নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার হিসেবে দেশে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের ব্যবস্থা চালু করা যায় কিনা তা নিয়ে বিশ্লেষণ ও আলোচনা চলছে নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনে। তবে এজন্য দরকার রাজনৈতিক ঐক্যমত। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদ্ধতিতে বেশি লাভবান হবে ছোট দলগুলো। ফলে বড়দল চাইবে না এমন পদ্ধতিতে নির্বাচন হোক। এছাড়া সরকারের স্থিতিশীলতা নিয়েও প্রশ্ন থাকবে।
এককভাবে কোনো দল বা একজন প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বলা হয় ফার্স্ট পাস্ট দ্যা পোস্ট। এই পদ্ধতিতে কোনো নির্বাচনী এলাকায় একাধিক প্রার্থীর মধ্যে যিনি বেশি ভোট পান তিনিই বিজয়ী হন। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিশ্বে জনপ্রিয় পদ্ধতি এটি। যার অনুসরণ করে থাকে বাংলাদেশও। যদিও বিশ্লেষকদের দাবি, এতে তৈরি হয় কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা।
দেশে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে আলোচনা ছিল আগের থেকেই। এই পদ্ধতিতে একটি দল যত ভোট পাবে সে অনুপাতে আসন মিলবে সংসদে। যা চালু আছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. আব্দুল আলীম বলেন, এক শতাংশ ভোট পাওয়া মানে হচ্ছে এক শতাংশ আসন পাওয়া। অর্থাৎ তার একটা প্রতিনিধিত্ব সংসদে থাকছে। কিন্তু এখনকার যে ফার্স্ট পাস্ট দ্যা পোস্ট পদ্ধতি এটির মাধ্যমে অনেক ছোট দল এক শতাংশ বা ৫ শতাংশ ভোট পেলেও সংসদে আসতে পারে না। এর জন্য তাদের কথা বলারও কোনো জায়গা থাকে না।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের এই সদস্য বলেন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি দেশেও চালু করা যায় কিনা সেটি নিয়ে চলছে বিচার-বিশ্লেষণ। আমরা ১ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করেছি। বিষয়টি বিশ্লেষণ করছি, চিন্তা করছি এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
ঐকমত্য ছাড়া এই পদ্ধতি চালু করা কঠিন বলেই মনে করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা। কারণ এতে সুবিধা পাবে ছোট দলগুলো। তাই বড় দলগুলো চাইবে না এমন প্রস্তাব বাস্তবায়ন হোক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, বড় দলগুলো সব সময় কর্তৃত্ব করতে চায়। যদি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন হয় তাহলে এই কর্তৃত্ববাদী দুর্বল হয়ে যাবে। আলোচনা ছাড়া এই নির্বাচন পদ্ধতিতে গেলে খুব ইফেক্টিভ হবে না। সরকার টিকায় থাকতে হলে অন্য ছোট দলগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে, তাদের পরামর্শ শুনতে হবে। তা না হলে সরকার পতন হয়ে যাবে। তারপরেও বাংলাদেশ যদি এই পদ্ধতিতে যেতে পারে তাহলে কিছু জিনিস উন্নত হবে।
তবে এই ব্যবস্থা চালু করা গেলে রাজনৈতিক সমঝোতার পরিবেশ তৈরি হবে বলে মত তার।
Comments