Image description

দেশের সামরিক বাহিনীর রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, সেনাপ্রধান হিসেবে নিজের মেয়াদকালে আমি রাজনীতিতে নাক গলাব না। আমি সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে হস্তক্ষেপ করতে দেব না। এটাই আমার স্পষ্ট অঙ্গীকার।

দেশের একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, রাজনীতিতে নাক গলানোর বিষয়টি সেনাবাহিনীর জন্য ক্ষতিকর।

অতীতে এগুলো হয়েছে। আমরা অতীত থেকে শিখেছি। এটা কখনো ভালো ফল বয়ে আনেনি। এ জন্যই আমার অঙ্গীকার হচ্ছে, সেনাপ্রধান হিসেবে নিজের মেয়াদকালে আমি রাজনীতিতে নাক গলাব না।

আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, রাজনীতিবিদের বিকল্প রাজনীতিবিদেরাই। তাদের বিকল্প সেনাবাহিনী নয়।
অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা করা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা করছি। তারা আমাদের কাছ থেকে যে ধরনের সহায়তা চাইছে, সেভাবেই সহায়তা দিচ্ছি এবং দেব।

যেদিন অন্তর্বর্তী সরকার বলবে, আপনাদের অনেক ধন্যবাদ, আপনারা আপনাদের কাজটা সম্পন্ন করেছেন, এখন পুলিশ আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব নেবে। আমরা তখন সানন্দে সেনানিবাসে ফিরে যাব।

তিনি আরও বলেন, আমরা পুরোপুরি অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে রয়েছি। আমরা চেষ্টা করব প্রধান উপদেষ্টা যেভাবেই আমার বা আমাদের সাহায্য চাইবেন, আমরা সেভাবেই উনাকে সহযোগিতা করব। এটাতে যদি আমাদের অসুবিধা হয়, সৈনিকদের যদি সাময়িক অসুবিধাও হয়, তারপরও সরকারকে সহযোগিতা করে যাব।

দেশ ও জাতির স্বার্থেই আমরা এটা করব। এই জাতির জন্য, দেশের জন্য ও দেশের মানুষের স্বার্থে যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা তৈরি আছি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর মাঠে থাকা নিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, আমরা আইনশৃঙ্খলার দেখভাল করছি। কিন্তু আমাদের ১/১১–এর অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। সেনাসদস্যদের মাঠে দীর্ঘদিনের উপস্থিতি উচ্ছৃঙ্খল কাজে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করে। যদিও সংখ্যাটা খুবই কম। শৃঙ্খলাজনিত ঘটনার জন্য আমরা সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত শেষে শাস্তিও দিই। এরপরও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়টি আমাদের জন্য বিব্রতকর। আমাদের তো এ ধরনের কাজে যুক্ততা কিংবা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার জন্য তৈরি করা হয়নি।

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ের নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরির গুরুত্ব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি আশাবাদী। রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে ভালো রাজনীতিবিদ রয়েছেন। হয়তো ভিন্নমতের মানুষও আছেন। আমার অতীত অভিজ্ঞতায় বলে, যখন এমন একটা ক্রান্তিকাল আসে, আমাদের রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বসলে তারা সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসেন।

নির্বাচন প্রসঙ্গে জেনারেল ওয়াকার বলেন, দেশবাসী অবশ্যই একটা ভালো নির্বাচন চায়। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন চায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান লক্ষ্যও সেটা। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময়সীমা দিয়েছেন। সেটা ঠিক সময়। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচনের রূপরেখা বাস্তবায়নে সব সহযোগিতা করব।

ভারত ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারত আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। আমরা অনেক দিক থেকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল। আবার ভারতও আমাদের কাছ থেকে সুবিধাও পাচ্ছে। আনুষ্ঠানিক আর অনানুষ্ঠানিক মিলিয়ে ওদের প্রচুর মানুষ বাংলাদেশে কাজ করছে। এ দেশ থেকে অনেক মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারতে যায়। আমরা তাদের কাছ থেকে অনেক পণ্য কিনছি। কাজেই বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার ব্যাপারে ভারতের বিরাট স্বার্থ আছে। এটা একটা দেওয়া–নেওয়ার সম্পর্ক। ন্যায্যতার ভিত্তিতে হতে হবে এটা। যেকোনো দেশ সব সময় অন্য দেশ থেকে সুবিধা পেতে চাইবে। এটা তো দোষ না। আমি যদি আদায় করে নিতে না পারি, দোষ তো আমারও। এই বিষয়গুলো দেখতে হবে। আমাদের ন্যায্যতার ভিত্তিতে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হবে। জনগণ যেন কোনোভাবেই মনে না করে ভারত বাংলাদেশের ওপর কর্তৃত্ব করছে বা এমন কিছু করছে, যা আমাদের স্বার্থের পরিপন্থী। কোনোভাবেই মানুষ যেন এটা না ভাবে।

মানবকণ্ঠ/আরএইচটি