পুঠিয়ায় চিনিমেশানো ভেজাল গুড়ের দাপট, বিপাকে গাছিরা
উত্তরাঞ্চলে শীতের আমেজ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। রাজশাহী অঞ্চলের পুঠিয়া, চারঘাট ও দুর্গাপুর এলাকার গ্রামগুলোতে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ। তবে এই ব্যস্ততার মাঝেই স্থানীয় গাছি ও চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী চিনি ও রাসায়নিক মিশিয়ে ভেজাল গুড় তৈরি করে বাজার সয়লাব করে দেওয়ায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত চাষিরা।
স্থানীয় গাছিরা জানান, আসল খাঁটি পাটালি বা খুরি গুড় তৈরি করতে যে শ্রমিকদের দাম, সময় ও জ্বালানি খরচ লাগে তাতে স্বাভাবিকভাবেই দাম একটু বেশি পড়ে। কিন্তু অনেক অসাধু ব্যবসায়ী চিনি ও রাসায়নিক মিশিয়ে কম খরচে গুড় তৈরি করছে। এসব গুড় দেখতে আকর্ষণীয় হলেও স্বাদ ও গুণগত মানে খাঁটি গুড়ের ধারেকাছেও নয়।
পক্ষান্তরে বাজারে চিনির দাম কম হওয়ায় অনেক অসাধু চাষিরা গুড়ে চিনি মিশিয়ে গুঁড় তৈরি করাতে তাদের তুলনামূলক খরচ কম হওয়ায় এসব গুড় ক্রেতারা সস্তায় কিনতে ঝুঁকে পড়ছে। যেখানে অরিজিনাল খাঁটি গুঁড় উৎপাদন খরচ পড়ে একশত ত্রিশ থেকে একশত চল্লিশ টাকা সেখানে চিনি মিশ্রিত গুঁড় বর্তমানে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ফলে প্রকৃত চাষীরা তাদের খাঁটি গুড় ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারছেন না। দু-তিন দিন ধরে বাজারদর উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় তারা গভীর হতাশায় ভুগছেন।
চাষী জুয়েল ইসলাম জানান, ‘এক মণ খাঁটি গুড় বানাতে প্রায় পাঁচ হাজার দুইশত টাকা খরচ হয়। কিন্তু ভেজাল গুড় অর্ধেক দামে বিক্রি হওয়ায় আমাদের গুড়ের দাম আর ওঠে না। এতে করে আমরা এ বছর লোকসানের মুখে পড়তে যাচ্ছি।’
ভোক্তাদের অনেকেই জানেন না কোনটা খাঁটি আর কোনটা ভেজাল গুঁড়। ফলে দামের প্রতিযোগিতায় চিনি মিশ্রিত গুড় সহজেই বাজার দখল করছে। রাজু নামে এক ব্যবসায়ী বলেন মামা বাজারের ১০০% গুড়ে চিনি মিশানো এবং চিনি না মিশালে গুড়ের কালার ভালো হয় না।
পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. সুচনা জানান চিনি মিশ্রিত গুড় খেলে দাঁতে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে, ক্যাভিটি সৃষ্টি করতে পারে।
হজম সমস্যা এবং রক্তে চিনি দ্রুত বৃদ্ধি হয়ে (ডায়াবেটিসের ঝুঁকি)চিনি মিশ্রিত গুড় অতিরিক্ত ক্যালরি দেয়, ওজন দ্রুত বাড়ায়। লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে
স্থানীয় ভোক্তাদের দাবি, প্রশাসনের নিয়মিত নজরদারি ও ভেজাল গুড়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতি দ্রুত উন্নতি হতে পারে।
চাষী ও গাছিদের আশা—শীতের মৌসুম যত এগোবে, ক্রেতারা খাঁটি গুড়ের গুরুত্ব বুঝে ন্যায্য দামে পণ্য কিনবেন।




Comments