নতুন বছরে নতুন স্বপ্ন ও সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে এখন সবার দরজায়। কিন্তু বিপ্লবীদের স্বপ্নগুলো মেঘে ডাকা পড়ে যাচ্ছে হয়তো। ৫ আগস্টের পর কেমন আছে বাংলাদেশ! জুলাই বিপ্লবের পর নতুন বছর নতুনভাবে শুরু হচ্ছে সকল দুঃখ-কষ্ট ও পুরাতন গ্লানি ভুলে। কিন্তু সবকিছু কি আদৌ ভুলে যাওয়া সহজ, জীবন্ত বীরদের কতজনের খবর আমরা জানি বা জানার চেষ্টা করছি! যাদের সাহসী ও নানা ত্যাগের বিনিময়ে নতুন সূর্য দেখলো বাংলাদেশ, বিনিময়ে বাংলাদেশ তাদের কী দেখিয়েছে? যদিও তারা নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমিক, কিন্তু তাদের স্বপ্ন ও হাসি কি মুছে যাবে?
মীর মুগ্ধ, আবু সাঈদ, ফাইয়াজসহ অনেক ছাত্র, শিশু, সাধারণ মানুষ মারা গেছে জুলাই বিপ্লবে, ২০২৫ সালে কি তাদের ভুলে যাওয়া সম্ভব। ১৬ জুলাই ২০২৪ থেকে, ১৬ আগষ্ট ২০২৪ পর্যন্ত প্রায় ৬২৪ জন মারা গেছে। আমরা চাইলেও এদেরকে ভুলতে পারব না। যেখানে ২০২৫ সালে প্রতি ঘরে ঘরে আনন্দ উৎসব চলছে সেখানে ২৪-শে ছেলেহারা মা ঘরের এককোনায় বসে চোখের পানি ফেলছে। জুলাই বিপ্লবে আহত হয়েছে হাজারো মানুষ তাদের জীবন কেমন কাটছে তার খোঁজ কী আমরা রাখি? তাদের জীবনে তো নতুন বছরের আলো আসেনি। একজন ছেলেহারা মা জানে কেমন কাটে জীবন, কিসের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি তা উপলব্ধি করতে কিছুক্ষণ কোনো ছেলেহারা মায়ের সাথে কথা বলেন বুঝতে পারবেন, আমরা স্বাধীনতার সাধ গ্রহণ করছি ঠিকই কিন্তু যেসকল যোদ্ধার জীবনের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেলাম তাদের খোঁজ আমরা রাখি না।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালাল ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা, দেশ চালাচ্ছে বিপ্লবের পথ ধরে আসা সরকার। কিন্তু যাদের অবদানে নতুন এক ভোরের দেখা পেল বাংলাদেশ কেমন আছেন তারা? সাভারের প্রেসক্লাব পিয়নের কাজ করা মঞ্জয় মল্লিক ৫ আগস্ট পরিচয় দেয়ার পরেও পুলিশ সরাসরি তাকে গুলি করে। এতে একহাত হারান তিনি, পরিবারের হাল ধরার কথা ছিল তার। নতুন বছরে কেমন আছে মঞ্জয় ও তার পরিবার, ২০২৫ সাল কি তাদের জীবনে নতুন ভোরের আলো আনতে পেরেছে? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক লুৎফুল ইলাহী ১৫ জুলাই উপাচার্যের বাসভবনে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে এগিয়ে গেলে রক্ষা পাননি নিজে, পুরো শরীর ঝাঁঝরা হয় গুলিতে, এখনো শরীরে বহন করছেন প্রায় ৬৫টি স্প্রিন্টার, হারিয়েছেন একটি চোখ।
২০২৫ সালে কেমন আছেন স্যার লুৎফল ইলাহী, কেমন আছে তার পরিবার? বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দৃষ্টি হারিয়েছে ৫০০ জনের বেশি মানুষ যার মধ্যে ৯০%-ই ছাত্র। এ সময়ে দৃষ্টি হারানো পাঁচ শতাধিক মানুষ কি দেখতে পেরেছে ২০২৫ সালের নতুন ভোরের আলো, কেমন আছে তারা, কেমন আছেন সেসকল ছেলের মায়েরা, পারিবারিক সম্বল অসহায় হওয়ার পর কেমন কাটছে সেসব পরিবারের দিন। আন্দোলনে রক্তপাত, লাশের সারি ও বীভৎসতার কারণে ট্রমায় ভুগছে প্রায় ২১ হাজার মানুষ। এ সকল মানুষ এখনও জুলাই বিপ্লবের আন্দোলনের ট্রমা থেকে বের হতে পারেনি।
নতুন বছর সবার জন্য আনন্দের হয় না, জুলাই বিপ্লবের যোদ্ধারা নতুন বছরেও ভালো নেই, ভালো নেই তাদের পরিবার। সরকারের উচিত এসকল যোদ্ধাদের পাশে দাঁড়ানো, যোদ্ধাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া, যেসকল ফাউন্ডেশন এসব যোদ্ধাদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের উৎসাহ দেয়া, তাহলেই নতুন বছর হবে তাদের জন্য আনন্দের। সূর্যের আলোর মতো সকল আনন্দ সমানভাবে পৌঁছে যাক সবার দরজায়। সবার হাসিতে হাসবে দেশ যা হোক নতুন বছরের প্রত্যয়।
লেখক: শিক্ষার্থী
মানবকণ্ঠ/আরএইচটি
Comments