আদালত প্রাঙ্গণে সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর ওপর হামলা এবং ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা৷ সোমবার (৭ অক্টোবর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওঠানোর সময় সাবের হোসেন চৌধুরীর ওপর ডিম নিক্ষেপ করা হয়। রিমান্ড শুনানি শেষে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার সময়ও বৃষ্টির মতো ডিম ছোড়া হয় তার দিকে। নিক্ষেপ করা হয় জুতা। এ সময় পুলিশি নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেদ করে তার ওপর হামলাও করা হয়।
সোমবার বিকেল ৩টার দিকে পৃথক দুই হত্যা মামলায় সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান ও সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খানকে আদালত নিয়ে আসা হয়। দুই বছর আগে গুলিতে মকবুল হোসেন নামে বিএনপির এক কর্মীর মৃত্যুর মামলায় সাবের হোসেন চৌধুরীর ১০ দিনের এবং যুবদলনেতা শামীম হত্যা মামলায় নজিবুর রহমান ও আমিনুল ইসলাম খানের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পল্টন থানা পুলিশ। বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটের দিকে তাদের এজলাসে তোলা হয়। এজলাসে নেওয়ার সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের ওপর ডিম নিক্ষেপ করেন। সাবের হোসেন চৌধুরীর শার্ট ও ট্রাউজারে ডিমের দাগ দেখা যায়।
এর পর বিকেল ৪টার দিকে ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালতে রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। প্রথমে সাবের হোসেন চৌধুরীর পক্ষে রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি হয়। রাষ্ট্রপক্ষ ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থণা করে। বিএনপিপন্থী আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকীও রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।
ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, সাবের হোসেন চৌধুরী শেখ হাসিনার সরকারের অবৈধ মন্ত্রী। ফ্যাসিস্টের অন্যতম সহযোগী, কাছের লোক। মানুষের ওপর অত্যাচার, জুলুম, হত্যা, অপহরণে তার দীর্ঘ পরিকল্পনা ছিল। তিনি আওয়ামী লীগ করতেন না। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে টার্গেট করেন। হাসিনার সাথে হাত মেলান। একটা সময় টোটালি নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়ে হাসিনা সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান পান।
রিমান্ড শুনানি চলাকালে ৪টা ৩ মিনিটে বিদ্যুৎ চলে যায়। এ সময় আসামিদের দিকে ডিম নিক্ষেপ করা হয়। ওমর ফারুক ফারুকী তখন আইনজীবীদের বিশৃঙ্খলা করতে বারণ করেন। তবে, বিদ্যুৎ না থাকলেও মোবাইল ফোনের আলো জ্বালিয়ে শুনানি চলতে থাকে। পাঁচ মিনিট পর বিদ্যুৎ চলে আসে।
ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে সরকারের পালাবদল হয়েছিল। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর সাবের হোসেনরা ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বলে, আর ভোটের দরকার নাই। আমরা থাকব, শাসন করব। যত খুশি গুম-খুন করব। ভোট চুরি করে নিজেকে এমপি ঘোষণা করেন। এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। বিরোধীদের গরু, ছাগল, কুকুরের মত পিটান। গুম-খুনের নায়ক। ছাত্রদলনেতা নুরুজ্জামান জনিকে ক্রস ফায়ারে দেওয়া হয়। এতে সরাসরি জড়িত সাবের হোসেন চৌধুরী। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে পিটার হাস গণতান্ত্রিক ভোটের আহ্বান জানান। তিনি পিটার হাসের সঙ্গে মিটিং করেন হাসিনার নির্দেশে। অবৈধ নির্বাচন করার বিষয়ে তার ভূমিকা রয়েছে।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গণভবনে মিটিং হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাবের হোসেন চৌধুরী। সেখানে আন্দোলন দমাতে সরাসরি গুলির সিদ্ধান্ত হয়। সুন্দর চেহারার আড়ালে তার ভয়ঙ্কর রূপ দেখেন। ৩ আগস্ট মুগদা ওভারব্রিজের নিচে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়। বহু আহত ও নিহত হন। তারা যেন মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে না পারে, এজন্য গেট বন্ধ রাখে তার নেতাকর্মীরা।
এ সময় হাসেন সাবের হোসেন চৌধুরী। এতে আইনজীবীরা ক্ষুব্ধ হন। তখন ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, মানুষের যখন বিবেক চলে যায়, তখন তিনি স্বাভাবিক বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেন। ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট। অথচ, তার লজ্জা-অনুতাপ নেই। বিএনপির কর্মী মকবুল হত্যার সাথে তিনি জড়িত। তার রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থণা করছি।
তখন অন্যান্য আইনজীবী বলতে থাকেন, ১০ দিন, ১০ দিন, ১০ দিন।
সাবের হোসেন চৌধুরীর পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী এহেসানুল হক সমাজী রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
শুনানি শেষে আদালত সাবের হোসেন চৌধুরীর পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। শুনানিকালে অনেকটা হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন সাবের হোসেন চৌধুরী। এ নিয়ে বিএনপির আইনজীবীরা তাকে কটূক্তি করেন।
এর পর নজিবুর রহমান ও আমিনুল ইসলামের রিমান্ড বিষয়ে শুনানি হয়। তাদেরও ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থণা করা হয়।
এ সময় ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, আমিনুল ইসলাম ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তার ওপর দায়িত্ব ছিল জননিরাপত্তার। কিন্তু, তিনি নিজেই জননিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটিয়েছেন। হাসিনার শাসনকালে ফ্যাসিস্টের ভূমিকায় ছিলেন তিনি।
নজিবুর রহমানের বিষয়ে ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা অবৈধ টাকা উপার্জন করত। টাকা উদ্ধারের কথা বলে ডামি মামলা করত। পরে তদন্ত করে বলত অভিযোগ নেই। দুদক যেন মামলা না করে, সেই সার্টিফিকেটও দিত। দেশের সম্পদ লুট করে হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। অর্থনীতি ধ্বংস করার জন্য যা যা করার করেছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন। পরে আদালত তাদের তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এর পর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাদের কারাগারে নেওয়া হচ্ছিল। সিএমএম আদালতের গেটে পৌঁছামাত্র সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া বিএনপির নেতাকর্মীরা ওই তিন আসামির ওপর ডিম নিক্ষেপ করেন। আদালতের বারান্দা থেকেও ডিম নিক্ষেপ করা হয়। সেনাবাহিনী ও পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে কয়েকজন বিক্ষোভকারী সাবের হোসেনের ওপর হামলা চালান। সাবের হোসেনের পিছন থেকে একজনকে চড় মারতেও দেখা যায়। এ সময় পুলিশসহ আসামিরা দৌড়ে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় ঢোকেন। পচা ডিম এসে পড়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্যের ওপর।
এদিকে, সোমবার খিলগাঁও থানার চার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে সাবের হোসেন চৌধুরীকে। এর মধ্যে দুটি হত্যা ও দুটি হত্যাচেষ্টার মামলা রয়েছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান এসব মামলায় সাবের হোসেন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
মানবকণ্ঠ/এসআরএস
Comments