জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে অসংখ্য শহীদ ও রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদের বিদায়ের পরও জাতীয় সংসদের সচিবালয় দপ্তরের মতো জায়গায় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চারিত হয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের অফিসার ও কর্মচারীরা।
গত ৯ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত সংসদ সচিবের পিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা শেখ মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে আওয়ামীপন্থীদের নিয়ে সংসদ সচিবালয়ে সচিবের রুটিন দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিবের (মানব সম্পদ) সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়া হয়। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সংসদ সচিবালয়ের অফিসার ও কর্মচারীরা। পরে অফিসার ও কর্মচারীদের কল্যাণ সমিতি লিখিত প্রতিবাদ জানায়।
সমিতির আহ্বায়ক এ এস এম আতাউল করিম ও সদস্য-সচিব মো. শামছুল হক স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে নেতারা বলেন, জাতীয় সংসদ সচিবালয় অফিসার ও কর্মচারী কল্যাণ সমিতি গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সাথে লক্ষ্য করছে যে, অত্র সচিবালয়ের উপসচিব বেগম নাজমুন নাহার, তার স্বামী শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা ও সাবেক সচিবের একান্ত সচিব শেখ মনিরুল ইসলাম এবং লেজিসলেটিভ ড্রাফটসম্যান মুহাম্মদ হাসিবুল ইসলাম এর নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট এর দোসরদের নিয়ে সংসদ সচিবালয় কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ নামে দাবি/দাওয়া আদায়ের জন্য গত ৯ জানুয়ারি সচিবের রুটিন দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিবের (মানব সম্পদ) সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। সাক্ষাৎকালে তারা অতিরিক্ত সচিবের নিকট রেজিস্টার্ড কল্যাণ সমিতির বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে অসত্য তথ্য পেশ করে। সাক্ষাৎ শেষে তারা বের হওয়ার সময় এবং প্রধান ফটকে সমবেত হয়ে প্রকাশ্যে ‘জয় বাংলা’স্লোগান দেয়।
প্রতিবাদলিপিতে দাবি জানানো হয়, প্রকাশ্যে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান প্রদানকারী কর্মচারী এবং এদের প্রশ্রয় প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এ বিষয়ে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সংসদের কিছু আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যায় মনিরুল ইসলাম। এরপর সেখান থেকে বের হয়ে জয় বাংলা স্লোগান দেয় তারা। পরে সিসিটিভির ফুজেট ডিলিট করে দেয় মনিরুলরা। এ বিষয়ে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়।’
জয় বাংলা স্লোগান ও আওয়ামী ফ্যাসিস্ট দোসরদের পুনর্বাসনে শেখ মনিরুল ইসলামের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত সংসদ সচিবের পিএস হিসেবে ২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পান শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা শেখ মনিরুল ইসলাম। যিনি জুলাই গণঅভ্যুথানের আগে বিগত সময়ে অবৈধ তিনটি নির্বাচনের পর তিনটি মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতির পিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির একান্ত সচিব হিসেবে ছিলেন।
মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, তিনি আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপদ রাখতে ও ফ্যাসিবাদের নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তদবির বাণিজ্য করছেন। বিশেষ করে পদোন্নতি, বিগত ১৬/১৭ বছর যাবৎ যারা গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন এবং এখনো বসে আছেন তাদেরকে বদলীর ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে নানাভাবে প্রটেকশন দিয়ে আওয়ামী লীগের এজন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। বিভিন্ন কর্মকর্তাদের অর্থের বিনিময়ে পোস্টিং দিচ্ছেন। তার স্ত্রী (উপসচিব মানব সম্পদ)সহ মনিরুল সরাসরি টেন্ডার বাণিজ্য করছেন। সংসদ সচিবালয়ে বিএনপি-জামায়াত পন্থীদের কোণঠাসা করতে নিয়মিত যোগসাজস করছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে যে কোনো বিষয়ে সাক্ষাৎ করতে চাইলে সাক্ষাতে বাধা প্রদান এবং আওয়ামীপন্থী হলে তাদেরকে সাক্ষাতের সুযোগ করে দিচ্ছেন মনিরুল ইসলাম। ইতোমধ্যে বিভিন্ন শাখার গুরুত্বপূর্ণ নথি এবং দুর্নীতির প্রমান পত্র ওদের দ্বারা গায়েব করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কর্মকর্তারা৷
অভিযোগ রয়েছে, শেখ মনিরুলের দাপটে ৭/৮ জন সিনিয়রকে ডিঙিয়ে তার স্ত্রী নাজমুন নাহারকে সুপিরিয়র টাইপের বাসা বরাদ্দ এবং নিয়ম বহির্ভতভাবে সিনিয়রকে ডিঙিয়ে সংসদের উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। স্বামী মনিরুলের ক্ষমতার দাপটে এসব অনিয়ম করা হয়।
শেখ মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
অবিলম্বে সচিবের দপ্তর থেকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বদলী চায় জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী ৷ তাদের দাবি, শেখ মনিরুল ইসলাম ফ্যাসিবাদের অন্যতম দোসর। বিগত সময়ে তিন মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতির পিএস ছিলেন। এখনো তিনি ফ্যাসিবাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। এসব দোসরদের এখনি বদলি না করলে যেকোনো সময় অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এমতাবস্থায় সংসদ সচিবালয়ের ভাবমূর্তি রক্ষায় শেখ মনিরুল ইসলাম গংদের অপসারণ এখন সময়ের দাবি।
মানবকণ্ঠ/আরএইচটি
Comments