Image description

উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর বাউফলে শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে সঙ্গে খেজুর রসের সেই চিরায়ত ঐতিহ্য এখন সংকটের মুখে। দক্ষ গাছি ও খেজুরগাছ উভয়ের সংকটে গ্রামীণ জনপদ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে সুস্বাদু রস ও গুড়। 

স্থানীয়দের মতে, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নতুন গাছ রোপণে অনীহা এবং গাছিদের পেশা পরিবর্তনের ফলে এই ঐতিহ্য এখন হুমকির মুখে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় বর্তমানে খেজুরগাছ রয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৫টি। গত মৌসুমে গুড় উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৪.১ মেট্রিক টন। আহরিত রসের বড় অংশ সরাসরি পানীয় হিসেবে বিক্রি হয়ে যাওয়ায় গুড় উৎপাদন আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে।

বাউফল উপজেলার চাষি আবদুল করিম বলেন, ‘আগে আমার ৩০-৩৫টি গাছ থেকে প্রতিদিন ১৫-২০ লিটার রস পেতাম। এখন ১৬টি গাছ কেটেও ৪-৬ লিটারের বেশি রস মেলে না। বাজারে লিটারপ্রতি ১০০-১২০ টাকা দরে বিক্রি হলেও উৎপাদন কম হওয়ায় শ্রমের মূল্য উঠছে না।’

গাছ থাকলেও তা কাটার মতো লোক পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানালেন ৮৮ নম্বর দাসপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রাবেয়া খাতুন কচি। তিনি বলেন, ‘মূল সমস্যা হলো গাছি সংকট। গাছ প্রস্তুত করার মানুষ নেই, তাই ঐতিহ্য হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে।’

বাউফল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান বাচ্চু মনে করেন, রস ও গুড় উৎপাদন কমে যাওয়ায় স্থানীয় অর্থনীতি ও কুটিরশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারি সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই ঐতিহ্য রক্ষা করা কঠিন।

সংকটের কারণ হিসেবে বাউফল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মিলন বলেন, ‘লবণাক্ততার প্রভাব ও অযত্নে অনেক গাছ মরে যাচ্ছে। পাশাপাশি দক্ষ গাছির অভাব তো রয়েছেই। তবে আধুনিক ‘নলী প্রযুক্তি’ ব্যবহার করলে রস আহরণ ২০-৩০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব। আমরা নতুন গাছ রোপণে উৎসাহ দিচ্ছি এবং আগামী মৌসুমে গাছিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম জানান, ‘খেজুরগাছ টিকিয়ে রাখতে প্রশাসন কৃষি দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে সহায়তা ও প্রণোদনা দিচ্ছে।’

জেলা কৃষি উপপরিচালক ড. মো. আমানুল ইসলাম বলেন, ‘জ্বালানি খরচ বৃদ্ধি এবং কাঁচা রস বিক্রির প্রবণতা বাড়ায় গুড় উৎপাদন কমছে। এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে হলে নতুন করে খেজুরগাছ রোপণ করা অত্যন্ত জরুরি।’