কলকাতায় খুন হয়ে যাওয়া ঝিনাইদহ-৬ আসনের সাংসদ আনারুল আজিম আনারের লাশ বা লাশের অংশ উদ্ধার না হলেও এই মামলার নিষ্পত্তি হতে কোন অসুবিধা হবে না বলে মনে করেন ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে ইতিমধ্যে কলকাতায় অবস্থান করছেন ডিবি প্রধানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের গোয়েন্দা প্রতিনিধি দল।
মঙ্গলবার (২৮ মে) দিনের শুরুতে কলকাতার নিউটাউনের ওয়েস্টিন হোটেল থেকে বেরোনোর মুখে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে কথা বলেন হারুন অর রশীদ।
লাশ না পেলে এই মামলার নিষ্পত্তি হবে কিনা, সে ব্যাপারে ডিবি প্রধান জানান, ‘পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডির কর্মকর্তারা প্রত্যেকটি বিষয়ে তদন্ত করছে, অন্যদিকে বাংলাদেশে আটক এই হামলার পরিকল্পনাকারী, ঘাতক, নির্দেশনাকারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য, পাশাপাশি শিলিস্তা রহমানের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে আমরা কলকাতা এসেছি। কলকাতায় এসে সিআইডির কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এখানে আটককৃত আসামির সাথে কথা বলেছি। বাংলাদেশ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এখানকার আসামির সাথে কথা বলে তা মিলিয়ে দেখা হয়েছে, ক্রস এক্সামিনেশন করেছি, এখানকার আসামিকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে আমরা হুবহু মিল পেয়েছি। তাছাড়া একটা জীবন্ত মানুষ (এমপি আনার) নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেন ঢুকছেন, সেই নারী ঢুকলেন তার ডিজিটাল এভিডেন্স আছে। কিন্তু মাননীয় এমপি ওই আবাসন থেকে বেরোলেন না তারও প্রমাণ আছে। আবার সন্দেহভাজন কিছু ব্যক্তিকে বের হতে দেখা গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় ভারত এবং বাংলাদেশের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা, ডিজিটাল এভিডেন্স, আসামিদের স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী, পিসিপিআর (প্রিভিয়াস কনভিকশন এন্ড প্রিভিয়াস রেকর্ড) এসব বিষয়গুলো তদন্তকারী কর্মকর্তারা আমলে আনবেন এরপর আদালতে প্রেরণ করা হলে সেখানেও বিষয়টি আমলে আনবেন সেক্ষেত্রে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করা কষ্টকর হবে বলে আমি মনে করি না।’
‘পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য প্রমাণ তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী, তারপরে তাদের আদালতে প্রেরণ করা হলে সেটাকেও আদালত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন। সেক্ষেত্রে এই লোমহর্ষক খুনের বিচার খুব কষ্টকর হবে বলে মনে পড়ে মনে হয় না’
এদিকে, সঞ্জীবা গার্ডেনে এমপি আনারকে খুন করার পর পাবলিক টয়লেট দিয়ে সেই লাশের কিমা ফ্ল্যাশ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে সেই লাশের টুকরোর হদিশ পেতে ওই আবাসনের সুয়ারেজ পাইপ (নিষ্কাশন প্রক্রিয়া) সেটাকেও ভাঙার জন্য সিআইডি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছেন ডিবি প্রধান। পাশাপাশি লাশের সন্ধানে সঞ্জীবা গার্ডেনের পাশেই হাতিশালা ক্যানেলেও তল্লাশি অভিযান চালানোর অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা দল।
ডিপি প্রধান জানান, ‘এখানকার যারা তদন্তকারী কর্মকর্তা তারা খুবই আন্তরিকভাবে কাজ করছে। অত্যন্ত আন্তরিকতার সহিত লাশের অংশবিশেষ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে তারা।’
‘প্রথমে তারা যে খালের (ভাঙ্গরের কৃষ্ণমাটি বাগজোলা খাল) কথা বলেছিল আজকেও সেখানে তল্লাশি অভিযান হয়েছে। পাশাপাশি আমরা তাদেরকে অনুরোধ করেছি সঞ্জীবা গার্ডেনের পাশে হাতিশালা ক্যানেলে সেখানেও যেন অভিযান চালানো হয়। একইসঙ্গে যে ফ্লাটে এমপি আনার ছিলেন সেখানে যে কমোড আছে তার যে সুয়ারেজ (sewerage) লাইনটা আছে সেটাকেও ভাঙার জন্য আমরা অনুরোধ করেছি, আমরা আশা করছি সেই কাজগুলো আজকেই হবে।’
ইতিমধ্যই ওই ফ্ল্যাটে থেকে রক্ত নমুনা সংগ্রহ করে ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু লাশ যদি উদ্ধার না হয় সে ক্ষেত্রে তার কন্যার ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে কিনা এ ব্যাপারে ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ জানান, একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে তদন্তের জন্য যে যে বিষয়গুলো আমলে নেওয়া উচিত, মামলার স্বার্থে সেগুলো নেবেন। যাবতীয় তথ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা এখনো হতাশ নই যে তার লাশ বা লাশের টুকরো উদ্ধার হবে না। তদন্তের স্বার্থে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে কলকাতায় আটক জিহাদ হাওলাদারকে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হতে পারে বলেও জানান তিনি।
যে ঘরে খুন হয়েছেন সেই ঘরে সিসিটিভি ফুটেজ কাপড় দিয়ে মুড়ে দেয়া হয়েছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে যে খবর, তা নিয়ে ডিবি প্রধান জানান, ‘ওই মেয়েটির (শিলিস্তা) সাথে কথা হয়েছে, মূল ঘাতকের সাথে কথা হয়েছে, অন্য আসামির সাথেও কথা হয়েছে। আমরা সকল তথ্য বিশ্লেষণ করে যাচাই-বাছাই করে সেগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হবে।’
এদিন হোটেল থেকে বেরিয়ে লালবাজারে যান ডিবি প্রধান। সেখানে কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েলের সাথে সাক্ষাৎ করবেন তিনি। তারপরে সেখান থেকে হাতিশালা ক্যানেলে এবং সেখান থেকে প্রয়োজনে সঞ্জীবা গার্ডেনেও যেতে পারেন এই প্রতিনিধি দলটি।
মানবকণ্ঠ/আরএইচটি
Comments