বাংলাদেশ-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিহাস বায়ান্ন বছরের। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দুটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশ গঠিত হয়। সম্ভাব্য আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে, বাংলাদেশ-পাকিস্তান দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক, ওআইসি এবং কমনওয়েলথ অফ নেশনস এর সদস্য। উভয় দেশ উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। ইসলামাবাদে বাংলাদেশের একটি হাইকমিশন এবং পাকিস্তানের একটি হাইকমিশন ঢাকায় রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দুটি স্বাধীন সার্বভৌম মুসলিম রাষ্ট্র হিসাবে, বাংলাদেশ-পাকিস্তান ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং রাজনীতি প্রায় অভিন্ন।
গত ৫৩ বছরের বহু উত্থান-পতনের পর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বর্তমানে উন্নত হওয়ার পথে। যুগান্তকারী সফরে ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত বছরের আগস্টের শুরুতে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। নাটকীয় পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের পর পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটছে। “আমি মনে করি বাংলাদেশ সফরটা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ আমাদের হারানো ভাই”, সংবাদ সম্মেলনে বলেন ইশাক দার, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় বিজয়ের মাধ্যমে পাকিস্তানের ২৪ বছরের অসহনীয় অর্থনৈতিক নিপীড়ন ও অত্যাচার থেকে মুক্তি লাভ করে ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়। গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের অনন্য মাইলফলক স্পর্শ করেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সব শর্ত পূরণ করেছে। ২০২০ সালে, দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৬৮.৩১ মিলিয়নের বেশি এবং মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় ১৯৪০ মার্কিন ডলার। বিগত কয়েক দশক ধরে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উভয় ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ উন্নয়ন অর্জন করেছে।
ব্রিটিশ অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের সর্বশেষ প্রকাশিত, ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বের ৪১তম বৃহত্তম অর্থনীতি। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ধাপে ধাপে একটি বৃহৎ অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি। তবে আজ ৫৩ বছর পর, পাকিস্তান প্রায় সব আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে রয়েছে। এছাড়াও, সম্প্রতি বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ভূ-রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়িয়েছে। উল্লেখ্য, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধান স্থপতি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সুসম্পর্ক শুরু করেছিলেন।
তিনিই প্রথম ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ঢাকায় লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়ে বিভিন্ন সমালোচনার উপেক্ষা করে এবং রাষ্ট্রের কল্যাণে উদারতা প্রদর্শনের মাধ্যমে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন। তবে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের জটিলতা আজও বিদ্যমান। যদিও সেই সময়ে ভুট্টোর বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়েছিল, যখন ১৯৭৪ সালে সিমলা চুক্তি সফলভাবে সমাপ্ত হয়। বাংলাদেশ ও ভারত, পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দিদের ফেরত পাঠানো শুরু করে। ওআইসি সম্মেলনের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের সাথে উন্নত সম্পর্কের পথ সুগম করতে ভারত সরকারের আপত্তি সত্ত্বেও রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে যোগ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮০ সালে প্রথমবারের মতো নিজেদের মধ্যে সামরিক সরঞ্জাম বিনিময় শুরু হয়। পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছে এফ-৬ যুদ্ধবিমান এবং কিছু ট্যাংক বিক্রি করে। এভাবে সীমিত পরিসরে হলেও ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শাসনামল থেকে বহু বছর ধরে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন দ্বিতীয় ইসলামিক সম্মেলনে যোগদানের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লাহোর সফর করেন, তখন পাকিস্তানি স্বাগতিকদের দ্বারা উচ্ছ্বসিত অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন।
যা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সময় ভারতের সাথে দাসত্ব সম্পর্ক সৃষ্টির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। দুই দেশের সম্পর্ক ২০১৩ সালে শেখ হাসিনার সময় সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছিল, যখন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধের ৭১ জন যুদ্ধ অপরাধীর বিচার শুরু করে। পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তোলা হয়েছিল। বিশেষ করে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠলে দুই দেশের সম্পর্ক উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে পৌঁছে। এক দেশ অন্য দেশের কূটনীতিকদের বহিষ্কার ও পাল্টা বহিষ্কার শুরু করে, যা বহু দিন ধরে চলতে থাকে। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ভিসা বিনিময় অনানুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত করা হয়।
পরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সময় পাকিস্তানের প্রভাবশালী দৈনিক ডনের এক প্রতিবেদনে দেশটির রাষ্ট্রপতি মন্তব্য করেন যে, পাকিস্তান-বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী। তিনি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে সব ধরনের কর্মকাণ্ডেরও আহ্বান জানান। অন্যদিকে, বাংলাদেশের শেখ হাসিনার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবরের মতো বলেছে, “সত্যিকার অর্থে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চাই, তাহলে পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭০ সালের ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। একাত্তরের গণহত্যায় নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বাংলাদেশের তৎকালীন বকেয়া টাকা ফেরত দেয়া হবে।” সেসময় সম্পর্ক উন্নয়নের বড় উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাবেক পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ তারিখে, যখন ঢাকা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনের ফাঁকে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে রাজি হয়নি, তখন খান সাহেব সরাসরি ফোনে হাসিনা সরকারের শাসন ও ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। প্রায় ১০ বছরের মধ্যে এটি ছিল দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে প্রথম কথোপকথন। সেসময় কূটনৈতিক মহলে আলোচনা ছিল যে পাকিস্তানের সঙ্গে প্রায় বিচ্ছিন্ন সম্পর্ক আবার গতি পেয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল পাকিস্তানের পরম বন্ধু চীন। তবে কেউ কেউ মনে করেন, পশ্চিম এশিয়ার দেশ তুরস্ক দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল। পাকিস্তান-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে শুরু হয় ১৯৭৬ সাল থেকে। যখন দুই দেশ ভ্রমণ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে।
১৯৭৬ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ২০১৫ থেকে শেখ হাসিনার তৃতীয় শাসনামলে পরিস্থিতি খারাপ হয়। যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে জামায়াত-ই-ইসলামী নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়ার জন্য পাকিস্তানের নিন্দার ঢাকা কঠোরভাবে প্রতিবাদ করে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টি (বিএনপি) নেতা সালাহউদ্দিন চৌধুরী এবং আলী আহসান মুজাহিদের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুদণ্ড আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি। যা পাকিস্তান গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’’ পাকিস্তান-বাংলাদেশের সম্পর্কের উত্থান-পতন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সাথে জড়িত। বিশেষ করে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে তখন তারা ‘পাকিস্তান কার্ড’ ব্যবহার করে। তবে এই ‘পাকিস্তান কার্ড’ বিভ্রান্তি, অবিশ্বাস, ভুল ধারণা এবং শত্রুতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, রাষ্ট্রপতি হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ এবং প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শাসনামলে ছিল না। বর্তমান ড. ইউনূস সরকারের সময়ে পাকিস্তান কর্তৃক বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি প্রদানের পঞ্চাশ বছর পর, দুই দেশের জন্য অতীতের তিক্ততা কাটিয়ে উঠার, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করার এবং করাচি ও ঢাকার মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু করার পদক্ষেপ নেয়ার সময় এসেছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে সর্বশেষ সরকারি সফরটি ছিল জুলাই ২০০২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি পারভেজ মোশাররফের।
তবে পাকিস্তানের, বাংলাদেশের কাছ থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত অর্থনৈতিক সাফল্য, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, নারীর ক্ষমতায়ন এবং ধর্মীয় উগ্রবাদ দমনের বিষয়ে। ড. ইউনূস সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এসেছে, যখন পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ উভয়কেই তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পুনর্নির্ধারণ এবং পুনর্নির্ধারণের বিরল সুযোগ এনে দিয়েছে। আস্থা পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে উচ্চ-পর্যায়ের কূটনৈতিক পদক্ষেপ এবং আস্থা-নির্মাণের ব্যবস্থা করা অপরিহার্য। পাকিস্তানের উচিত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ করা, সমর্থন দেয়া, পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়ে একসাথে কাজ করা, মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়ানোর মতো উদ্যোগ এই উদীয়মান সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে পারে। আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া দরকার। উভয় দেশই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং সন্ত্রাসবাদের হুমকিসহ অভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
সার্ক-এর মতো আঞ্চলিক কাঠামোর মধ্যে একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ এই সমস্যাগুলো আরও কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে পারে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জনস্বাস্থ্য এবং বাণিজ্য সহজীকরণে যৌথ উদ্যোগ উভয় দেশের জন্য উল্লেখযোগ্য সুবিধা দিতে পারে। হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের সুযোগ এনে দিয়েছে। কট্টর ভারতপন্থি ফ্যাসিস্ট হাসিনা, বাংলাদেশ-পাকিস্তান দুটি মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করার সমস্ত প্রচেষ্টাকে অবরুদ্ধ করেছিল। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুটি স্বতন্ত্র ধারা রয়েছে। একটি আওয়ামী লীগের ভারতপন্থি নীতি, আর অন্যটি ভারতীয় আধিপত্যের তিক্ত বিরোধিতা নীতি। সাম্প্রতিক ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভেও ভারতবিরোধী মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে।
খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং ডানপন্থি জামায়াতে ইসলামীসহ বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদীরা, নয়াদিল্লির সাথে ঘনিষ্ঠতার জন্য হাসিনা সরকারের সমালোচনা করেছিল। বিএনপি, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতীয় হস্তক্ষেপের সমালোচনাই শুধু করেনি বরং ভারতীয় পণ্য বয়কটের আহ্বানও জানিয়েছে। হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর, স্থানীয় হিন্দুদের উপর আক্রমণ, তাদের ব্যবসা এবং উপাসনালয়গুলোতে আক্রমণ ভারতবিরোধী মনোভাবের প্রকাশ। কারণ ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশসহ সার্ক সদস্য দেশগুলোর উপর প্রভাব বিস্তার করে এই অঞ্চলে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করেছে। ভারত, বাংলাদেশে যে অন্যান্য প্রকল্পে কাজ করছে তাতেও প্রভাব পড়েছে। শেখ হাসিনা জুলাই মাসে ভারতের সাথে যে ১ বিলিয়ন ডলারের তিস্তা নদী পুনরুদ্ধার ও ব্যাপক ব্যবস্থাপনা প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন তা এখন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
মাত্র দুই দিন আগে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বাংলাদেশের বিক্ষোভকারীদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি ভেঙে ফেলার কথা উল্লেখ করে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা ছাড়া বাংলাদেশে কেউ এই বক্তব্যের নিন্দা করেনি। শাহবাজ শরিফ এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘আমি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেছি ৩০ আগস্ট সকালে। তাকে নতুন দায়িত্ব পাওয়ার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছি। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতির জন্য দুঃখ প্রকাশও করেছি।’ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার উপর জোর দিয়েছেন দুজনেই। পাশাপাশি শাহবাজ শরিফ পাকিস্তান ও বাংলাদেশÑ এই দুই দেশের মধ্যে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের কথা যেমন উল্লেখ করেছেন তেমনই বাণিজ্যিক সম্পর্ক, সাংস্কৃতিক বিনিময়ের বিষয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব বেশি এবং পাকিস্তানপন্থি মনোভাব ক্রমশ বাড়ছে। এটি ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করেছে। বিশেষ করে প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব, যা এখন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করেছে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক, কবি, গবেষক ও প্রাবন্ধিক
মানবকণ্ঠ/আরএইচটি
Comments