মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে এ বছর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কুচকাওয়াজ এবং ডিসপ্লে অনুষ্ঠানের আয়োজন হচ্ছে না। এর পরিবর্তে এবার 'বিজয় মেলা' আয়োজন করা হচ্ছে, যা গ্রামীণ ঐতিহ্যকে নতুন করে তুলে ধরবে। এ মেলায় প্রাচীন বাংলার চারু ও কারুশিল্প এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য প্রদর্শিত হবে।
ইউএনবিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।
তিনি বলেন, সেখানে চারু, কারু মেলার সঙ্গে কৃষি পণ্যের মেলা হবে। তার সঙ্গে দেশীয় পণ্য পরিবেশন করা হবে। মেলায়, শিশু, নারী, পুরুষ সবার অংশগ্রহণ থাকবে। এখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। সবাই আনন্দ উপভোগ করবে। পাশাপাশি স্কুলগুলোতে অনুষ্ঠান হবে।
উপদেষ্টা বলেন, আগে যে প্রচলিত কুচকাওয়াজ হতো, এতে জনগণের সম্পৃক্ততা থাকত না, সেখানে স্কাউট ও সেচ্ছাসেবকরা থাকত। তার সঙ্গে অন্যান্য বাহীনি থাকত। এতে সরাসরি জনগণের সম্পৃক্ততা ছিল না। এবার শিশু, নারী, পুরুষ সব শ্রেণির জনগণকে সম্পৃক্ত করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে এবার কুচকাওয়াজ হচ্চে না। কারণ সেনাবাহিনী এখন সারাদেশে ব্যস্ত। এটার জন্য একটা প্রস্তুতির বিষয় আছে। তাই এবার প্যারেড স্কয়ারে কুচকাওয়াজ হচ্ছে না। এটার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি প্রয়োজন।
দিনটিতে রাজধানী ঢাকার দৃশ্যমান উঁচু ভবনগুলোতে উড়বে বাংলাদেশের বড় আকারের লাল-সবুজ পতাকা। বিনা টিকিটে সিনেমা হলে শিক্ষার্থীরা দেখতে পারবে মুক্তিযুদ্ধের ছবি। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ‘মহান বিজয় দিবস-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নসংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম (বীরপ্রতীক)। ওই সভায় ফারুক-ই-আজম বলেন, বাঙালি জাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন মহান মুক্তিযুদ্ধ। এ বছর বিশেষ পরিস্থিতির কারণে কিছু কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। তবে বিজয় দিবস উদযাপনে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় বিজয় মেলা করা যেতে পারে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মহান বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ দিবস। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।
আমাদের এবার গতবারের চেয়ে কিছুটা বাজেট বাড়ানো হয়েছে এ খাতে। তবে এবার কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে হচ্ছে না। বাচ্চারা রোদে দাঁড়িয়ে থাকে এজন্য ডিসপ্লে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে দেশজ সংস্কৃতিতে মেলাটা হচ্ছে ভিন্ন একটা আয়োজন। মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রাচীন বাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্য ফিরিয়ে বিজয় মেলায় চারু, কারু ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শিল্পপণ্যের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকবে। মেলায় থাকবে গ্রামীণ নানা ঐতিহ্যের সমাহার।
এদিকে সরকার বিজয় দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজনে বরাদ্দ বাড়িয়েছে গতবার এ খাতে ৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যে জানা গেছে, এবারের বিজয় দিবসের ব্যয় নির্বাহের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা বাবদ ৭৫ হাজার টাকা এবং বিজয় মেলা আয়োজন বাবদ ১ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। সদর উপজেলা ছাড়া বাকি ৪৩৫টি উপজেলায় মোট ৭ কোটি ৬১ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ ছাড় করেছে মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া প্রতিটি জেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা বাবদ ১ লাখ টাকা এবং বিজয় মেলা আয়োজন বাবদ দেড় লাখ টাকা করে মোট ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
মানবকণ্ঠ/আরআই
Comments