সকালের আলো যেমন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে, তেমনি ধীরে ধীরে নিজের আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছেন সুনেরাহ। মডেলিং দিয়ে শুরু, তারপর সিনেমা, নাটক, ওয়েব-সবখানেই তাঁর পদচারণা। কিন্তু তাড়াহুড়ো নয়, তিনি চলেছেন ধীর ছন্দে, মেপে মেপে। যেন প্রতিটি চরিত্রের ভেতর দিয়ে নিজেকে নতুন করে চিনে নিচ্ছেন, আর পরিণত। তাই এখন যে সুনেরাহকে দেখা যায় সে পরিপক্ব এক অভিনেত্রী আর দায়িত্বশীল মানুষ।
অভিনেত্রীর ভাষায়, ‘আমি প্রতিনিয়ত কাজ করছি, কাজের মধ্যে থাকছি, সেটা সব মাধ্যমেই। ফলে অভিনয়ের স্কুলিংটা আমার নিয়মিতই হয়েছে, হচ্ছে। অভিনয় তো একটা সাগর, সেখানে কতটা পরিপক্ব হয়েছি বলতে পারছি না। আমি কেবল চালিয়ে যাচ্ছি। আমি এখন কাজ পাগল মানুষ। কাজ ছাড়া থাকতে হতাশ লাগে। কাজের মাঝেই এখন আনন্দ পাই।’
‘ন ডরাই’-এর কথা নিশ্চয়ই মনে আছে! ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমা এটি। চলচ্চিত্রে আয়েশা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সুনেরাহ। সার্ফবোর্ডে দাঁড়িয়ে, ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে, নিজের স্বপ্নের ভাষা শেখা মেয়েটির মতোই সুনেরাহ তখন নিজের অভিনয়জীবনের ঢেউ সামলাচ্ছিলেন। সিনেমাটি তাঁকে এনে দেয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার– সেরা অভিনেত্রীর স্বীকৃতি। সেই মুহূর্ত থেকেই তিনি প্রমাণ করেন, অভিনয় তাঁর কাছে কেবল পেশা নয়, নিজের আত্মার প্রশান্তি। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মশারি’-তেও অভিনয় করেছেন। বাহবাহ পেয়েছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।
বরাবরই চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে নজর কেড়েছেন সুনেরাহ। যার চূড়ান্ত রূপ দেখা যায় চলতি বছরের রোজার ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘দাগি’তে। তিনি লিখন নামে এক বাকপ্রতিবন্ধী মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কথা বলতে না পারলেও লিখনের চোখে ছিল অজস্র ভাষা। সে ভাষা পুঙ্খানুপুঙ্খ বুঝতে পেরেছেন দর্শক।
কয়েক বছর আগেও সুনেরাহকে সবাই চঞ্চল মেয়ে হিসেবেই চিনতেন। কাজের বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আর ঘোরাফেরা করেই সময় কাটত। সেই সুনেরাহর এখন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা তো দূরের কথা, বন্ধুরা এখন তাঁকে খুঁজেই পান না। কারণ কী? সুনেরাহ বললেন, সত্যি এখন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া হয় না। দেখা সাক্ষাৎকারও কম হয়। কারণ এখন দায়িত্ব বেড়েছে। চার-পাঁচ বছর আগে তো এমন ছিলাম না।
এখন পরিবারের পুরো দায়িত্ব আমার ওপর। সবাইকে ভালো রাখার কাজটি আমারই করতে হয়। বাসা, বাবা-মা আর ছোট ভাই আছে। সবাইকে নিয়েই আমার হ্যাপি ফ্যামিলি। তাই এখন কাজের বাইরে তেমন সময় কাটানো হয় না। আমাকে দেখে সবাই বলে আমি এখন অনেক শান্ত হয়ে গেছি। আসলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ তো বদলায়। নানা কারণে বদলায়।




Comments