নতুন বছর হলো সেই সময় বা দিন যখন থেকে একটি নতুন পঞ্জিকার বছর শুরু হয় এবং পঞ্জিকার বছরের গণনা এক এক করে বৃদ্ধি হয়। বর্ষপঞ্জির হিসাবে আমরা নতুন বছরে পা রাখছি। পৃথিবীতে নতুন বছর গণনা করতে আমরা ৩৬৫ দিনের হিসাবকে গুরুত্ব দিই। পৃথিবী তার নিজ কক্ষপথে সূর্যকে ৩৬৫ দিনে একবার প্রদক্ষিণ করছে, এই হিসাবেই নতুন বছর গণনা করছি আমরা। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের মতো আমরাও আমাদের অগণিত পাঠকদের জানাই ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’। পাওয়া, না পাওয়ার গল্প নিয়ে বিশাল পটপরিবর্তনের মাধ্যমে বিদায় নিল ২০২৪ সাল।
বিগত বছর রাজনৈতিক সহিংসতা, নানা দুর্যোগ-দুর্ঘটনা আর ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। এভাবেই দিন আসে দিন যায়, বছর আসে বছর যায়। নতুন করে স্বপ্ন দেখতে দেখতে ক্যালেন্ডারের পাতা বদলায়, আসে নতুন দিন-নতুন বছর। অন্য বছরগুলোর মতোই ২০২৪ ছিল নানা কারণে আলোচনায়। কিছু বিষয় মানুষের কাছে ছিল স্বপ্নের মতো। সরকার পতনের ঘটনা ছিল জনগণের সবচেয়ে বেশি আশার ও স্বস্তিদায়ক। আওয়ামী লীগ সরকার ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নির্বিচারে বলপ্রয়োগে রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড এবং প্রাণঘাতী গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে। বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত ৩২ শিশুসহ ৬৫০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে আছেন বিক্ষোভকারী, পথচারী, সাংবাদিক এবং নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্যও। গত বছরে নিত্যপণ্যের বাজার নাভিশ্বাস ধরিয়েছিল নিম্ন ও মধ্যবিত্তের মধ্যে। বছরজুড়েই পণ্যের দাম শুধু বেড়েছে, বেশি প্রভাব ফেলেছে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। যেটা বার বার উচ্চারিত হলেও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার।
এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল ভয়াবহ। যার কারণে রেকর্ড পরিমাণ মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ছিল উদাসীন। দেশবাসীর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় ডেঙ্গু। গত বছরে মুদ্রাস্ফীতি, ডলারের মূল্য বৃদ্ধিতে অর্থনীতিতে দেশ নাজুক অবস্থা তৈরি হয়েছিল যেটা কাটিয়ে উঠছে দেশ। সববিছু মিলিয়ে সরকারকে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট আর প্রশাসন ও সাংবিধানিক সমস্ত প্রতিষ্ঠানে সর্বাত্মক দলীয়করণের জেরে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসন করতেও বেগ পেতে হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারকে। রাষ্ট্র-সংস্কারের কাজে মনোযোগী হওয়ার আগেই আসে বড় ধরনের ধাক্কা। যার প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতিতেও। এছাড়াও পাহাড় ও গার্মেন্টস খাতে অস্থিরতাসহ নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে এ সরকারকে। বিগত সরকারের আমলে সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট আর প্রশাসন ও সাংবিধানিক সমস্ত প্রতিষ্ঠানে সর্বাত্মক দলীয়করণের জেরে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসন করতেও বেগ পেতে হচ্ছে সরকারকে।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন ‘ব্যাকফুটে’ থাকার পরে সরকার পতনের পরে বিএনপি চেষ্টা করছে জনগণের নিকটে যাওয়ার। বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে দলটি এগিয়ে যাচ্ছে, জনগনের বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা করছে। নতুন শিক্ষাক্রমে গণঅভ্যুত্থানকে জোর দেয়া হয়েছে। শিক্ষাক্রমে এমন বিশাল পরিবর্তনে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে গত বছরটিকে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ আর ঘুরে দাঁড়াবার বছর বললেই যথার্থ হয়। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে পাওয়া-না পাওয়ার হিসাব চুকিয়ে নতুন স্বপ্ন, নতুন প্রত্যাশা নিয়ে এসেছে ২০২৪। রাজনীতির সংস্কৃতি ফিরে আসবে দেশে, রাজনীতির নামে নাশকতা বন্ধ হবে, দূর হবে মানুষের শঙ্কিত পদযাত্রা। বাজারে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল তৎপর হবে। কৃষকের সংকট দূরীকরণে সরকার দৃষ্টি দেবে। তাহলে খাদ্য সংকটের বিষয় নিয়ে চিন্তিত হতে হবে না। দেশের চলমান উন্নয়নের গতিধারা থাকবে অক্ষুণ্ম। নতুন প্রেরণায় এগিয়ে যাবে দেশ। বিদায়ী বছরের সাফল্যকে সামনে রেখে যত ব্যর্থতা সব ঝেড়ে মুছে নতুন উদ্দীপনায় বরণ করতে হবে নতুন বছরকে। মঙ্গল হোক সবার।
স্বাগতম-২০২৫। আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে।/ তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।-কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের এ কথার মতোই দুঃখ, কষ্ট সবকিছু কাটিয়ে নতুন জীবনের দিকে যাত্রার প্রেরণা নেবে মানুষ। নতুন বছরটি যেন সমাজ জীবন থেকে, প্রতিটি মানুষের মন থেকে সকল গ্লানি, অনিশ্চয়তা, হিংসা, লোভ ও পাপ দূর করে। সকল সংকট দূরীভূত হোক, সকল সংকীর্ণতা পরাভূত হোক এবং সকলের জীবনে আসুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি এই প্রার্থনা করি।
Comments