স্কুল ছাত্রের পরিবেশবান্ধব কলম তৈরি, ব্যবহার শেষে মাটিতে ফেললেই জন্মাবে গাছ
প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে পরিবেশবান্ধব কাগজের কলম তৈরি করে এলাকায় সুনাম কুড়িয়েছেন এক তরুণ। এই কলমের বিশেষত্ব হলো, ব্যবহার শেষে মাটিতে ফেললেই জন্ম নেবে ফলদ গাছের চারা। পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি এই অভিনব উদ্যোগের মাধ্যমে আয়েরও সুযোগ রয়েছে।
বরগুনার আমতলী এমইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী মো. আমিরুল ইসলাম এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের উদ্যোক্তা। তার তৈরি করা পরিবেশবান্ধব কলম এখন এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
আমিরুল জানান, প্লাস্টিক কলমের ব্যবহার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তাই তিনি এমন একটি কলম তৈরির কথা ভাবেন যা পরিবেশের জন্য উপকারী হবে। এই চিন্তা থেকেই তিনি কাগজের তৈরি কলম তৈরি করেন।
আমিরুল ইসলাম উপজেলার সেকান্দারখালী গ্রামের মো. মনিরুল ইসলামের ছেলে।
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে আমিরুল পরিবেশ-বান্ধব কলম তৈরির উদ্যোগ নেন। দুই মাসের নিরলস প্রচেষ্টার পর নভেম্বর মাসে তিনি সফলতা লাভ করেন। কলম তৈরির প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ। প্রথমে বিভিন্ন রঙের কাগজের মধ্যে কালির শীষ পেঁচিয়ে আঠা দিয়ে ভালোভাবে মুড়ে দেওয়া হয়। এরপর কাগজের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির ফল গাছের চারা ভরে দেওয়া হয়। সবশেষে, কলমটিকে রোদে শুকিয়ে শক্ত করা হয়। এভাবেই তৈরি হয় পরিবেশ-বান্ধব, ফল গাছ সমৃদ্ধ কাগজের কলম।
এই কলমের বিশেষত্ব হলো, এটি ব্যবহার শেষে মাটিতে ফেলে দিলেই ফল গাছের চারা জন্ম নেয়। অন্যদিকে, বাজারে প্রচলিত প্লাস্টিকের কলম পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যেখানে প্লাস্টিকের কলম ব্যবহারের পর ফেলে দিলে পরিবেশ দূষণ হয়, সেখানে এই কলম ব্যবহারের পর মাটিতে ফেললে চারা জন্মায়। তার তৈরি করা কলম স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
উদ্যোক্তা মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, দুই মাস চেষ্টার পরে প্লাস্টিক ব্যবহার কমাতে কাগজের তৈরি পরিবেশ বান্ধব কলম তৈরি করেছি। এতে একদিকে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমবে অন্য দিকে কলমটি ব্যবহার শেষে মাটিতে ফেলে রাখলেই ফলদ গাছের চারা জন্মাবে। প্লাস্টিকের তৈরি কলম শিক্ষার্থী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট করছে। এ কলম ব্যবহার করলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট হবে না। উল্টো পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষার পথ সুগম হবে।
তিনি আরো বলেন, আমার লক্ষ্য হলো পাঁচ টাকা ব্যয়ে হাজার টাকার আয়ের পথ সৃষ্টি করা। মানুষ গাছ রোপনে আগ্রহী না। আমার এ উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে অনায়াসেই গাছ মাটিতে জন্ম হবে। কারণ যেখানে এ কলম ফেলা হবে সেখানেই ফলদ গাছের চারা জন্ম হবে। সরকারি আর্থিক সহায়তা পেলে পরিবেশ বান্ধব এ কলম দেশের সর্বত্র বাজারজাত করা যাবে বলেও জানান তিনি।
আমিরুল ইসলামের বাবা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, আমিরুল লেখাপড়ার পাশাপাশি ছোট বেলা থেকেই পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছে। তারই সফলতা পরিবেশ বান্ধব কাগজের কলম তৈরি।
আমতলী এমইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমএ হান্নান বলেন, আমিরুল ইসলাম প্লাস্টিক ব্যবহার কমাতে পরিবেশ বান্ধব কলম তৈরি করেছেন। এতে এক দিকে পরিবেশ সুরক্ষিত হবে অন্যদিকে আর্থিক সাশ্রয় হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, আমিরুলের এমন উদ্যোগকে প্রসারিত করতে সকল ধরনের সহায়তা করা হবে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ।
মানবকণ্ঠ/এসআর
Comments