অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ২০২৬ সাল থেকে হাজীদের সমুদ্রপথে জাহাজে করে পাঠানোর জন্য সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবে। সৌদি আরবের ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এবং তারা সম্মতি দিয়েছে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের কাছে জাহাজ নেই, তবে এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ চলছে। তিনি আরও বলেন, আমরা হাজীদের জন্য বিমান ভাড়া ১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকায় এনেছি।
শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের চকবাজারের প্যারেড মাঠে আয়োজিত তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ ফ ম খালিদ হোসেন এসব কথা বলেন। ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ, চট্টগ্রামের উদ্যোগে পাঁচ দিনব্যাপি আয়োজিত মাহফিলের শেষদিন ছিল আজ।
ধর্ম উপদেষ্টা মন্ত্রণালয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার মন্ত্রণালয়ের কেউ ঘুষ খেলে, আমি তাকে সাসপেন্ড করে দেব। বিগত ১৬ বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে যারা বেচা-বিক্রি ও নয় ছয় করেছে, হাইকোর্টের বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব আমি। ১৬ বছরের জঞ্জাল ছয় মাসে পরিষ্কার করা সম্ভব নয়, তবে আমি পরিষ্কার করার কাজ শুরু করেছি।
আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, আলেম যারা, যাদের কোরআনের ওপর পাণ্ডিত্য আছে তারা দেশ চালালে আমাদের এ দেশ, ব্যক্তি, পরিবার সোনার সমাজে পরিণত হবে। আমরা যদি সরকার পরিচালনায় আলেমদের সম্পৃক্ত করতে পারি তাহলে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, লুটের মানসিকতা ও অব্যবস্থাপনা বিদায় নেবে।
তিনি বলেন, দুনিয়ার সমস্ত মুসলমান এক ও অভিন্ন। যারা কোরআনের ছায়ায় বড় হয়েছে তারা সবাই এক। হতে পারে ভাষা ভিন্ন। মুসলমানদের বিভিন্ন দলে ভাগ করার জন্য চক্রান্ত চলছে। আমাদের এ ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে। যেকোনো মূল্যে আমাদের ঐক্য ধরে রাখতে হবে।
বাংলাদেশের মুসলমানদের এক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীতে ২০০ কোটি মুসলমান, ৫৭টি মুসলমানের দেশ আছে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারতাম ইতিহাস নতুনভাবে লেখা হত। বাংলাদেশে ১৮ কোটি মুসলমান। আর ভেদাভেদ বা সংঘাত নয়, মতবিরোধ থাকবে। মতবিরোধ নিয়েই আমরা ঐক্যবদ্ধ হব। বাংলাদেশের বিভিন্ন ধারা আলেম-ওলামারা যদি এক হতে পারে আগামীকাল যে সূর্য উঠবে সেটা হবে নতুন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ বলেন, ‘আমি ২০১৯ সাল থেকে নয়াদিগন্ত পত্রিকায় মুসলমানদের ঐক্য, কওমী-আলেয়ার ঐক্য নিয়ে নিবন্ধ লিখেছি। এগুলো সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।’তিনি বলেন, ‘মুসলমানদের বিভক্ত করে রাখার জন্য চক্রান্ত চলছে। আমাদের সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। শুধুমাত্র ভোটের ঐক্য নয়।’‘হোক না, ভোটের ঐক্যও হোক। আমরা যদি কাছাকাছি আসতে পারি, এক অপরের ঘরে যেতে পারি, বসতে পারি তাহলে এটাও সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমি আশাবাদী। আমরা এ দেশে কোরআনের আদর্শে একটি সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা দেখে যাব।’
তিনি বলেন, অতএব আসুন, ফেসবুকে, টুইটারে ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে গুতাগুতি না করে পরস্পরকে সম্মান করতে শিখি। দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করি। যাদের মন ছোট তাদের মাধ্যমে বড় কাজ হয় না। সবাইকে নিয়ে কাজ করার মানসিকতা আমাদের গ্রহণ করতে হবে।
আগামী নির্বাচন ঐতিহাসিক হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস সাহেব বলেছেন আগামীতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। একটি ঐতিহাসিক নির্বাচন হবে আগামীতে। দিনের ভোট রাতে হবে না। দিনের ভোট দিনে হবে। এ দেশের জনগণ যাকে ভালো মনে করে তাকে ভোট দেবে। ভোট নিয়ে কোনো কারচুপি হবে না। কেউ ব্যালট বাক্স চুরি করে নিয়ে গেলে মুহূর্তের মধ্যেই সে সেন্টার আমরা বন্ধ করে দেব।
মানবকণ্ঠ/আরআই
Comments