পারে, বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই নিতে পারি আমরা। কিন্তু দাম বাড়ানোর পরে তেল বাজারে হাজির হওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক। গত সোমবার দাম বাড়ানোর এক ঘোষণায় আচমকা বাজার থেকে হারিয়ে যাওয়া লুকানো তেলের বোতল ফিরেছে দোকানে দোকানে; সেজেছে থরে থরে। বাজারে এখন বোতলজাত সয়াবিনের অভাব নেই।
কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ‘সয়াবিন-কাণ্ড’ ঘটিয়ে নিজেরাই প্রমাণ করে দিলেন- এই কারসাজিতে তারাই ছিলেন। সংকট দেখিয়ে সরকারকে চাপে ফেলে একদিকে সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছেন, অন্যদিকে এই কদিন নানা অপকৌশলে ক্রেতাদের থেকে বেশি মূল্য নিয়েছেন। এটা স্রেফ দিন-দুপুরে ডাকাতি ছাড়া আর কিছু নয়। প্রকৃতপক্ষে তেলের কোনো সংকটই ছিল না।
ফন্দি এঁটে কয়েক দিন ক্রেতার নাভিশ্বাস তুলে সরকারকে জিম্মি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে। অতীতেও ঘটেছে এমন ঘটনা। দুঃখজনক হলেও আজ তেল, কাল চিনি, পরশু হয়তো অন্য কোনো পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সুবিধা নেবে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। তাতে একদিকে ভোক্তার খরচ বাড়বে, অন্যদিকে সরকারও পড়বে চাপে। স্পষ্টতই এখানে কোনো কারসাজি কাজ করছে। আমরা মনে করি- এদিকে অবিলম্বে সরকারের দৃষ্টি দেয়া উচিত।
বস্তুত সয়াবিন তেল বিক্রির ক্ষেত্রে নানা ধরনের কারসাজির মাধ্যমে এমনিতেই বাড়তি মুনাফা আদায় করা হয়। এ সংক্রান্ত এক তথ্য বলছে, দেশে সয়াবিনের তুলনায় পাম অয়েল আমদানি হয় বেশি। অথচ বাজারে পাম অয়েল তেমন পাওয়া যায় না, বেশির ভাগই সয়াবিন তেল। তুলনামূলক কম দামে আমদানিকৃত পাম অয়েলের অধিকাংশই নাকি বিক্রি হয় সয়াবিনের নামে।
একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সয়াবিনের সঙ্গে পাম অয়েল মিশিয়ে সয়াবিন তেল নামে বিক্রি করে। বাজারের এসব কারসাজি বন্ধ করা জরুরি। অন্যদিকে যেসব তেলের বোতল বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে, সেগুলো কখন আমদানি করা হয়েছে, আমদানি দর কত ছিল, কবে নাগাদ বাজারজাত করা হয়েছে- এসব তথ্য খতিয়ে দেখতে হবে। শুধু সয়াবিন তেল নয়, নিত্যপণ্যের বাজারে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। প্রায় দুই বছর ধরে ভোগ্যপণ্যের বাজারে বেসামাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, আমদানিনির্ভরতা, বাজারে সিন্ডিকেট, মজুতদারির কারণে বেড়েই চলছে নিত্যপণ্যের দাম। যার ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর। সর্বোপরি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনে বয়ে আনছে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। জনসাধারণের স্বস্তির জায়গা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ফলে দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির, বিশেষ করে স্থির আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এটি যদি সত্য হয় তাহলে ব্যর্থতা কাদের? উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বহুদিন ধরেই অস্বস্তিতে রয়েছে সাধারণ মানুষ। জনগণের প্রত্যাশাও ছিল- এতে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা কমবে। কিন্তু বাজার কেন নিয়ন্ত্রণে আসছে না- এমন প্রশ্ন আরও জোরালো হচ্ছে।
একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না- বাজার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে ছাত্র-জনতার অর্জন অনেকটা ম্লান হয়ে যাবে। সবকিছু বিবেচনা করে বাজার সিন্ডিকেট ভাঙাসহ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। দেশের প্রধান কয়েকটি সমস্যার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। দুর্বল অর্থনীতির দেশে এটা এক বড় সমস্যা। ভোক্তার স্বার্থ দেখার দায়িত্ব সরকারের। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে আইনের আওতায় এনে বাজারে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে আমরা মনে করি।
Comments