Image description

দিন দিন দেশের মানুষের জীবনের মান উন্নয়ন হচ্ছে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে, বাড়ছে সম্ভবনা। কিন্তু সড়কের নিরাপত্তা আইন মেনে চলছে না কেউ। ঢাকার যানজট এখন একটি জাতীয় সমস্যায় রূপ নিয়েছে কিন্তু সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা সংস্থাসমূহের কোনো বুদ্ধিভিত্তিক সমাধান ও সমাধানের উদ্যোগ আজও মেলেনি। আমাদের এ জাতীয় সমস্যায় সমাধানের পথ কি আসলেই নেই?

যখন সড়কে যানবাহনের সংখ্যা, সড়কের স্বাভাবিক যানবাহন ধারণক্ষমতার সীমা থেকে অতিরিক্ত হয়ে যায়, তখন কোনো যানই তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। এরকম অবস্থায় যানজটের সূচনা হয়। সড়কের মোড়ে একাধিক সড়ক থেকে অতিরিক্ত যানবাহন প্রবেশ করলে সকল যানেরই মোড় থেকে নিষ্ক্রমণে ব্যাঘাত ঘটে এবং সড়ক প্রায় অচল হয়ে পড়ে।

প্রতিদিন বিভিন্ন পেশায় ব্যস্ত জীবনে ছুটে চলা মানুষের স্বাভাবিক জীবন এই যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে প্রতিনিয়ত। বিভিন্ন সময়ের সরকারের পক্ষ থেকে সমাধান শুধু বেবি টেক্সট, অটোরিকশা ও ইজিবাইক বন্ধ করে দিতে হবে। অথচ চল্লিশ হাজারের বেশি  অটোরিকশার চালক ও তাদের পরিবারের জন্য বিকল্প কোনো আয়ের উৎস না ভেবে তাদের উচ্ছেদ করতে চায় প্রাইভেট কার সম্প্রদায়ের কতিপয় স্বার্থপর জনগোষ্ঠী।

রাজধানীতে রেজিস্ট্রেশনকৃত বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ২০ লাখ ২৯ হাজার ৯৭৯টি। এরমধ্যে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট ১০ লাখ ৬৮ হাজার ৮৬৬টি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত এক পরিসংখ্যানের তথ্য। ঢাকার ১১০টি রুটের জন্য বাস-মিনিবাসের অনুমোদিত সীমা সাত হাজার ৪৩। প্রয়োজন ও রুটের ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে সরকারি একটি কমিটি এই সীমা প্রস্তাব করেছে।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এসব রুটে বর্তমানে মাত্র সাড়ে চার হাজার যানবাহন চলাচল করছে, যা প্রয়োজনীয় সংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ।

ফলে অনেক যাত্রী প্রাইভেট কার, অটোরিকশা ও রিকশার মতো ছোট যানবাহনের দিকে ঝুঁকছেন।

অন্যদিকে ,দূর্ঘটনা আর মৃত্যুর সংখ্যা কমছেই না। মানুষের জীবন যেন একান্তই মূলহীন সড়কে। লাইসেন্সবিহীন বেপরোয়া মদ্যপায়ী অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক যার গাড়ির নেই ফিটনেস। হচ্ছে না মৃত্যুর অবসান লাশের উপর দিয়ে চলছে চাকা কারণ সমাধান যে শুধুই কিছু টাকা। সরকারি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন গড়ে ৬৪ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন। বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, রাস্তাঘাটের নির্মাণ ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল। বিশেষ করে অতিরিক্ত প্রাইভেটকার, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা ও বেপরোয়া মনোভাব। পাশাপাশি যানজট নিরসনে বাস সার্ভিসের উন্নয়ন খুবই প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা বাস পরিষেবায় শৃঙ্খলা আনতে বাসের রুট যৌক্তিকীকরণ এবং একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি সিস্টেম প্রবর্তনের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

আমাদের নিয়মিত যানজট ও দুর্ঘটনা এড়াতে দরকার আইনের ত্রুটি চিহ্নিত করে গাড়ির সংখ্যা ও সর্বোচ্চ ফিটনেসসহ চালকের সকল প্রকার যোগ্যতা কঠোরভাবে নিশ্চিত করা ও যেকোনো অপরাধের সঠিক এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। ডিজিটাল পদ্ধতিতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ ও বিধিমালা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা।

সর্বোপরি, সড়ক নিরাপত্তা ও যানজট নিরাশনে বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে আলাদা সড়ক নিরাপত্তা ইউনিট গঠন ও সকল যানবাহনের জন্য আলাদা লেন্থ তৈরি করতে হবে। সড়ক নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে প্রণীত যাবতীয় সুপারিশমালা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের সকল সড়ক-মহাসড়কে ট্রাফিক চিহ্ন স্থাপন করতে হবে। দেশের মানুষের প্রতিদিনের জীবনকে গতিশীল, নিরাপদ ও যানজট মুক্ত করতে সাধারণ জনগণেরও নাগরিক দায়িত্ব পালন ও সচেতনতা প্রয়োজন।

লেখক: লেখক ও কলামিস্ট

মানবকণ্ঠ/এসআরএস