Image description

শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস সংগ্রহের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। উপজেলার প্রতিটি গ্রামে এখন খেজুর গাছ প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। অযত্নে পড়ে থাকা গাছগুলোর ডালপালা ও শুকনা পাতা পরিষ্কার করে নলি ও ভাড় (মাটির পাত্র) বসানোর উপযোগী করে তোলা হচ্ছে।

একসময় এ উপজেলার মাঠ-ঘাট ও রাস্তার ধারে সারি সারি খেজুর গাছ দেখা যেত। কালের বিবর্তনে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গাছের সংখ্যা অনেকটা কমে গেছে। তবুও ঐতিহ্য ধরে রাখতে অবশিষ্ট গাছগুলো থেকেই চলছে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি। শীতের পিঠা, পুলি ও পায়েস উৎসবের জন্য খেজুরের রস ও গুড়ের জুড়ি নেই। তাই শীত মৌসুমে অবহেলিত এই গাছগুলোর কদর বেড়ে যায় বহুগুণ।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পাইকগাছার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার রস আহরণযোগ্য খেজুর গাছ রয়েছে। গদাইপুর, গোপালপুর, মঠবাটী, পুরাইকাটী, মালথ, সিলেমানপুর, রারুলী ও চাঁদখালীসহ বিভিন্ন এলাকার গাছিরা জানান, বছরের অন্য সময় কৃষিকাজ করলেও শীতকালে তারা রস সংগ্রহেই মূল সময় ব্যয় করেন।

মঠবাটীর গাছি মোক্তার হোসেন বলেন, ‘গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বর্তমানে রস, গুড় ও পাটালির দাম কিছুটা বেড়েছে। নিজের গাছ না থাকলেও অনেকে চুক্তিভিত্তিতে অন্যের গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। বর্তমানে এক ভাড় কাঁচা রস ১২০ থেকে ১৫০ টাকা এবং প্রতি কেজি পাটালি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে গাছিরা আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হচ্ছেন।’

তবে গাছ ও গাছির সংকটের কথাও জানালেন স্থানীয়রা। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও নতুন চারা রোপণের অভাবে এই ঐতিহ্যবাহী গাছটি বিলুপ্তির পথে। এছাড়া দক্ষ গাছির অভাবে অনেক গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না।

এ বিষয়ে পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘উপজেলায় প্রায় ১২ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় আমরা কৃষকদের খেজুর গাছ রোপণে উদ্বুদ্ধ করছি। এখান থেকে সংগৃহীত রস ও গুড় বিক্রি করে কৃষকরা শীত মৌসুমে বাড়তি আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন।’