Image description

খেজুর একটি অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল, যা বৈজ্ঞানিকভাবে ফিনিক্স ড্যাক্টিলিফেরা নামে পরিচিত। মিষ্টি ও আঠালো এই ফলটি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। খেজুর ফাইবার, ভিটামিন (বিশেষ করে ভিটামিন বি৬), খনিজ (পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম) এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভাণ্ডার। এটি প্রাকৃতিক চিনির দারুণ উৎস, যা শরীরকে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ খেজুরের তুলনায় ভেজানো খেজুর খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি উপকারী। সারা রাত বা কয়েক ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে খেজুর নরম হয় এবং এর পুষ্টি উপাদানগুলো শরীর সহজে শোষণ করতে পারে। এনডিটিভি-র এক প্রতিবেদন অনুসারে, ভেজানো খেজুর খাওয়ার কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা নিচে তুলে ধরা হলো:

হজমশক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণ
ভেজানো খেজুর ফাইবারের চমৎকার উৎস। পানিতে ভেজানোর ফলে এটি আরও সহজপাচ্য হয়ে ওঠে। এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

তাৎক্ষণিক শক্তির উৎস
খেজুরে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি ও কার্বোহাইড্রেট থাকে। ভেজানো খেজুর সকালে বা ওয়ার্কআউটের আগে খেলে শরীর তাৎক্ষণিক শক্তি পায় এবং দীর্ঘক্ষণ কর্মক্ষম থাকে।

হাড়ের সুরক্ষা
এতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাসের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান রয়েছে, যা হাড়কে মজবুত ও সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহ কমিয়ে হাড়ের সুরক্ষায় কাজ করে।

হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস
খেজুরে থাকা উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত ভেজানো খেজুর খেলে হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নয়ন
ভিটামিন বি৬ এবং ম্যাগনেশিয়াম মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভেজানো খেজুর নিয়মিত খেলে স্মৃতিশক্তি ও জ্ঞানীয় কার্যকারিতা (Cognitive Function) উন্নত হয়।

রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
এতে রয়েছে ভিটামিন এ এবং সি, যা শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। এটি বিভিন্ন সংক্রমণ ও মৌসুমী রোগবালাই থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।

রক্তে শর্করার ভারসাম্য
খেজুরের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। তাই এটি রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়িয়ে দেয় না, বরং নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করতে পারে।

ত্বক ও চুলের যত্ন
ভেজানো খেজুরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন ‘অক্সিডেটিভ স্ট্রেস’ কমিয়ে ত্বকে বয়সের ছাপ বা বলিরেখা পড়তে দেয় না। এটি ভেতর থেকে পুষ্টি যুগিয়ে ত্বককে উজ্জ্বল ও সতেজ রাখে।

খাওয়ার সঠিক নিয়ম
সবচেয়ে ভালো ফল পেতে রাতে ৩-৪টি খেজুর এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে খালি পেটে সেই খেজুর খান। চাইলে খেজুর ভেজানো পানিও পান করতে পারেন। এছাড়া স্মুদি, ওটমিল, সালাদ বা দইয়ের সঙ্গে মিশিয়েও এটি খাওয়া যায়।

সতর্কতা
খেজুরে ক্যালোরি ও প্রাকৃতিক শর্করার পরিমাণ কিছুটা বেশি। তাই ডায়াবেটিস রোগী বা যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাদের এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। যেকোনো খাদ্যতালিকাগত পরিবর্তনের আগে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।