Image description

খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় বসবাসকারী সব জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া কাউকে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়ার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এছাড়া এদিন বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেয়া এক পোস্টেও এ নির্দেশনা দেয়া হয়।

এতে বলা হয়েছে, গতকাল খাগড়াছড়ি ও আজ রাঙামাটিতে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে আন্তরিকভাবে কাজ করছে সরকার। ১৮ সেপ্টেম্বর জনৈক ব্যক্তিকে গণপিটুনি ও পরবর্তীতে তার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলমান হামলা, আক্রমণ ও প্রাণহানির ঘটনায় সরকার গভীরভাবে দুঃখিত এবং ব্যথিত। সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সকল বাহিনীকে সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে এবং পার্বত্য তিন জেলায় বসবাসকারী সকল জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেখানে শান্তি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি নিশ্চিতকরণে সরকার বদ্ধপরিকর। 

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়া এবং ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত না হওয়ার জন্য সকলকে নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে। আইন নিজ হাতে তুলে নেয়া এবং যে কোনো সম্পত্তি ধ্বংস করা দণ্ডনীয় ও গর্হিত অপরাধ। 

সহিংসতার সঙ্গে সম্পর্কিত সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত আর দায়ী ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করা হবে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এ লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি খুব শিগগিরই গঠন করা হবে। আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি পরিদর্শন করবেন। এই প্রতিনিধি দলে থাকছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এবং প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী।

গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মোহাম্মদ মামুন নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পাহাড়ি এলাকা। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল ও রাতে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা মিছিল নিয়ে লারমা স্কয়ারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের বাধা দেয় আরেকপক্ষ। এরই জেরে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে ধনরঞ্জন ত্রিপুরা, রুবেল ত্রিপুরা ও জুরান চাকমা নামে তিন যুবক নিহত হন। আহত হন আরো অন্তত ২০ জন।
 
খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সেখানে ১২ জন ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। এর মধ্যে ৩ জন এখানে এসে মারা গেছেন। বর্তমানে নয়জন এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর বাইরে চারজনকে চট্টগ্রামে রেফার করা হয়েছিল। তারা সেখানে চিকিৎসাধীন।
 
পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

এদিকে, খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষে তিনজন নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার সকালে রাঙ্গামাটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। এক পর্যায়ে স্থানীয় দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। যা রূপ নেয় সংঘর্ষে। আগুন দেয়া হয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে। সেখানে একজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। দুপুরের দিকে জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন।

বান্দরবানেও বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করেছে পাহাড়ের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা। রাজারমাঠ থেকে সম্মিলিত ছাত্র সমাজের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের করে তারা। ব্যানার ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড হাতে হাজারো শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।


মানবকণ্ঠ/এফআই