Image description

অনেকদিন থেকেই একটা বিষয় মাথার মধ্যে ঘোর পাকাচ্ছে। অনেকভাবেই ভাবনার মধ্যে রেখেছি কিন্তু এখন ভাবছি কিছু একটা লিখে ফেলা দরকার। যদি একটি মানুষ উপকৃত হয় তাহলে হয়তো আমারই ভাবনা-চিন্তা এবং লিখে ফেলাটা কাজে আসবে। আমি যা বলছি যা চিন্তা করছি তা আপনারা সঠিক বা মেনে নিতে পারছেন কিনা। শুধু দরকার সমন্বয়, ধৈর্য, সহযোগিতা। আমরা যেকোনো বিষয় অর্জন করতে পারি শুধুমাত্র ধৈর্য ধরে। একটি বিষয় ভেবেছেন কিনা বা দেখেছেন কিনা আমরা যারা বাঙালি সামাজিকভাবে জীবনযাপন করছি, আমরা লেখাপড়া শিখে মনুষ্যত্ব অর্জন করার কথাটা বারবার প্রচার করছি, শেখাচ্ছি এবং নিজেরা ধারণ করার অপচেষ্টা করছি। কিন্তু বিষয়টা হলো মূলত কি আমরা মনুষ্যত্ব অর্জন করতে পেরেছি। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করে থাকি। এমনকি পারিপার্শ্বিকতা-কে দায়ী করি। কিন্তু সবার আগে আপনি আমি কোথা থেকে এসেছি সেই বিষয়টা আগে জানতে হবে। 

আমরা প্রত্যেকে কোনো না কোনো পরিবার থেকে এসেছি। প্রত্যেকটা পরিবারের নিজস্ব ঢং নিজস্ব কৃস্টি কালচার আছে। সেই আবহাওয়ার মধ্যে থেকেই আমরা প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করে বড় হয়েছি এবং হচ্ছে। প্রথম প্রশ্ন আমাদের নিজেদের মধ্যে মৌলিক মূল্যবোধ কতটুকু জাগ্রত হয়েছে। আমরা কতটুকু সমাজ সংসার দেশকে দিতে পেরেছি। প্রতিটা ক্ষেত্রেই দেখুন গণ্ডগোল, ফ্যাসাদ লেগেই আছে। আপনি  দেখছেন দেশ, রাষ্ট্র এগিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি এও দেখছেন আমরা সবাই অপসংস্কৃতি, অসুস্থ প্রতিযোগিতায় জটিল থেকে জটিলতায় জড়িয়ে পড়ছি। আসুন ছোট পরিসরে। আগে পরিবারের মধ্যে থাকুন না। পরিবারের মধ্যে যদি আপনি সুস্বাস্থ্য সুচিন্তা প্রতিষ্ঠিত করতে না পারেন তাহলে কি করে এই মানুষগুলো পরিবার থেকে বের হয়ে সমাজে ও রাষ্ট্রে ভালো প্রভাব ফেলবে। এবার আসুন আমরা পরিবারের ছেলে মেয়েদের কি শিক্ষা দিচ্ছি বলুন তো। 

আমাদের বয়স যারা কিনা ৫০ এর ঊর্ধ্বে হয়ে গেছি এখনো কি আপনি আমি লোভ, লালসা, হিংসা, বিদ্বেষ, থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছি, না না না। তাহলে কি করে আমরা সন্তানদেরকে সুস্থ মানসিকতায়, মূল্যবোধ, মনুষ্যত্ব অর্জন করার কথা বলব। তাদের কাছে পৃথিবী খোলা, প্রযুক্তির যুগে- আমি আপনি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না জানলেও সন্তানেরা কিন্তু বিষয়গুলো খুব ভালো করে জানে বুঝে। আমার আপনার কর্মকাণ্ড ওরা প্রতিনিয়তই দেখছে। আমাদের সাথে তাদের মতের, চিন্তার অনেক ফারাক। ওরা প্রত্যেকটা বাবা-মার আচার আচরণ খুব সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে। আর সেভাবেই তারা বাবা মার সঙ্গে চলাফেরা করে থাকে ফলে শতকরা ৯০ ভাগ বাবা মায়েরা তার সন্তানদের সঠিকভাবে পড়তে পারে না। 

বাস্তবে আমরা যারা সন্তানদেরকে সত্য কথা বলা থেকে দূরে রেখেছি তাদের মুখে কলুপ এঁটে দিয়েছি। ওরা আমাদের সুরে সুর কথা বলে। ওদের নিজস্ব কোনো স্বীকারোক্তি নেই। ওদের কোনো ভালো-মন্দ আমরা জানতে চাই না। বুঝতে চাই না। ওকে জন্ম দিয়েছি ও আমার চাবিতে চলাফেরা করবে, খাবে, দাবে, ঘুমাবে। আমার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করবে ওর নিজস্ব কোনো স্বপ্ন থাকতে পারবে না। যদিও আমি জানি আমার এই কথাগুলো অনেক অভিভাবকেরই ভালো লাগছে না। আমাকে বাড়াবাড়ি বলা হচ্ছে। সেটাও বুঝি একটু বুকে হাত দিয়ে দেখুন তো যা বলেছি আপনার অন্তরটা তা বলছে কিনা। ব্যাপারটা এমন আমার সন্তান তার নিজের অবস্থায় কতটুকু সুখী বা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে তার চেয়ে বেশি বাড়াবাড়ি আমার। 

অন্য কথায় আসি স্বাধীনতার পর থেকে দেখছি বাবা-মার মধ্যে একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা। সন্তানকে ভালো রেজাল্ট করতে হবে। জিপিএ ফাইভ পেতে হবে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আরও যা হওয়া যায় হতে হবে, শিল্পী, হতে হবে সব কিছু হতে হবে। যদি কোন বন্ধুর ছেলে মেয়ে একটু ভালো পারে বা ভালো করছে তখন নিজের বাচ্চাকে তুলনা করা হচ্ছে অন্যের বাচ্চার সঙ্গে। শুধু তাই নয় অমুকের এই আছে আমার নেই, এই চলছে সারাক্ষণ বকবকানি। কোনো জায়গা নেই কি সাহিত্যের আড্ডায় কি গল্পের আড্ডায় কি বন্ধুদের আড্ডায় সব জায়গায় সোয়াব লোক দেখানো, এই হচ্ছে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের রুটিন। তাই সমাজের দোষ না দিয়ে সমাজ মানুষের সৃষ্টি। আসুন আমরা পরিবারে বিশুদ্ধতার চর্চা করি। নিজেদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা করি। আপনজনদেরকে ভালোবাসি। একে অপরকে শত্রু না ভেবে বন্ধু মনে করে নিজেদেরকে নতুন করে ভাবতে শিখি। সন্তানদের মধ্যে এই শিক্ষা দেই তাহলে আমরা বেঁচে যাব, আমাদের অবস্থা বৃদ্ধাশ্রমে নয় আমাদের সন্তানদের ভালোবাসায় বসবাস হবে।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট