জমির খাজনা, অনলাইন খাজনা দীর্ঘ একমাস থেকে দিতে পারছে না ভুক্তভোগী জনগণ। ফলে সারাদেশে কোটি কোটি মানুষের ভোগান্তি। এই ভোগান্তির কেউ দায় নিতে রাজি নয়। শহর, গ্রামাঞ্চলের সব ভূমি অফিসের এই অবস্থা। সুরাহার কোনো কাজের কাজ আজ পর্যন্ত দেখছি না।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার পৌরসভার বাসিন্দা জহির দুই মাস পর্যন্ত একটি জমি বিক্রি করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ফাইল করার কাজ করছিল। তার পারিবারিক কাজে খুব বেশি টাকার প্রয়োজন ছিল। সে তার পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করবে। সেজন্য তার অনেক কাগজপত্র দরকার। সেখানে জমির আপডেট খাজনার রশিদ দরকার। এই খাজনা দিতে গিয়ে তিনি খাজনা দিতে পারছেন না। এরমধ্যে জমি বিক্রির জন্য ক্রয়কারী দেশের বাইরে চলে যাবেন। ক্রয়কারী বাইরে চলে গেলে তার জমি বিক্রি তার কাছে করা হবে না। এরমধ্যে বিক্রিকারীর টাকার প্রয়োজন খুব বেশি। এই প্রয়োজন মিটাতে অন্যতম মাধ্যম হলো ভূমি অফিস। কিন্তু অফিসের সার্ভার বন্ধ থাকায় কোনোভাবেই অনলাইন খাজনা দিতে পারছেন না। এর কোনো সমাধান ভূমি অফিসের কাছে নেই। এ ধরনের সমস্যা হাজার হাজার মানুষের। কেউ মেয়ে বিয়ে দিবে। সন্তানকে বিয়ে করাবে। আত্মীয়স্বজনকে বিদেশে পাঠাবে। ব্যবসা করবে। বাড়িঘর মেরামত করবে। সন্তান সন্তুতির প্রয়োজনীয় শিক্ষা খরচ মিটাবে। নানান কারণে মানুষের জমি ক্রয়-বিক্রয় করতে হয়। এই জায়গায় ভূমি অফিস এবং তাদের সেবার বিকল্প নেই। কিন্তু সম্পূর্ণভাবে জমি ক্রয়-বিক্রয়ে ভূমি সেবা ও সার্ভার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ। কবে নাগাদ এই সার্ভার সক্রিয় ও চালু হবে সেই তথ্য সংশ্লিষ্ট কেউই বলতে পারছে না। যেই ভূমি অফিসে জমি জমার কাজ-কর্মে জনগণের ব্যাপক আগমন থাকতো সেখানে এখন শুনশান নীরবতা। কারণ অফিসে জমি-জমার সেবা নেয়া যাচ্ছে না। কর্মকর্তারা কেউ উপস্থিত কেউবা অনুপস্থিত। ধারাবাহিক নিয়মিত কোনো কাজ করতে পারছে না তারা।
ভুক্তভোগী শুধু সেবা গ্রহিতারা তা নয়। সরকারের কোটি কোটি টাকার দৈনন্দিন আয় বন্ধ আছে। ফলে বিভিন্ন প্রকারের জমি সংক্রান্ত আয় থেকে ভূমি মন্ত্রণালয় বঞ্চিত হচ্ছে। প্রবাসী শত শত শ্রমিক বিভিন্ন পেশার মানুষ নগদ টাকার অভাবে বিদেশ যেতে পারছে না। ফলে বিদেশগামী থেকে শুরু করে সরকার পর্যন্ত মূল্যবান রেমিট্যান্স হারাচ্ছে। নামজারি আবেদন, জমির খাজনা সারাদেশে আবেদনের স্তূপ পড়ে আছে ভূমি অফিসসমূহে। অর্থনীতির চাকা ঘুরছে না জনগণ অর্থের লেনদেন জমির মাধ্যমে করতে পারছে না। এ ধরনের জমিসংক্রান্ত ভূমি অফিসের বিড়ম্বনা বিগত কয়েক দশকেও দেখা যায়নি। সার্ভারের সমস্যা সংস্কার শক্তিশালীকরণ। সবকিছু সরকারের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু কেন একটি সার্ভার সমস্যাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করে লাখ লাখ মানুষের এই দুর্ভোগ। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সার্ভার সচল অথবা বিকল্প পথে ভূমি অফিসের দৈনন্দিন সেবা অবশ্যই দিতে পারে বলে জনগণের বিশ্বাস। সরকারের বিভিন্ন বুদ্ধি সিদ্ধান্ত নিশ্চই আছে। বিকল্প পথে ভূমি সেবা পেতে এই মন্ত্রণালয়কে জনভোগান্তি লাঘবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ভুক্তভোগী জনগণকে নিস্তার দিতে হবে। সরকারের রাজস্ব আয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। অর্থনৈতিক লেনদেনের চাকা সচল রাখতে হবে। দেশ বিদেশে চাকরিপ্রত্যাশী প্রবাসীদের দেশি বিদেশি অর্থনৈতিক সমস্যা দূর করতে ভূমি অফিসের দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড ভোগান্তিহীন পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করতে হবে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের একটি মন্ত্রণালয় ভূমি মন্ত্রণালয়। বিগত সময়ে এই মন্ত্রণালয়কে নানাভাবে সাজানো হয়েছে। সার্ভারের মাধ্যমে ভূমির যাবতীয় হিসাব, রক্ষণাবেক্ষণ, অর্থ আদান প্রদান, জমির ম্যাপ সবকিছু তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতির মধ্যে নিয়ে আনা হয়েছে। একজনের জমি অন্যজনের নামে খতিয়ান তৈরি জাল দলিল শনাক্তকরণ দালালচক্রের দৌরাত্ম্যক অনেকটা বন্ধ হয়েছে। অনলাইন আবেদনের মাধ্যমে জমির নামজারি খতিয়ান পাওয়া যাচ্ছে। ঘরে বসে মোবাইলের মাধ্যমে অ্যাপসে গিয়ে খাজনা পরিষদ করা যাচ্ছে। এসব পদ্ধতি নিয়ম অবশ্যই ভূমি মন্ত্রণালয়কে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা প্রকাশ করার মতো। ভূমি অফিসে এখন দালালি চক্রের তৎপরতা নেই বলা যায়।
তথ্যপ্রযুক্তির সেবায় জনগণ আন্তরিকভাবে সেবা পাচ্ছে ভূমি অফিস থেকে। তবে বর্তমানে সার্ভার সংক্রান্ত সমস্যার কারণে জনগণের ভোগান্তির সীমা নেই। বর্তমান সরকারকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জরুরি এই সেবাটির গুরুত্ব অনুধাবন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সচল করা দরকার। দেশপ্রেমিক ভূমি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারী সংশ্লিষ্ট সকলের অব্যাহত আন্তরিকভাবে সেবা প্রদানের জন্য জনগণ সর্বদা তাদের পাশে আছে। সার্ভার সমস্যার সাময়িক এই দুর্ভোগ সেবাদাতা-গ্রহিতা সবার জন্য দুর্ভাগ্যের কারণ। অতি স্বল্প সময়ে এই সমস্যার সুরাহার চায় জনগণ।
লেখক: সংগঠক, গবেষক ও কলামিস্ট
মানবকণ্ঠ/আরএইচটি
Comments