Image description

এনামুল হক টগর। পিতা-মরহুম রোস্তম আলী মিয়া মাতা-মরহুমা রোকেয়া খাতুন। জন্ম ১৯৬৬ সালে ১ জানুয়ারি পাবনা শহরে রাধানগর মহল্লায় নূরপুর গ্রামে। পৈত্রিক নিবাস পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার গুনাইগাছা গ্রামে। আট ভাই বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ সন্তান। শিক্ষা জীবন শুরু সিংগা প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং শিক্ষা জীবন শেষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টার ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে। তিনি ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসাবে সামছুল হুদা ডিগ্রি (অনার্স) কলেজে টেবুনিয়া পাবনাতে কর্মরত আছেন। স্ত্রী সাবিরা নাজনীন ও মেয়ে জান্নাতুন নূর শাহরিন। লেখকের প্রকাশিত বই: উপন্যাস নগর অরণ্যে পাখিদের গান। কাব্যগ্রন্থ: নতুন সূর্যের দিন, নিঃসঙ্গ স্বদেশের প্রেম, প্রিয়তমার কাছে মুক্তিযোদ্ধায় চিঠি, আমরা আবার যুদ্ধের পথে হেঁটে যাচ্ছি, রাত শেষে ছোট পাখির গান, বকুলপুরের কৃষ্ণচূড়া, আত্মার জন্মভূমি, নতুন আলোর অপেক্ষায়, যুদ্ধের রনাঙ্গণে মানবতার বিপ্লব, বালুকাবেলার প্রেম ও নূড়ি, মহা-উদ্যানে বসন্তকাল, আসমান নক্ষত্রে মা। গল্পগ্রন্থ: ভালোবাসার সুরেলা বাঁশি, শেষ বিকেলের নদী। গীতিকাব্য: কাওসার সুমধুর।


এনামুল হক টগরের কবিতা

আত্মার বাঁশি

হৃদয়ে আত্মার বাঁশি বাজে ঐশ্বরিক প্রেমে ভালোবাসার গোপন সংবাদ!!
তোমার জন্য আকুল প্রাণ আমার বিরহে কাঁদে দহন যন্ত্রণার দীর্ঘ নদ!
একই আসমান ও ছাদের নিচে আমরা বাস করি নন্দন!
ধনী গরিব কিষান কিষানি শ্রমিক যাযাবর ভবঘুরে মক্ষীরানি!

মনোযোগ দিয়ে শোন তুমি সেই বাণী সেই সুর সেই গান ও ব্যথার বেদনা ধ্বনি।
আত্মায় ব্যথার ক্রন্দন জাহান্নাম নরক থেকে ভেসে আসে অভিজাত শ্রেণির অহংকার!
তাদের গর্বিত কথাগুলো মানবতাকে ধ্বংস করে লাঞ্ছিত করে দুঃখ সুদূর-
আর সভ্যতার বুকে এঁকে দেয় কঠিন যাতনার ঘৃণিত অঙ্গার।

এমন দানবের জন্য যদি জান্নাত নির্মিত হয় সুন্দর পুষ্প উদ্যান!
তবে আমি জাহান্নামেই থেকে যাবো জনম জনম আজন্ম আজীবন!
এই জগতে ক্ষুদ্র এক প্রাণী আমি কাউকে অপমান করার অধিকার নেই জীবন-মরণ।
সত্যের পথে যাত্রা আমার দুঃখ-কষ্ট ও ত্যাগের ভেতরেই মহিমা প্রিয় বন্ধু আপন!
বহুদূর দিগন্ত ব্যাপী আমি ঘুরি ফিরি তোমার এক বিন্দু ভালোবাসার প্রতীক্ষায়।

তোমার বাগানে অজস্র হলুদ গোলাপ ফুটে আছে রঙের মহাসমুদ্র ঢেউ লীলা সঞ্জয়!
মহাবিশ্বের সমান ও অসীম বিষণ্নতায় আমি জেগে থাকি প্রাণের সুজন?
শুধু তোমাকে পাব বলে এই অন্তহীন দুঃখ-কষ্ট ও বেদনার জ্বালা বুকে কঠিন দহন।
আমি তোমার ভালোবাসার অনুসন্ধান করি আমাকে বদলে দাও জ্ঞানে পরিপক্ব।
শায়েখ প্রেমে মুরিদ আমি আলো দাও অভয় চেতনার অভিজ্ঞ বিবেক।

এই শরীরে কোন অতীত নেই এই দেহে কোন ভবিষ্যৎ নেই শুধুই বর্তমান শুধুই বর্তমান!
আমার চোখের গভীরে তুমি এক অদ্ভুত ও দুর্বিনীত প্রেমিক হূদয়ে গোলাপ বাহারি নয়ন!
যতক্ষণ বিশ্বাস আছে ততক্ষণই শত্রুর সাথে অবিশ্বাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ লড়াই আন্দোলন।
তোমার দর্শন সাক্ষাৎ আমার কঠিন বেদনার গভীরে একবিন্দু শান্তির প্রেম চিরন্তন!

মনে হয় অনাদি অনন্তকাল ধরে তোমার ঐশ্বরিক অলৌকিক বন্ধনে, 
আমি মরমি প্রেমে থেকে যাই অব্যয় অক্ষয় মৃত্যুর স্বাদ প্রশান্ত!
আত্মায় বাঁশি বাজে তোমার ভালোবাসার গজল কান পেতে শুনি ঐশী সরল!
প্রতিটি নিঃশ্বাসই আমার নব নব জন্ম নব নব পুষ্প চেতনার পরিচয় নির্মল।


কে তুমি 

কে তুমি আমার ভালোবাসার জগতে গোপন প্রেমের পথ প্রদর্শক?
কে তুমি আত্মার গভীরে বিদগ্ধ মহা-চৈতন্যের আলোকপ্রাপ্ত মাশুক প্রেমিক?
অশুভ যুদ্ধের রণক্ষেত্রে কে তুমি সাহায্যকারী প্রাণের বন্ধু তীক্ষ্ণ তরবারি ন্যায়পরায়ণ?
কে তুমি ভালোবাসার সমুদ্রে শান্তির নাবিক গতিশীল জাহাজে দুর্বিনীত নয়ন?
পৃথিবীর ফাগুন চৈত্র বসন্ত উদ্যানে কে তুমি পুষ্প বাগিচায় সুবাস ছড়াও চন্দন?

মৃত্তিকার গভীর খনিতে কে তুমি ইউরেনিয়াম প্লাটিনাম স্বর্ণ রৌপ্য মণি মুক্তা মহামূল্যবান?
সাগর সৈকতে কে তুমি বালুকাবেলার দারুচিনি দ্বীপ সবুজ বনভূমির বুকে পুষ্প উদ্যান?
মরুভূমির বুকে কে তুমি প্রিয় বন্ধু প্রেমের গল্প কবিতা উপন্যাস নাটকের মনোজ্ঞ দৃশ্য প্রকৃতির মরূদ্যান?
আসমানের বুকে কে তুমি জ্বল জ্বলে নক্ষত্র নিহারিকা রুপালি আলোর জ্ঞানে চেতনা উদয়? 
মনের বাসনাগুলো তীব্র আগুনে জ্বলে পুড়ে কে তুমি একমাত্র ধৈর্যের সন্তোষচিত্ত প্রশান্ত আশ্রয়? 
আমার লেখার ভেতরে কে তুমি দেশপ্রেমিক কাগজ কলম কালির উত্স থেকে নিপুণ নির্মাণ?
আমার গানের সুর ছন্দে কে তুমি প্রেমের বাঁশিওয়ালা বাঁশি বাজাও দিওয়ানা সুরে জ্ঞানের অনুপ্রেরণা?
রাজপথের আন্দোলন মিছিলে কে তুমি বিপ্লবী স্লোগান দাও সুষম বণ্টন দাবি আদায় অধিকার?

অতীন্দ্রিয় স্বপ্নবান দুটি চোখে কে তুমি হৃদয়ে পরিপূর্ণ আলো ছড়াও প্রজ্ঞা প্রেম দীপ্তকর।
বহুদূর অনাদি অনন্ত সীমার অতীত কে তুমি চিরন্তন মহাপ্রেমে আত্মার বন্ধন আলো আঁধার?
হাতের লেখেনি প্রাণের রংতুলির কারুকার্যে কে তুমি তত্ত্বজ্ঞানী আধ্যাত্মিক বর্ণনা করা বড় কঠিন?
আমি যখন গভীর রাতের আঁধারে প্রতিবাদী যোদ্ধা তুমি তখন প্রত্যাশার খামারে কর্মজীবী ফসলের জাগরণ।

আমি যখন প্রভাত পাখির গানে অপলক প্রতিরোধকারী তুমি তখন প্রথম সূর্য কিরণ শ্রমজীবীর স্লোগান।
আমরা দুজন পরস্পর বন্ধু আশেক মাশুক সম্পদ বণ্টন কল্যাণে মহাশান্তির পথে মহাঐক্যের ঠিকানা।


ঐশ্বরিক প্রেম 

জীবনের সুনামগুলো মাটির উর্বর শক্তিতে রূপান্তর করে মাঠ সবুজ করি শস্যের ভাণ্ডার। 
এই পৃথিবী একটা মায়ার স্বপ্ন শিশুদের আনন্দ মোহ খেলনার ক্ষণস্থায়ী জীবন নশ্বর! 
কিছুদিন খেলতে খেলতে পরিশেষে ছুড়ে ফেলে দেয় পরিত্যক্ত নর্দমার গর্তে হাহাকার।
সময়ের অনেক অনেক স্মৃতিগুলো ভুলে গেছি অতীত জীবন রহস্যময় ইতিহাস অবাক। 

কিন্তু হঠাৎ মনে হলো তুমি এক ঐশ্বরিক সামনে এসে দাঁড়িয়ে অতীন্দ্রিয় অলৌকিক? 
তোমার প্রতীক্ষার সাক্ষাত্ তপস্যায় বিশ্বাস মজবুত করেছি শক্ত পাথর।
ধ্যানে হৃদয় আলোকিত করেছি দূরদৃষ্টি আধ্যাত্মিক বিবেক দীপ্তকর। 
আত্মাকে মানবতার মহত্ত্ব দিয়ে নরম করেছি বাতাসে সুরেলা পাখির ভাসমান পালক!

হিংসা বিদ্বেষ আমিত্ব অহংকার দমন না করে শুধুমাত্র মদের দুর্নাম করা অশুভ তামাশা। 
প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে একদিন পানশালায় ঢুকেছি বিচিত্র জ্ঞানের বাসনা আশা! 
শত শত মাতাল আমার দিকে তাকিয়ে আশ্চর্যে বিস্ময় ঘটনার গভীরে দুঃখ নিরাশা? 
আমি জানি তারা আমাকে যুগ যুগ ধরে মাতাল বলবে কবি এক রহস্যময় জীবন! 
মোল্লা পুরোহিত যাজকরা আমাকে ধর্ম সভায় ভর্ত্সনা দেবে কিছু যায় আসে না। 

সত্যের কাছাকাছি পৌঁছাতে অন্তর প্রসার করেছি প্রেমের পথে আম্বিয়া আউলিয়ার জ্ঞান দর্শন! 
সবটুকু মানবতা দিয়ে পৃথিবীর সভ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি স্রষ্টার ইবাদতে মগ্ন। 
হাঁটতে হাঁটতে পথে কখনো গাছ-গাছড়ার পচন থেকে সরাইখানার গন্ধ শুঁকেছি নেশার মদ। 
মৃত্তিকার বাগান থেকে গোলাপ গন্ধ শুঁকেছি মৌমাছির চাক থেকে মিষ্টি মধু পান করেছি তৃপ্ত স্বাদ। 
মনে হয় নগর ছেড়ে চিরতরে চলে যাই প্রেমের রাজ্যে সুদূর জ্ঞানের রাজ্যে তোমার চৈতন্য ঠিকানায়। 

যেখানে প্রস্ফুটিত ফুলের যৌবনে গুপ্তধন উদ্ভাসিত হয় প্রকৃতির নিয়মে গুপ্তজ্ঞান বৈচিত্র্যময়! 
ভোগের গভীরে শান্তি নয় ধ্বংস পতন অশনি অতৃপ্ত হাহাকার ঘৃণা! 
প্রেমের গভীরে পরিশুদ্ধ প্রজ্ঞা আধ্যাত্মিক চেতনার আলোকপ্রাপ্ত পথ অজেয়! 
বক্ষস্থলের ভেতরে ভাঙা হৃদয় ধ্যানে পরিপূর্ণ হয় বিশ্বত্মার অমৃত সুধা প্রেম কল্যাণ অক্ষয়।


মানবকণ্ঠ/এফআই