Image description

এই ঝরঝর মৌসুমে কি বৃষ্টি ও বাদলের বিয়ে হয়! বৃষ্টি-বাদলের বিয়ের কারণেই কি চারদিকে এমন হইহুল্লোড় পড়ে যাচ্ছে আজকাল। বর্ষাকালের অনিবার্য অনুষঙ্গ—রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি! যেন রাস্তা না খুঁড়লে বর্ষার আমেজ পাওয়া যাবে না! বিশেষ করে নগরবাসীর জন্য এটা বর্ষার অনন্য উপহার। এবার সেই উপহার কেউ মন থেকে গ্রহণ করুক বা না করুক! বর্ষার স্বরূপ দেখে নিই একবার!

বর্ষায় খোঁড়াখুঁড়ির কারণ—

* বর্ষাকালে নাকি আকাশ ফুটো হয়ে যায়, আর সেই ফুটো দিয়ে ঝরঝর করে পানি ঝরে! আকাশ যদি ফুটো হয় মাটিও কম যাবে কেন? সেও জায়গায় জায়গা ফুটো তথা খানাখন্দ তৈরি করতে শুরু করে। ব্যস, কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান!

* বাংলাদেশের কর্তাব্যক্তিরা সারা বছর নাকে তেল দিয়ে ঘুমান। কিন্তু বর্ষার মেঘ গুড়গুড় শব্দে তাদের ঘুম ভেঙে যায়! তখন স্থির থাকতে পারে না, ‘দেশের’ জন্য কিছু একটা করার প্রয়োজন অনুভব করেন। তারপরই শুরু হয় খোঁচাখুঁচি!

* রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক আগেই বলে গেছেন ‘...এসো করি স্নান নবধারাজলে’! কিন্তু নগরজীবনের ব্যস্ত মানুষের বৃষ্টিভেজার সময় কোথায়? তাই বুদ্ধি করে জরুরি কাজগুলো বর্ষাকালের জন্যই তুলে রাখে। তারপর তো কাজও হলো, বৃষ্টিবিলাসও!

* বাংলাদেশের বড় একটা অংশ দরিদ্র। অনেক মানুষেরই ভালো ঘর নেই। একটুখানি বৃষ্টি হলেই ঘরদোর ভেসে যায়। সমস্যাপীড়িত এই নাগরিকদের সমস্যার প্রকৃত স্বরূপ বুঝতে ও বোঝাতেই বর্ষাকালের এমন কর্মকাণ্ড...!

বৃষ্টি থেকে বাঁচার উপায়

কোনো মানুষের পক্ষেই ২৪ ঘণ্টা রোমান্টিক থাকা সম্ভব না! একটা সময় সে বৃষ্টি পছন্দ করলেও সর্বক্ষণের জন্য মোটেই পছন্দ করা সম্ভব হয় না। প্রিয় বৃষ্টিই কখনো কখনো অসহ্য হয়ে ওঠে! এই বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার কিছু পদ্ধতি অবশ্যই রয়েছে—

* বৃষ্টি নামের কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে সেই সম্পর্ক আবার ছিন্ন করে ফেললে খুব সহজেই বলা যাবে, বৃষ্টির কবল থেকে মুক্ত হয়েছি!

* পুরো বর্ষাকাল কোনো উন্নত রাষ্ট্রে কাটিয়ে আসা যায়! মানে যাদের ট্যাঁকের জোর আছে! দেশে ফিরে আবিষ্কার করবে মাথার ওপর গনগনে সূর্য, চারদিকে গায়ে ফোস্কা পড়ার মতো রোদ! তখন অবশ্য বৃষ্টি-কাতরতা পেয়ে বসতে পারে! (এটা দোষের কিছু নয়)!

* রবীন্দ্রসংগীত একটু উল্টেপাল্টে দিয়ে গান গাওয়া যেতে পারে—বৃষ্টি আমার বৃষ্টি ওগো বৃষ্টি ভুবনভরা...! বৃষ্টি যখন নিজের অস্তিত্বকেও গ্রাস করে নেবে তখন আর বৃষ্টিকে বিরক্তিকর মনে হবে না!

* হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রীর মতো একজন মন্ত্রী খুঁজে বের করতে হবে, যে ধুলার আদলে বৃষ্টিকেও হঠিয়ে দেবে!

বৃষ্টির উপকারিতা

* বৃষ্টি মানেই কি অনাসৃষ্টি? মোটেও নয়! বরং বৃষ্টিই অনেক বেশি সৃষ্টির উজ্জীবক! কবিকুল নিজেদের ভেতরের আকুলিবিকুলি বৃষ্টিধারার মতো খাতায় প্রবাহিত করেন এই বৃষ্টিবেলাতেই!

* বৃষ্টির কান্না দেখে গায়কের প্রিয়জনকে মনে পড়ে—তার মানে বৃষ্টি স্মৃতিজাগানিয়া! (বাংলা সিনেমার পরিচালকরা ইচ্ছা করলে স্মৃতিশক্তি পুনরুদ্ধারে মাইর থেরাপির আশ্রয় না নিয়ে বৃষ্টি থেরাপির আশ্রয় নিতে পারেন)!

* ছোট ছেলে-মেয়েরা মনের আনন্দে নৌকা বানায় তারপর বৃষ্টিজলে ছেড়ে দেয়। এটা তাদের আনন্দদায়ক খেলা। তার মানে কি এরা আওয়ামী লীগের সাপোর্টার? আলবত না! বড় হয়ে কেউ কেউ ঐদিকে ঝুঁকতেও পারে!

* বাংলা সিনেমায় নায়ক-নায়িকারা শাওয়ারে ভিজতে ভিজতে ত্যক্তবিরক্ত হয়ে যায়। পরিচালকরাও প্রাকৃতিক বৃষ্টিকে ধারণ করতে আউটডোরে আসার মওকা পায়!

বর্ষার অনিবার্য অনুষঙ্গ

* সংবাদপত্রে শিরোনাম হবে ‘রাস্তাঘাট প্লাবিত: জনজীবনে দুর্ভোগ’! সংবাদের সাথে থাকবে জল থই থই করা ছবি; ছবিতে দেখা যাবে মানুষ নিম্নাংশের কাপড় উঁচিয়ে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করছে!

* গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাটের পাশের সাইনবোর্ড স্থান পাবে—জরুরি মেরামতের কাজ চলিতেছে! এই জরুরি নির্মাণের ভিড়ে জনসাধারণ খুব সহজেই গৌণ হয়ে যায়!

* ত্যাঁদড় ছাত্র ও ফাঁকিবাজ অফিসকর্মী সহজেই উছিলা দিতে পারবে—স্যার, বৃষ্টি ছিলো বলে গতকাল আসতে পারিনি!

* আষাঢ়-শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল—ছেলেবেলায় বইয়ের এ বাক্য মুখস্থ করলেও বাস্তবে এর মিল খুব একটা নেই— আগ-পিছ হয়ে যায়; পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় এ সময়ে!

কী হতো বর্ষা না থাকলে—

পৃথিবীর অনেককিছুই না থাকলেও হয়তো বিশাল কোনো ক্ষতি হতো না! আর থাকলেও যে কতটুকু লাভবান হচ্ছে মানবকুল তাও ভালোভাবে বোঝা সম্ভব না। দেখা যাক, বাংলাদেশে যদি বর্ষা না থাকতো তাহলে সম্ভাব্য পরিণতি কেমন হতো—

* আষাঢ়ে গল্প নামে একটা (গাল)গল্প প্রচলিত আছে। বর্ষা না থাকলে হয়তো এটার অস্তিত্বও থাকতো না!

* স্কুলপাঠ্য ব্যাকরণ বইয়ে নদী রচনা, বর্ষা রচনা, একটি বৃষ্টির দিনসহ নানারকম রচনা আয়ত্ত করতে হয়। বর্ষা না থাকলে অন্তত এ রচনার জায়গায় অন্য কোনো রচনা জায়গা করে নিত!

* অনেক বাবা-মাই সন্তান বর্ষাকালে জন্মালে তাদের নাম বর্ষা, বাদল, শ্রাবণ, শ্রাবণী, মেঘ, মেঘা ইত্যাদি রাখেন। বর্ষাকালটা না থাকলে তাদের মনে এমন কাব্যিক ভাবের উদয় হতো কিনা সন্দেহ!

* বাংলাদেশ সরকার ও সরকারের কর্তাব্যক্তিদের একাংশ বিপত্তিতে পড়ত! এখন যেমন যত্রতত্র ‘উন্নয়ন’ ঘটানোর চেষ্টা করে বর্ষা না থাকলে এ উন্নয়ন তো মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে! দেশের কিংবা নিজেদের!

* দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকী বর্ষাবন্দনা/ বর্ষার পদাবলি নামক বিশেষ আয়োজন করে। চিত্পটাং-এর মতো রম্য সাময়িকী প্রকাশ করে আষাঢ়ে সংখ্যা। বর্ষা না থাকলে এ শূন্যস্থানটা কী দিয়ে পূরণ হবে!


মানবকণ্ঠ/এফআই