Image description

চারিদিকে লিচু গাছের সারি, আর তাতে শোভা পাচ্ছে সোনালী মুকুল। চারদিকে ছড়াচ্ছে মিষ্টি সুবাস। এই মনোরম দৃশ্য নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার লিচু বাগানগুলোর। ধানের পরেই লিচু চাষের জন্য বিখ্যাত এই অঞ্চল। লিচুর বাম্পার ফলনের আশায় কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর এই কাজে তাদের সাহায্য করছে এক ঝাঁক মৌমাছি।

লিচুর উৎপাদন বাড়াতে কৃষকরা তাদের বাগানে বসিয়েছেন মৌমাছির বাক্স। মৌমাছিরা দল বেঁধে লিচুর মুকুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে, পরাগায়ন ঘটিয়ে ফলন নিশ্চিত করছে। এতে একদিকে যেমন লিচুর ফলন বাড়ছে, অন্যদিকে মৌচাষিরাও মধু সংগ্রহ করে লাভবান হচ্ছেন।

উপজেলার নাজিরপুর, বিয়াঘাট, চাপিলা, ধারাবারিষা ইউনিয়নসহ পুরো উপজেলা জুড়ে মোজাফ্ফর, বেদেনা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-থ্রি জাতের লিচুর চাষ হয়। প্রায় ৪১০ হেক্টর জমিতে ৩০০টি বাগান রয়েছে, যেখানে ১০০ জন খামারি সাত হাজার মৌ বাক্স স্থাপন করেছেন।

গত শনিবার নাজিরপুর ও বিয়াঘাট ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, লিচু গাছে মুকুলের সমারোহ। প্রতিটি গাছের নিচে ৭০ থেকে ৮০টি মৌ বাক্স বসানো হয়েছে। মৌমাছিরা অবিরাম ফুলে ফুলে ঘুরে মধু সংগ্রহ করছে।

মৌ খামারি শাহিন আলম, সোহেল সরকার, আমিনুল হক ও আবদুল আলিম জানান, তারা প্রত্যেকেই বাগানে শতাধিক ছোট-বড় কাঠের বাক্স স্থাপন করেছেন। প্রতিটি বাক্সে রয়েছে একটি রানি মৌমাছি, একটি পুরুষ মৌমাছি এবং অসংখ্য কর্মী মৌমাছি। কর্মী মৌমাছিরা ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে যায় লিচুর মুকুলে, সংগ্রহ করে মধু এবং তা জমা করে মৌচাকে।

খামারিদের মতে, সরিষার মধুর চাহিদা ও দাম বেশি থাকলেও, লিচুর মধু তাদের জন্য বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় চাষিদের পাশাপাশি সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মৌচাষিরা এখানে মধু সংগ্রহ করতে আসেন। তারা বিভিন্ন আকারের মৌমাছির বাক্স ব্যবহার করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মধু সংগ্রহ করেন।

নাজিরপুর ইউনিয়নের পুরস্কারপ্রাপ্ত লিচুচাষি মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, ২০০৮ সাল থেকে এই ইউনিয়নে সীমিত পরিসরে লিচুর চাষ শুরু হলেও, বর্তমানে তা বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে চাষিরা লিচু চাষে সফলতা পাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, কীটনাশকের পরিবর্তে মৌমাছির পরাগায়ন লিচুর উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুনর রশিদ জানান, লিচুর মুকুলে মৌমাছি বসলে পরাগায়ন ভালো হয়, যার ফলে লিচুর ফলন বৃদ্ধি পায়। মৌমাছি চাষের মাধ্যমে একদিকে যেমন মধু উৎপাদন হচ্ছে, অন্যদিকে লিচুর ফলন বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।