Image description

প্লাস্টিক দূষণ বর্তমান বিশ্বের একটি অন্যতম পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যগুলো যেমন: বোতল, পলিথিন, বিভিন রকম প্যাকেট (চিপস, বিস্কুট, চকোলেট ইত্যাদি) ও প্লাস্টিক ব্যাগ আমাদের পরিবেশে বিপুল পরিমাণ দূষণ সৃষ্টি করছে। আমাদের জীববৈচিত্র্য, মানবস্বাস্থ্য, এবং সামুদ্রিক সম্পদে এ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। এ অবস্থায় টেকসই প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা এবং প্লাস্টিকের পুনঃব্যবহার নিশ্চিত করে একটি সার্কুলার ইকোনমি গড়ে তোলার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রযুক্তিগত অগ্রগতির এই যুগে, অ্যাপস-ভিত্তিক সমাধান প্লাস্টিক দূষণ কমানোর পাশাপাশি একটি টেকসই প্লাস্টিক সার্কুলার ইকোনমি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। 

অ্যাপস-ভিত্তিক প্রযুক্তির মাধ্যমে প্লাস্টিক দূষণ হ্রাসের কৌশল- 
প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ, শ্রেণিবিভাগ, এবং পুনঃব্যবহারের প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করতে অ্যাপস-ভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হতে পারে। এমন কিছু অ্যাপস তৈরি করা যেতে পারে, যা ব্যবহারকারীদের প্লাস্টিক বর্জ্য নির্দিষ্ট বিন্দুতে জমা দেয়ার জন্য দিকনির্দেশনা দিবে এবং স্থানীয় বর্জ্য সংগ্রহকারীদের সাথে সংযুক্ত করবে। উদাহরণস্বরূপ, প্লাস্টিক জমা দেয়ার জন্য নির্ধারিত স্থানগুলো অ্যাপস-এ ম্যাপ আকারে চিহ্নিত করা যেতে পারে, যাতে ব্যবহারকারীরা সহজেই তা অনুসন্ধান করতে পারেন। কিছু অ্যাপস রিওয়ার্ডভিত্তিক সিস্টেম তৈরি করতে পারে, যেখানে ব্যবহারকারীরা তাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রে জমা দিয়ে পয়েন্ট অর্জন করতে পারবেন। 

এই পয়েন্টগুলো পরবর্তীতে নগদ টাকা, ডিসকাউন্ট কুপন বা অন্যান্য সুবিধায় রূপান্তরিত করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে মানুষকে প্লাস্টিক জমা দেয়ার জন্য উৎসাহিত করা যাবে এবং দূষণ কমবে। অ্যাপসের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের জন্য পরিবেশবান্ধব পণ্য সম্পর্কে তথ্য দেয়া যেতে পারে এবং তারা যে প্লাস্টিক পণ্যগুলো ব্যবহার করছেন তার পরিবর্তে আরো টেকসই বিকল্প প্রদান করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, প্লাস্টিকের বোতলের পরিবর্তে রিইউজেবল বোতল ব্যবহার করার সুবিধা সম্পর্কে তথ্য প্রদান করা যেতে পারে।

প্লাস্টিক বর্জ্যরে উৎপত্তি থেকে শুরু করে পুনঃব্যবহার এবং পুনঃপ্রক্রিয়াজাত পর্যন্ত সব পর্যায়ে ট্র্যাকিং নিশ্চিত করা একটি কার্যকর প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান উপাদান। অ্যাপস-ভিত্তিক ট্র্যাকিং ব্যবস্থা বর্জ্য উৎস, পরিমাণ এবং সংগ্রহ ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাতের তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে। এর ফলে পর্যায়ক্রমে প্লাস্টিকের চলাচল সহজেই নির্ধারণ করা যায় এবং পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকারী ও উৎপাদনকারীরা তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হন। ঊচজ-এর আওতায় নির্মাতারা তাদের পণ্য বাজারে আনার পর তা পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করার জন্যও দায়িত্ব পালন করে। একটি অ্যাপস-ভিত্তিক ঊচজ সিস্টেম তৈরির মাধ্যমে নির্মাতারা তাদের পণ্য পুনঃব্যবহার ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাত কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে এবং তাদের পণ্যের ব্যবহারযোগ্যতা সম্পর্কে তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

টেকসই প্লাস্টিক সার্কুলার ইকোনমি প্রতিষ্ঠায় সম্ভাব্য সুযোগ- 
অ্যাপসভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্লাস্টিক বর্জ্যের সংগ্রহ, শ্রেণিবিভাগ, এবং পুনঃপ্রক্রিয়াজাত সহজ করা সম্ভব। এর মাধ্যমে প্লাস্টিক পুনঃব্যবহারের হার বাড়ানো সম্ভব এবং পরবর্তীতে এই পুনঃব্যবহৃত প্লাস্টিক উপকরণগুলো টেকসই ইকোনমির জন্য বিকল্প কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্জ্য সংগ্রহ ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাতের জন্য একটি টেকসই চেইন তৈরি করা হলে স্থানীয় বর্জ্য সংগ্রাহক, রিসাইক্লিং ফার্ম এবং ছোট ব্যবসায়িক উদ্যোক্তাদের জন্য আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এছাড়া পুনঃব্যবহৃত প্লাস্টিক উপকরণগুলো থেকে স্থানীয়ভাবে পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরি করা যায়, যা স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

টেকসই প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনার প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তারা রিসাইক্লিং, পুনঃব্যবহার ও পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরিতে আগ্রহী হতে পারেন। বিশেষ করে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাত সংক্রান্ত অ্যাপস ও প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবসায়িক মডেলগুলো বৈশ্বিক ও স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে। প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াজাত কার্যক্রমে কার্বন নির্গমন হ্রাসের সম্ভাবনা থাকে, যা পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। এই কার্যক্রমগুলো অ্যাপসের মাধ্যমে কার্যকরভাবে পরিচালিত হলে, কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানো এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য প্লাস্টিক দূষণ হ্রাস এবং একটি টেকসই প্লাস্টিক সার্কুলার ইকোনমি গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে অ্যাপস-ভিত্তিক প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আরো কার্যকর ও প্রাতিষ্ঠানিক করতে সাহায্য করে এবং সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণও নিশ্চিত করে। প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে এবং স্থানীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণে অ্যাপসভিত্তিক প্রযুক্তির ব্যবহার তাই অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত এবং উদ্যোক্তাদের এগিয়ে এসে এই অ্যাপসভিত্তিক কার্যক্রমকে শক্তিশালী করা উচিত। 

লেখক: কলামিস্ট