Image description

বাংলাদেশি সিনেমা গফতের বরপুত্র সালমান শাহ। মাত্র ৪ বছরে সালমান দর্শকদের উপহার দিয়েছেন ২৭টি সিনেমা। যার বেশিরভাগ ছবিতে নায়িকা হিসেবে ছিলেন শাবনূর। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’র মাধ্যমে মৌসুমীর সঙ্গে জুটি বাঁধলেও তার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে আলোচিত হয়েছিলেন শাবনূর। ফলে চলচ্চিত্র পাড়ায় সালমান শাহ ও শাবনূরের প্রেমের গুঞ্জন শোনা যেত সে সময়। 

সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী সবসময় বলে আসছেন তার ছেলে আত্মহত্যা করেনি। পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করা হয়েছে। অন্যদিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) জানান, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছিলেন, তাকে হত্যা করা হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে নীলা চৌধুরী প্রধান তীর ছোড়েন সামিরার দিকে। কিন্তু সামিরা এ বিষয়ে খোলাসা করে কখনও কিছু বলেননি। তবে তিনি মনে করছেন এখন তার কথা বলার সময় হয়েছে। তাইতো গত ১৯ সেপ্টেম্বর সালমানের জন্মদিন উপলক্ষে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে দেশের বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে তিনি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।

সাক্ষাৎকারে সামিরা জানান, ইমন (সালমান শাহর ডাকনাম) এবং মৌসুমী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অভিনয় না করার। এই ঘটনার শুরু একটা সিনেমার শুটিং সেট থেকে। শুটিং এর সময়ে ছোট একটা বিষয় নিয়ে মৌসুমীর মা এবং ইমনের মায়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরবর্তী সময়ে ইমন ও মৌসুমী সিদ্ধান্ত নেয় তারা একসঙ্গে সিনেমা করবে না। এরপর আমরা নায়িকার সংকটের মধ্যদিয়ে যাই। তখন শাবনাজ ও নাইম বিয়ে করেন। বিয়ের পর গুজব শুরু হয় শাবনাজ অভিনয় ছেড়ে দেবেন। তাই নতুন নায়িকা খুঁজতে হয়। পরে আমরা শাবনূরকে দেখার পর সিদ্ধান্ত নেই, ওর সঙ্গেই কাজ করা হবে।

সালমান শাহ ও শাবনূরের প্রেমের গুঞ্জন নিয়ে সামিরা বলেন, এই বিষয়টা এত সহজে বলা যায় না। এর পেছনে অনেক বড় গল্প আছে। সেই গল্পটা আমি শুরু করলে শেষ করতে অনেক সময় লেগে যাবে। তবে সহজ প্রশ্নে কেউ যদি জানতে চায় সালমান শাহ ও শাবনূরের মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিল কিনা তাহলে আমি এক বাক্যে বলব যে, হ্যাঁ তাদের সম্পর্ক ছিল।

তিনি আরও বলেন, এই বিষয়টা জানার পর আমাদের মধ্যে সমস্যা তৈরি হয়। আমি রাগ করে আমার বাবার বাসাতেও চলে গিয়েছিলাম। ইমন আমাকে অনেক বুঝিয়েছে, মাফও চেয়েছিল। পরে আমাকে মানিয়ে নিয়ে আসে। আমি দুইমাস পর ঢাকায় আমাদের বাসায় ফিরে আসি। ইমন আমাকে বলেছিল, সে শাবনূরের সঙ্গে যে সিনেমাগুলোর চুক্তি আছে সেগুলো শেষ হলেই তার সঙ্গে আর কোনো সিনেমায় কাজ করবে না এবং আমরা নতুন নায়িকা খুঁজব। 

সালমান শাহর আত্মহত্যার কারন জানতে চাইলে সামিরা বলেন, ইমন (সালমান শাহর ডাকনাম) মেন্টালি সুইসাইডাল বাই নেচার। এর আগে তিনবার সুইসাইডের চেষ্টা করেছে। মেট্রোপলিটন হাসপাতালের রেকর্ড চেক করলে জানা যাবে। ওখানে দুবারের রেকর্ড আছে। আরেক হাসপাতালে একবার আছে। তিনটাই আমার বিয়ের আগে। তিনটা ঘটনাই আমি জানি। একবার মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে করেছিল। আরেকবার আমাকে বিয়েতে রাজি করানোর জন্য। তৃতীয়বার ওর কিছু একটা হয়েছিল, সেটার জন্য এমনটা করেছিল। 

তিনি আরও বলেন, আত্মহত্যা করার মতো তেমন কিছুই হয়নি। সেদিন ওর সঙ্গে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল। একটা পর্যায়ে অভিমান করে ও রুমে চলে যায় আর দরজা বন্ধ করে দেয়। আমি তখন অন্য রুমে ছিলাম। এর মধ্যেই সব কিছু ঘটে যায়। আমার চিৎকার শুনে ফ্লাটের লোকজন ছুটে আসে। খবর পেয়ে ইমনের মা-ও ছুটে আসে। এরপর রুম থেকে বেরিয়ে আসে ওর ঝুলন্ত দেহ।

তিনি আরও বলেন, এমন কথা কাটাকাটি ওর সঙ্গে আগেও হয়েছে। আমার ওপর অনেক অভিমানও করেছিল ও। আরেকটা বিষয় ইমন কিন্তু এর আগেও তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু চতুর্থবার ওকে আর ফেরানো যায়নি। আপনার যদি খোঁজ নেন, তাহলে সেটি জানতে পারবেন। 

প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় সালমান শাহের। স্মার্টনেস ও ব্যক্তিত্ববোধের কারণে রাতারাতি তরুণ প্রজন্মের আইকনে পরিণত হন তিনি। চার বছরের ক্যারিয়ারে ২৭টি ছবিতে অভিনয় করেন এই নায়ক। যার অধিকাংশই সুপারহিট। ১৯৯৬ সালে ৬ সেপ্টেম্বর সবাইকে ছেড়ে চলে যান তিনি।


মানবকণ্ঠ/এফআই