Image description

সরকারি চাকরিতে প্রশাসন ছাড়া বাকি ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা ক্যাডার যার, মন্ত্রণালয় তার, এই দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা নীতি নির্ধারণ, পদ না থাকলেও পদোন্নতি, বিদেশ সফর, বিশেষ ক্ষমতাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বেশি ভোগ করেন। প্রতিটি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট দক্ষ, অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করতে হবে। অর্থাৎ, কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করার উপর গুরুত্ব দেন আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ। তিন প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে, ক্যাডার যার মন্ত্রণালয় তার, উপসচিব পদে কোটা বাতিল, সকল ক্যাডারের সমতা।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের আয়োজনে রাজধানীর খামারবাড়িতে ‘জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস বিনির্মাণে করণীয়: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এমন মতামত প্রকাশ করেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

এসময় বক্তারা বলেন, যে ক্যাডারের কর্মকর্তারা চাকরির শুরু থেকে মাঠ পর্যায়ে অভিজ্ঞ, তাদেরকেই সেই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হোক। তাহলে জনগনের জন্য কার্যকর  জনসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। প্রশাসনের সব স্তরে অনিয়ম, কোটা বৈষম্য, অসমতা দূর করে একটি গতিশীল জনপ্রশাসন ব্যবস্থা গড়তে সরকারকে সহযোগিতা করতে চায় ২৫ ক্যাডারের সদস্যরা। কোটাবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকারকে বিদায় করে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাই ২৫ ক্যাডার বর্তমান সরকারের অনুভূতিকে ধারণ করে সব ধরনের কোটা বিলোপের মাধ্যমে মেধাভিত্তিক জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে হবে। প্রশাসনিক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে এই ২৫ ক্যাডারের অনেকগুলোর শীর্ষ পদে সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন নেই। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের কারণ অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করে যেন রিপোর্টে সুপারিশ করেন, ২৫ ক্যাডার সেই প্রত্যাশা করে।

সংগঠনটির সমন্বয়ক মুহম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনের অন্তরায়সমূহ পর্যালোচনা করতে গিয়ে তিনটি মূল সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ে অনভিজ্ঞ ও অপেশাদার কর্মকর্তার পদায়ন, আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদে কোটা পদ্ধতি প্রয়োগ এবং আন্তঃক্যাডার বৈষম্য। উল্লিখিত তিনটি সমস্যার সমাধান করলে সিভিল সার্ভিসের ক্যাডারগুলোর মধ্যে বৈষম্য দূর হবে, পাশাপাশি জনবান্ধব ও সেবামূলক রাষ্ট্রকাঠামো তৈরি হবে বলে এ পরিষদ মনে করে।

তিনি আরও বলেন, উপসচিব পদে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সকল ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে পরীক্ষার ভিত্তিতে নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু কমিশন আমাদের সাথে কোন প্রকার আলোচনা ছাড়াই উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রেখে অন্যান্য ২৫টি ক্যাডারের জন্য পরীক্ষা ভিত্তিতে নিয়োগ এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিস হতে আলাদা করার সুপারিশ করেছে, যা গ্রহণযোগ্য এবং জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস গঠনের অন্তরায়।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ক্যাডার সার্ভিস আছে বলে মেধাবীরা শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দেয়ার আগ্রহ পান। তাই এই দুই ক্যাডারকে বিলুপ্ত করলে ভালো শিক্ষার্থীরা নিরুৎসাহিত হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে আরিফ হোসেন বলেন, যারা মেধার ক্রাইসিসে ভোগে তারাই নানাভাবে বলপ্রয়োগ করে সুবিধা আদায় করতে চায়।

সভা সঞ্চালনা করেন আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক  ফারহানা আক্তার ও ডা. মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন।