Image description

বিভিন্ন দেশে রপ্তানি বাড়ানোর ওপর জোর দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রপ্তানি নীতিমালা অনুযায়ী পণ্যের কোয়ালিটিতে যাতে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া না হয় তাও নিশ্চিত করতে বলেছেন। একইসঙ্গে বাজেট বাস্তবায়নে সচেতনভাবে, স্বচ্ছতা-দক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে মন্ত্রিপরিষদকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বাজেট সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়নের নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। 

সোমবার (১ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি এসব নির্দেশ দেন। এদিন রপ্তানি নীতি ২০২৪-২৭ এর খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠকের বিষয়ে বিকালে সচিবালয়ে ব্রিফ করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। 

সচিব জানান, রপ্তানি নীতিমালা ২০২৪-২৭ এর ক্ষেত্রে ছোটখাটো পর্যবেক্ষণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর রপ্তানি বাজারে যে চ্যালেঞ্জ আসবে সেগুলো মোকাবিলার জন্য অবশ্যই এই রপ্তানি নীতিতে উদ্যোগ থাকতে হবে। সফটওয়্যার রপ্তানির পাশাপাশি ইলেকট্রনিক ডিভাইস রপ্তানির উদ্যোগ নিতে হবে। সেজন্য রপ্তানিকারকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে। এছাড়া শাক-সবজিসহ কৃষিপণ্য যাতে আন্তর্জাতিক বাজারের উপযোগী করা যায় সে উদ্যোগও রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া বিদেশি আমদানিকারকদের সঙ্গে পণ্য পাঠানো বা লেনদেন সংক্রান্ত কোনো বিরোধ বা জটিলতা হলে সেটি সমাধানের জন্য দেশেই একটি ব্যবস্থা রাখার উদ্যোগ নিতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী নারী রপ্তানিকারকদের বিশেষ সহায়তা দেয়া, রপ্তানিকারকদের নতুন বাজার সম্পর্কে ধারণা দেয়া, হস্তশিল্প পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। 

মাহবুব আহমেদ বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানি হয়েছে। যদিও বলা হয়েছে এটি সাময়িক হিসাব। আগের রপ্তানি নীতিতে গত জুন শেষে ৮০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য নেয়া হয়েছে। এছাড়া নতুন রপ্তানি নীতি অনুযায়ী ২০২৭ সালের জুন নাগাদ বছরে ১১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান মাহবুব হোসেন। প্রতি তিন বছর পর পর রপ্তানি নীতিমালা করা হয়। সর্বশেষ করা ২০২১-২৩ রপ্তানি নীতিমালার মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। 

ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রশাসনসহ প্রত্যেকেই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সবসময়ই সহযোগিতা করছে। 

সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতি নিয়ে প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা হিসেবে আপনার বক্তব্য কী, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দুর্নীতি তো সবাই করে না। একটি অফিসের সবাই কি দুর্নীতিবাজ? হাতেগোনা কয়েকজন করে এবং ওই হাতেগোনা কয়েকজনের জন্য বাকি সবাই বিব্রত হয়। 

তিনি বলেন, সরকারের তরফ থেকে তো অবস্থানটি পরিষ্কার করা হয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে কোনোরকমের কোনো সহানুভূতির দৃষ্টিকোণ দেখানো হবে না এবং দেখানো হচ্ছে না, এটা তো আপনারা খেয়াল করেছেন। সেটি তো আমরা এখন অনুসরণ করছি, সেটি আমরা সিরিয়াসলিই ফলো করছি। 

প্রশ্নকারী ওই সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখন আপনি বলতে পারেন তাহলে ফাঁকে ফাঁকে কেন হচ্ছে? প্রথমেই আমি বলি, দুর্নীতিটা এতো কাঠামোর মধ্যে থাকার পরেও হচ্ছে। এটি সব সমাজের সব জায়গায়ই হয়। সব কাঠামোর মধ্যেও তো যারা খুবই দুষ্টচিন্তার মানসিকতার, দুষ্টবুদ্ধির মানসিকতার, তারা তো এই কাজগুলো করতে চান। কিন্তু আমরা এইটুকু দেখতে পাচ্ছি, যখনই এ বিষয়টি সরকারের নজরে আসে সরকারের তরফ থেকে কোনো প্রশ্রয় দেয়া হয় না।

পদ্মা সেতু রক্ষণাবেক্ষণে হচ্ছে শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি: পদ্মা সেতু রক্ষণাবেক্ষণে শতভাগ একটি সরকারি কোম্পানি গঠনে ‘পদ্মা ব্রিজ অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স কোম্পানি পিএলসি’ প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ তথ্য জানিয়ে বলেন, কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন হবে এক হাজার কোটি টাকা। কোম্পানির মূল দায়িত্ব থাকবে পদ্মা সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ। কোম্পানির ১৪ জনের বোর্ড অব ডিরেক্টর থাকবে। 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রেল মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ ও সেতু কর্তৃপক্ষ থেকে বোর্ড অব ডিরেক্টরে প্রতিনিধি থাকবেন। কোম্পানি আইন অনুযায়ী তারা চলবে এবং জনবল কাঠামো তারা অনুমোদন দেবে। কোম্পানির মূল উদ্দেশ্য হলো ধীরে ধীরে আমাদের আওতায় নিয়ে আসা। বর্তমানে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে থাকা চুক্তি শেষ হওয়ার পরই কোম্পানি বাস্তবায়ন হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

‘ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টি?য়ার টেকনোলজি আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন: মাদারীপুরের শিবচরে শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টি?য়ার টেকনোলজি নামে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে চায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি)। তবে প্রধানমন্ত্রী তার নামে এটি স্থাপনের বিষয়ে ‘না’ বলেছেন। ফলে প্রতিষ্ঠানটির নাম বদলে হচ্ছে ‘ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টি?য়ার টেকনোলজি’।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টি?য়ার টেকনোলজি আইন ২০২৪’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে উপস্থাপিত শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি (শিফট) আইন-২০২৪-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদনের জন্য সভায় উপস্থাপিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই বললেন এটি তার নামে হবে না। এটি থেকে শেখ হাসিনা নাম বাদ দিয়ে ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি আইন-২০২৪ এই নামে অনুমোদিত হয়েছে। এই ইনস্টিটিউটটি মূলত আইসিটি সংক্রান্ত প্রযুক্তি, গবেষণা, প্রযুক্তি উৎপাদন, গবেষণায় প্রশিক্ষণ প্রদান এবং গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এটি হবে মাদারীপুরের শিবচরে। 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটির একটি গভর্নিং বডি থাকবে এবং একজন প্রধান পৃষ্ঠপোষক থাকবেন। প্রধান পৃষ্ঠপোষক হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


মানবকণ্ঠ/এফআই