Image description

পবিত্র কাবাঘরের প্রধান চাবি রক্ষক ও তত্ত্বাবধায়ক ড. শেখ সালেহ আল শাইবির মৃত্যু হয়েছে। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। দীর্ঘ অসুস্থতার পর শনিবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে গাল্ফ নিউজ। 

শেখ সালেহ আল শাইবিকে বায়তুল্লায় জানাজার পর মক্কার আল মুআল্লা কবরস্থানে দাফন করা হবে।

মহানবী মোহাম্মদের (সা.) মক্কা বিজয়ের পর কাবাঘরের চাবি রক্ষকের দায়িত্ব পান সাহাবি উসমান বিন তালহা (রা.)। তাঁর ১০৯তম বংশধর শেখ সালেহ আল শাইবি। ঐতিহ্যগতভাবে সাহাবি উসমান বিন তালহার বংশধরেরা কাবাঘরের চাবি রক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছে।  ২০১৩ সাল থেকে কাবাঘরের তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকা পালন করে আসা আল শাইবি তাঁর পরিবারের ৭৭তম সদস্য।

এই বংশের দায়িত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে কাবার বিভিন্ন কাজ পরিচালনা করা। যেমন; কাবাঘর পরিষ্কার করা, ধোয়া, গিলাফ ইস্ত্রি করা ও এর কিসওয়া বা কভারের প্রয়োজনীয় মেরামত ও বিশিষ্ট অতিথিদের কাবার দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করানো।

ইসলাম ধর্মের পণ্ডিত আল শাইবি ইসলামিক স্টাডিজে ডক্টরেট করেছেন। তিনি ধর্ম ও ইতিহাসের উপর বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন।

সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ ও ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান আল শাইবির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।

কীভাবে এ দায়িত্ব পেলেন?
মক্কা বিজয়ের দিন। মক্কার সবকিছুই সেদিন হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অধীন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসমানের কাছে কাবার চাবি চাইলেন। বরকতময় সে চাবি সঙ্গে সঙ্গে নবীর (সা.) হাতে তুলে দিলেন উসমান। চাবি নিয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে বায়তুল্লাহর দরজা খুললেন। ভেতরে প্রবেশ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন।

বাইরে তখন অপেক্ষমান জনতা। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হওয়ার পর সবাই সীমাহীন কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। কাকে দেওয়া হবে কাবার চাবি, কে পাবে এই মোবারক দায়িত্ব?

হজরত আব্বাস (রা.) এবং হজরত আলী (রা.) উপস্থিত ছিলেন সেখানে। দু’জনই চাবি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করছিলেন। এমনকি তারা এ ব্যাপারে আবেদনও করেছিলেন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে।

কিন্তু না, সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নবী করিম (সা.) দরাজ গলায় ডাকলেন উসমান ইবনে তালহাকে। তার হাতেই দিলেন কাবার চাবি। বললেন, ‘এখন থেকে এ চাবি তোমার বংশধরের হাতেই থাকবে, একেবারে কেয়ামত পর্যন্ত। তোমাদের হাত থেকে এ চাবি কেউ নিতে চাইলে সে হবে জালিম।’

উসমানের মনে পড়ে গেলো হিজরতের আগের ঘটনা। হিজরতের আগে প্রত্যেক সোম ও বৃহস্পতিবার কাবার দরজা খোলা হতো। এ দু’দিন লোকেরা আল্লাহর ঘরে প্রবেশের সৌভাগ্য লাভ করতো। একদিন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজন সাহাবাকে নিয়ে বায়তুল্লায় প্রবেশ করতে চাইলেন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ালেন উসমান ইবনে তালহা, তিনি তখনও মুসলমান হননি।

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধৈর্যের সঙ্গে উসমানের বাধা মেনে নিলেন। সেই সঙ্গে বললেন, ‘উসমান! একদিন তুমি এই চাবি আমার হাতে দেখতে পাবে। আমি তখন যাকে ইচ্ছে চাবিটা দেব।’

এর পর উসমান ইবনে তালহা ইসলাম কবুল করেন। ৪২ হিজরিতে তার মৃত্যু হয়। ইসলাম পূর্ব জাহিলী যুগ ও ইসলাম পরবর্তী যুগে কাবার চাবির রক্ষক বংশধররা। সেই ধারা এখনও চলমান। তাদের কাছ থেকে চাবি নিয়েই বিভিন্ন সময় সৌদি আরবের বাদশাহ এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ পবিত্র কাবা ঘরে প্রবেশ করে থাকেন। তারাই কাবার দরজা খুলে দেন।

সাহাবি উসমান ইবনে তালহার ‘বনি শাইবা’ গোত্রের কাছে কাবার চাবি থাকা নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো বিতর্ক হয়নি। ইনশাআল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত এই গোত্রের বংশধরদের কাছেই কাবার চাবি রক্ষিত থাকবে।

মানবকণ্ঠ/এআই