ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানালেন আজারবাইজানি বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা
আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের বিধ্বস্ত বিমানটির বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা জানিয়েছেন তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় গ্রোজনি শহরের দিকে যাওয়ার সময় কমপক্ষে একটি বিকট শব্দ শুনেছেন বলে দাবি করেছেন দুই যাত্রী এবং একজন ক্রু সদস্য। বুধবার কাজাখস্তানের আকতাউ শহরের কাছে বিধ্বস্ত হয় ফ্লাইট জে২-৮২৪৩ বিমানটি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
বিমানটি দক্ষিণ রাশিয়ার এমন একটি এলাকা থেকে দূরে সরে গিয়েছিল, যেখানে মস্কো বারবার ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলা প্রতিরোধে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করেছে। দুর্ঘটনায় অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছে। ২৯ জন বেঁচে গেছেন।
আহত এক যাত্রী সুবহনকুল রাহিমভ রয়টার্সকে হাসপাতাল থেকে বলেন,‘বিস্ফোরণের পর... আমি ভেবেছিলাম বিমানটি ভেঙে পড়বে।’ তিনি জানান, বিস্ফোরণের শব্দ শোনার পর তিনি প্রার্থনা শুরু করেন এবং মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন।
বিমানের আরেক যাত্রী ভাফা শাবানোভা রয়টার্সকে জানান, তিনিও একটি বিকট শব্দ শুনেছেন। তিনি আরও জানান যে তিনি দ্বিতীয় আরেকটি বিস্ফোরণের শব্দও শুনেছেন। এরপর তাকে একজন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট বিমানের পেছনের দিকে যেতে বলেন।
উভয় যাত্রীই বলেন, বিস্ফোরণের পর কেবিনে অক্সিজেনের স্তরে সমস্যা দেখা দেয়।
ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট জুলফুগার আসাদভ বলেন, কুয়াশার কারণে গ্রোজনিতে অবতরণ অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তাই পাইলট ঘুরতে থাকেন এবং তখন বিমানটির বাইরে থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
তিনি বলেন, পাইলট যখন বিমানটি উপরে তুললেন তখন আমি বাম ডানা থেকে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনলাম। মোট তিনটি বিস্ফোরণ হয়েছিল। কিছু একটা তার বাম হাতে আঘাত করে বলেও জানান তিনি।
দুর্ঘটনার পর আজারবাইজান এয়ারলাইন্স শুক্রবার বেশ কিছু রাশিয়ান শহরে ফ্লাইট স্থগিত করে। তারা মনে করে এই দুর্ঘটনা ভৌত এবং কারিগরি বাহ্যিক হস্তক্ষেপের কারণে ঘটেছে। তবে এই হস্তক্ষেপ কী তা বিস্তারিত জানানো হয়নি।
আজারবাইজানের তদন্তের প্রাথমিক ফলাফলের সঙ্গে পরিচিত চারটি সূত্র রয়টার্সকে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ভুলবশত এটি ভূপাতিত করেছে।
রাশিয়া বলেছে, ঘটনাটি বোঝার জন্য সরকারি তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।
এম্ব্রায়ার যাত্রীবাহী জেটটি আজারবাইজানের রাজধানী বাকু থেকে রাশিয়ার দক্ষিণ চেচনিয়া অঞ্চলের গ্রোজনি শহরে উড়েছিল। তারপর এটি শত শত মাইল দূরে কাস্পিয়ান সাগরের উপর দিয়ে বিচ্যুত হয়।
অ্যাটেনডেন্ট আসাদভ বলেন, ক্যাপ্টেন বলেছিলেন যে তাকে বিমানটি সাগরে অবতরণ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি আকতাউয়ের দিকে যাওয়ার এবং স্থলভাগে অবতরণ করার সিদ্ধান্ত নেন।
আরও বলেন, পাইলট সতর্ক করেছিলেন যে এটি একটি কঠিন অবতরণ হবে এবং আমাদের প্রস্তুত থাকতে এবং যাত্রীদের প্রস্তুত রাখতে বলেছিলেন।
রাশিয়ার বিমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানায়, এটি একটি জরুরি অবস্থা ছিল যা সম্ভবত পাখির সাথে ধাক্কা লাগার কারণে ঘটেছিল।
এই দুর্ঘটনা দেখিয়েছে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে শত শত মাইল দূরে বিমান উড়লেও বেসামরিক বিমান চলাচল কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, বিশেষত যখন বড় ধরনের ড্রোন যুদ্ধ চলমান।
মানবকণ্ঠ/আরআই
Comments