Image description

প্রকৃতির অপার বিস্ময়, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত যেন ঈদ আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার এই নয়নাভিরাম স্পটে ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে। সবুজ পাহাড় আর পাথরের বুক চিরে তীব্র বেগে ঝাঁপিয়ে পড়া জলধারা – এ দৃশ্য যেন প্রকৃতি কন্যা মাধবকুণ্ডকে আরও মোহনীয় করে তুলেছে। ঈদের আনন্দ আর প্রকৃতির এই মনোমুগ্ধকর রূপ একসঙ্গে উপভোগ করতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন অগুনতি মানুষ।

কাঁঠালতলি বাজার থেকে মাধবকুণ্ডের পথে সরু রাস্তাটিও যেন আজ উৎসবের রঙে সেজেছে। বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, আরোহীতে পূর্ণ সিএনজি – সব পথ এসে মিশেছে মাধবকুণ্ডের প্রবেশদ্বারে। টিকিট কাউন্টারের দীর্ঘ লাইন যেন বাঁধভাঙা মানুষের স্রোতেরই প্রতিচ্ছবি। নানা রঙের পোশাকে আবৃত মানুষজনের কলকাকলিতে মুখরিত চারপাশ।

জলপ্রপাতের দিকে পা বাড়াতেই চোখে পড়ে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। পাথরের খাঁজে দাঁড়িয়ে জলপ্রপাতের শীতল জলে গা ভেজাচ্ছে অনেকে, কেউবা ব্যস্ত প্রিয়জনের সাথে ফ্রেমবন্দী হতে। সেলফির উন্মাদনাও কম নয়, জলপ্রপাতের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে স্মৃতিগুলো ধরে রাখছেন সবাই। স্থানীয় আলোকচিত্রীদের ক্যামেরার ফ্ল্যাশে ঝলমল করছে চারপাশ – যেন ঈদের আনন্দকে ধরে রাখার এক প্রাণান্তকর চেষ্টা।

ঢাকা থেকে আসা জাহিদ হাসান তার মুগ্ধতা প্রকাশ করে বললেন, "এই প্রথম মাধবকুণ্ডে এলাম। এখানকার পরিবেশ অসাধারণ! সিলেট আর মৌলভীবাজারে এত সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে, যা দেখে মন ভরে যায়। প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের অবশ্যই এসব স্পট ঘুরে দেখা উচিত।" একইসাথে তিনি পর্যটন স্পটগুলোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার উপর জোর দিলেন, যাতে এই খাত থেকে দীর্ঘমেয়াদী রাজস্ব আয় করা সম্ভব হয়।

শুধু ঢাকা নয়, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলা থেকেও পর্যটকদের আগমন ঘটেছে। তবে মানসম্মত হোটেলের অভাব কিছুটা হলেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আগতদের।

মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের প্রধান ফটকের ম্যানেজার সাজু আহমদ জানালেন, সকাল থেকেই পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে এবং বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভিড় আরও বাড়ছে। প্রতিদিন প্রায় দুই হাজারের বেশি পর্যটক এখানে আসছেন এবং ছুটির দিনগুলোতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি। পর্যটকদের এই ঢলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মুখেও হাসি ফুটেছে।

পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তৎপর রয়েছে পর্যটন পুলিশ। ইন্সপেক্টর আব্দুল কুদ্দুস জানান, ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের নির্বিঘ্নে সৌন্দর্য উপভোগের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাদের সার্বক্ষণিক নজরদারির ফলে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই পর্যটকরা আনন্দ উপভোগ করে বাড়ি ফিরছেন।

বন বিভাগের সহযোগী রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিন্দ্র কুমার সিংহ জানালেন, পর্যটকদের আনন্দ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বন বিভাগ এবং ইজারাদার পক্ষ সবসময় কাজ করে যাচ্ছে।