Image description

সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার বিষয়ে এখনো কোনো ধারণা পাননি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সরকারের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করলেও আগুনের সূত্রপাত এবং এর সঙ্গে কারও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, সে বিষয়ে কোনো কথা বলেনি।

আগুনে পোড়া সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো রোববার থেকে সচিবালয়ের বাইরে তাঁদের অধীন দপ্তর ও সংস্থার কার্যালয়ে অস্থায়ীভাবে অফিস শুরু করবে। এ জন্য শুক্রবার থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছেন তাঁরা।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন সচিবালয় ঘিরে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা লক্ষ করা যায়। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা সচিবালয়ের চারপাশে পাহারায় ছিলেন। গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর থেকে পুলিশের সঙ্গে সেনাসদস্যরাও সচিবালয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন।

বুধবার মধ্যরাতে আগুনে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের ষষ্ঠ থেকে নবমতলা পর্যন্ত পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার থেকে এই ভবনে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

একজন কর্মকর্তা বলেন, ভবনটি এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি ব্যবহারের উপযোগী আছে কি না, সে পরীক্ষা না করে কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হবে না। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কমিটি গতকাল থেকে কাজ শুরু করেছে। কমিটির সদস্যরা সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সভা করে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন করেন।

ভবন পরিদর্শনের পর তদন্ত কমিটির সদস্য এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, ‘তদন্তকাজ শুরু হয়েছে এবং শনিবার আরও বৈঠক হবে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে কিছু বলা যাবে না।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনির নেতৃত্বাধীন কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তী রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এবং ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটও গতকাল ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন করেছে।

এ ছাড়া পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অপরাধ শনাক্তকরণ দল গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেছে। এই দলের পরিদর্শক প্রশান্ত কুমার দেবনাথ বলেন, বৃহস্পতিবার ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়েছে। এই ভবনের আশপাশে কোনো আলামত পাওয়া যায় কি না, সে জন্য গতকাল ভবনের আশপাশে তল্লাশি করা হয়েছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, আগুন নিয়ে নাশকতার প্রশ্ন ওঠায় পুলিশের সহযোগিতায় সচিবালয়ের সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকা সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করে তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এসব ফুটেজে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেছে কি না, সে বিষয়ে কেউ মুখ খোলেননি।

কে কোথায় অফিস করবেন

রোববার থেকে সচিবালয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম চললেও ৭ নম্বর ভবনে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ফলে এই ভবনে যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ রয়েছে, তারা অস্থায়ীভাবে অন্যত্র বসার ব্যবস্থা করছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম তারিকুল আলম গতকাল রাতে বলেন, ‘আমরা দক্ষিণ সিটির করপোরেশনের নগর ভবন, রেলভবন এবং প্রবাসীকল্যাণ ভবনে জায়গা দেখেছি। তবে মনে হচ্ছে, নগর ভবনে আমরা বসব।’

শ্রম মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব জানান, রোববার সকাল ৯টায় তাঁরা কাকরাইলে শ্রম ভবনের সম্মেলনকক্ষে অফিস শুরু করবেন। সেখানে বসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে, অস্থায়ীভাবে তাঁরা কোথায় অফিস করবেন। তবে শ্রম ভবনেই শ্রম মন্ত্রণালয়ের সব দপ্তর স্থানান্তরের চিন্তা রয়েছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জানে আলম বলেন, জিপিওর পেছনে মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের ভবনে তাঁরা অফিস করবেন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আরেক কর্মকর্তা বলেন, আগুনে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসামের দপ্তর পুড়ে গেছে। মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ ভবনে শুধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসার ব্যবস্থা করা হবে। টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা নাহিদ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকায় এখন থেকে তিনি সেখানে অফিস করবেন।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. গোলাম মো. ফারুক বলেন, রোববার থেকে তাঁরা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনে অফিস শুরু করবেন। আগে থেকেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা এবং সচিবের কার্যালয় রয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোথায় অফিস করবেন, শুক্রবার তা ঠিক হয়নি। এ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আছির উদ্দীন সরদার বলেন, শনিবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

মানবকণ্ঠ/আরআই