দেশে শীতজনিত রোগ বাড়ছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, টনসিলাইটিস, ব্রঙ্কিওলাইটিস, সাইনোসাইটিস, অ্যাজমা, চর্মরোগ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু থেকে বয়স্ক সব বয়সের মানুষ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গতবছরের নভেম্বর থেকেই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শীতজনিত রোগীদের তথ্য সংগ্রহ করছে।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতবছরের নভেম্বর থেকেই হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগী আসতে শুরু করে। এ বছরের প্রথম দিনই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শীতজনিত শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত রোগে (অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন বা এআরআই) আক্রান্ত চারজন মারা গেছেন। গত তিন দিনে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯ হাজার ৭৫৮ জন। তাদের মধ্যে ডায়ারিয়ার রোগী ৭ হাজার ২০০ ও নিউমোনিয়া, ফুসফুসে সংক্রমনসহ শীতজনিত শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমনজনিত রোগী ২ হাজার ৫৫৮ জন।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতবছরের ১ নভেম্বর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত হাসপাতালে ১ লাখ ৬০ হাজার ৬৬৮ জন শীতজনিত রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৭৬ জনই শীতজনিত ডায়রিয়া রোগী, যা মোট রোগীর ৭২ শতাংশ। বাকি ৪৪ হাজার ৫৯২ জন বা ২৮ শতাংশ শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত রোগী।
গতবছরের ১ নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫৫ জন। তাদের মধ্যে ৫৪ জনই শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন, যা মোট মৃত্যুর ৯৮ শতাংশ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এক মাস আগেই হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীর চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আবু হোসেন মো. মইনুল আহসান বলেন, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে এক মাস আগেই আমরা হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি। শীতজনিত রোগীর চিকিৎসায় বিশেষ গাইড লাইন তৈরি করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব গাইড লাইনে হাসপাতালে রোগীদের কম্বল ব্যবহার, হাসপাতালের ভাঙা জানালা দরজা মেরামত, নেবুলাইজার মেশিন ঠিক করা, অক্সিজেন সিলিন্ডারে অক্সিজেন রাখা ইত্যাদি নির্দেশনা দেওয়া হয়েচে। এখন এসবের খোঁজ নিচ্ছি। অক্সিজন ও এন্টিবায়োটিকসহ কোনও ধরনের ওষুধ বা সরঞ্জামাদির সংকটের কোনও তথ্য আমরা পাইনি।
এই চিকিৎসক কর্মকর্তা সাধারণ মানুষের উদ্দেশে বলেন, বাচ্চা ও বয়স্ক- এই দুই বয়সীদের অবশ্যই শীতের থেকে দূরে রাখতে হবে। এদের নিউমোনিয়া, ফুসফুসে সংক্রমণ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। যতটুকু সম্ভব ঘরের বাইরে না যাওয়া ও ঘরের ভেতর থাকতে হবে। সে রকম কষ্ট হলে নিকটস্থ হাসপাতালের যেতে হবে। বাসায় থেকে ঝুঁকি নেওয়ার দরকার নেই।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ শফি আহমেদ বলেন, শীতে সর্দি, কাশি, ব্রঙ্কিওলাইটিস ও এজমার প্রকোপ বাড়ছে। চর্মরোগ ও ডায়ারিয়াও বাড়ছে। শিশুদের ঠাণ্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে। গরমের কাপড় পরিধান করাতে হবে। বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে। নাক দিয়ে পানি আসলে নরমাল স্যালাইন দিয়ে নাক পরিষ্কার করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এন্টিহিস্টামিন ও এন্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না। শ্বাসকষ্ট হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়াতে হবে।
মানবকণ্ঠ/আরআই
Comments