অভাব আর দুর্ভাগ্যের কালো মেঘ ছোটবেলা থেকেই পিছু নিয়েছিল রিমার। কিন্তু থেমে যাননি তিনি। জীবনের কঠিন বাস্তবতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গাঁদা ফুল চাষকেই নিজের স্বাবলম্বী হওয়ার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছেন রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার আসামবস্তির বরাদাম এলাকার রিমা চাকমা। হলুদ গাঁদার সৌরভে এখন তার ভাঙা ঘরেও স্বচ্ছলতার হাসি। যেন ‘গাঁদা ফুলের রঙে রাঙানো রিমার সংসার’।
রিমা চাকমার দুই ছেলে। বড় ছেলের বয়স ১০ বছর এবং ছোট ছেলের বয়স ৬ বছর। দুইজনই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। আর স্বামী পাহাড় থেকে লাকড়ি কুড়িয়ে বিক্রি করে। এতে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে রিমা চাকমা।
তাই স্থানীয় এক কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে বাড়ির পাশে পাহাড়ের কোলে এক পতিত জমিতে শুরু করেন গাঁদা ফুলের চাষ। শুরুতে পুঁজির অভাব ছিল প্রকট, কিন্তু হার মানেননি।
রিমা চাকমা জানান,‘মানুষ অনেক কথা বলত। মেয়ে মানুষ হয়ে ফুলের চাষ, লাভ হবে কিনা এসব নিয়ে হাসিঠাট্টা করত। কিন্তু আমার বিশ্বাস ছিল। এখন এই ফুলই আমার দুই সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে, তাদের পড়ার খরচ জোগাচ্ছে।’
দুই শতক জায়গায় গাঁদা ফুলের চাষ করেন রিমা চাকমা। শীতের মৌসুমে ও বিভিন্ন পূজার সময় গাঁদা ফুলের চাহিদা তুঙ্গে থাকে। প্রতিদিনই আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কে বিলাইছড়ি পাড়া বাজারে গাঁদা ফুল বিক্রি করেন। এই ফুল স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে এখন রাঙ্গামাটি শহরের পাইকারি বাজারেও লিমার ফুল যাচ্ছে। তার মাসিক আয় এখন গড়ে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
রিমার এই অদম্য সংগ্রাম শুধু তাকেই নয়, এলাকার অনেক নারীকেও অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি এখন স্বপ্ন দেখেন, নিজের ব্যবসার পরিধি আরও বাড়িয়ে একদিন বড় ফুল ব্যবসায়ী হবেন।
‘সরকারের পক্ষ থেকে যদি একটু সহযোগিতা পাই, তাহলে আরও বড় করে চাষ করতে পারি। আমার মতো আরও অনেক অসহায় দিদিদের কাজের সুযোগ করে দিতে পারব’ আশার আলো চোখে নিয়ে বলেন রিমা চাকমা।
রিমার এই ফুল চাষের গল্প প্রমাণ করে, ইচ্ছা আর পরিশ্রম থাকলে যেকোনো পরিস্থিতিতেই ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। তার গাঁদা ফুলের বাগান যেন জীবনের নতুন রঙ ও স্বচ্ছলতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।




Comments