Image description

দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী দেশ ভারতে অবস্থান করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। সেখানে  অবস্থান করেও সালাহউদ্দিন আহমেদ নিয়মিত দলের নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অংশ নেন। এমনকি জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে স্থায়ী কমিটির বৈঠকও পরিচালনা করেন তিনি।

দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার প্রভাব রয়েছে বলেও দলের ভেতরে আলোচনা রয়েছে। অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলায় বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ ভারতের আদালতে খালাস পেয়েছেন। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর আদালত ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা থেকে তাকে খালাস দেন। কিন্তু এরপর নানা জটিলতায় তার দেশে ফেরা আটকে আছে। জানা গেছে, সালাহউদ্দিন আহমেদের দেশে ফিরতে হলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স লাগবে। দিল্লির ছাড়পত্র ছাড়া তিনি দেশে ফিরতে পারবেন না। মেঘালয় রাজ্য থেকে দিল্লি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ নিয়ে চিঠি দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো জবাব আসেনি। সেখান থেকে ছাড়পত্র না পাওয়া পর্যন্ত অনিশ্চিত দেশে ফেরা।

এরই মাঝে গত দুই মাস ধরে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে বিএনপির বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বাদ দিয়ে সালাউদ্দিন আহমেদকে দলের নতুন মহাসচিব করা হচ্ছে। সালাহউদ্দিন আহমেদের মহাসচিব হওয়া নিয়ে বিএনপির ভেতরে দুইটি পক্ষ রয়েছে। একটি পক্ষ অতীতে সালাহউদ্দিন আহমেদের দলের প্রতি অবদানের জন্য তাকে মূল্যায়ন করার পক্ষে। অন্য একটি পক্ষ সিনিয়র নেতাদের ডিঙ্গিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদকে অতিমূল্যায়ন  করার বিরুদ্ধে। যদিও সালাহউদ্দিন আহমেদ দাবি করেছেন, বিএনপির মহাসচিব হওয়ার মতো কোনো খবর তিনি জানেন না। তবে ইদানীং দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকসহ বিএনপির নানা নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সালাহউদ্দিন আহমেদের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা।

দেশে ফেরার প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ মানবকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতেই হয়তো দিল্লি সরকার তাকে ছাড়পত্র দিচ্ছে না। এ ছাড়া আর কী হতে পারে! কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন না পেলে মেঘালয় রাজ্য সরকার কোনো বিদেশিকে এভাবে নিজ দেশে পাঠিয়ে দিতে পারবে না। দেশে ফেরা এখন সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ নিলে আমার দেশে ফেরা সময়ের ব্যাপার মাত্র। দেশে ফেরা সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। এখানে আমার হাতে কিছুই নেই।

সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, যত দ্রুত সম্ভব তিনি দেশে ফিরতে চান। দেশে ফিরে যদি কারাগারে যেতে হয় তাহলেও তিনি দেশে ফিরবেন।

সরকারবিরোধী আন্দোলন সরকারবিরোধী আন্দোলন চলাকালে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালনকালে সালাহউদ্দিন আহমেদ ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী’ পরিচয়ে ‘তুলে নিয়ে’ যাওয়ার অভিযোগ উঠে। এরপর ৬২ দিন পর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে অসুস্থ অবস্থায় তাকে পাওয়া যায় তাকে। তখন থেকে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ যখন নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনি তখন দলের যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্বে ছিলেন। এরপর তাকে পদোন্নতি দিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হয়।

এই বিএনপি নেতাকে মেঘালয় রাজ্যে পাওয়ার পর দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ সালাহউদ্দিনকে উদ্ধারের পর সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করে এবং বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী তাকে গ্রেপ্তার দেখায়। একই বছরের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের দায়ে অভিযোগ গঠন করা হয়। প্রায় সাড়ে তিন বছর মামলার কার্যক্রম চলার পর ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে করা মামলায় আদালত নির্দোষ সাব্যস্ত করে খালাস দেন সালাহউদ্দিন আহমেদকে। ছয় মাস পরে আবার ভারত সরকার ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে।

আবারও প্রায় চার বছর সময়ক্ষেপণের পরে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় তিনি শিলং জজকোর্ট থেকে খালাস পান এবং তাকে দ্রুত সময়ে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। তবে পাসপোর্ট না থাকায় সালাহউদ্দিন আহমেদ পরে দেশে ফিরতে ট্রাভেল পারমিটের জন্য গৌহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে আবেদন করেন। পরে পাসপোর্টের বিকল্প হিসেবে গত বছরের জুনে হাইকমিশন থেকে তাকে তিন মাসের ট্রাভেল পাস দেওয়া হয়। তবে এই ট্রাভেল পাস দিয়ে তার ভারতের ইমিগ্রেশন পার হওয়া সম্ভব নয়। এদিকে আদালতের রায় সংযুক্ত করে মেঘালয় সরকার এ বিষয়ে গত বছরের ২৪ মার্চ দিল্লি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সালাহউদ্দিনকে দেশে ফেরত পাঠাতে ছাড়পত্রের জন্য চিঠি দিয়েছিল। এর আগে ২০১৮ সালে যখন ভারতের বিচারিক আদালত থেকে তিনি রায় পেয়েছিলেন, তখনও মেঘালয় সরকার এভাবে চিঠি দিয়েছিল। তবে তখনও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জবাব দেয়নি।

কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ পরবর্তী সময়ে সংগঠনের সহসভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। সপ্তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে বগুড়ায় কর্মরত থাকাবস্থায় তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে যোগ দেন। পরে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি কক্সবাজার-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। চারদলীয় জোট সরকারের যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একাধারে কক্সবাজার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবং দুবার নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। ২০১০ সালে দলের কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ২০১৬ সালের কাউন্সিলে তিনি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।

মানবকণ্ঠ/এসআরএস