Image description

শিগগিরই ঘোষণা করা হতে পারে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নতুন কমিটি। কমিটিতে কারা আসছেন, তা নিয়ে আলোচনা-গুঞ্জন চলছে। ঢাকা মহানগরের কাণ্ডারি হতে ইচ্ছুক, এমন অনেক নেতা ইতোমধ্যে বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। 

তবে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা জানান, এবার তারা কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য কমিটি চান। সুপার ফাইভে আলোচনায় রয়েছেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিলুপ্ত কমিটির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এম কফিল উদ্দিন। 

মহানগরের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, মহানগরের নেতৃত্বে সিনিয়র-জুনিয়র সমন্বয় থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। তারা আরো জানা, পদ বাণিজ্য’ এবং ‘মাইম্যান’ দিয়ে কমিটি গঠন করলে দলই আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এ বিষয়ে দক্ষিনখান থানা বিএনপির নেতা মো: সেলিম সরকার বলেন, আমরা এমন একটি কমিটি চাই যাদের নামে কোন অভিযোগ নেই, যারা দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে দাড়িয়েছে এমন ক্লিন ইমেজের। আশা করি আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের মনের মত কমিটিই দিবে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের একদলের, এক ব্যক্তির শাসন দেখেছি। বিএনপি আন্দোলন করেছে কিন্তু এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। বিএনপি এক ব্যক্তির শাসন দেখতে চায় না বলেই ২০১৭ সালে বেগম খালেদা জিয়া ভিশন ২০-৩০ জাতির সামনে তুলে ধরেছিল। এর ধারাবাহিকতায় তারেক রহমান একত্রিশ দফা ঘোষণা দিয়েছে । তাই তারেক রহমান অবশ্যই ত্যাগী যোগ্য ক্লিন ইমেজের কাউকেই দ্বায়িত্বে নিয়ে আসবেন বলে বিশ্বাস। 

সাবেক সদস্যসচিব আমিনুল হক বলেন,  ‘মহানগর উত্তর বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে জড়িত রয়েছি। এর আগেও সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেছি। নেতাকর্মীদের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে রয়েছি। সবসময়ই সততার সঙ্গে কাজ করেছি। আগামীতেও আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হলে তা শতভাগ নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে পালন করব। এ ক্ষেত্রে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাকেই স্বাগত জানাব।’

মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এম কফিল উদ্দিন বলেন, নেতাকর্মীদের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে রয়েছি সবসময়। সবসময়ই সততার সঙ্গে কাজ করেছি। আগামীতেও আমাকে দায়িত্ব দেয়া হলে তা শতভাগ নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে পালন করবো। 

তিনি আরও বলেন, বিগত সময়ে দলের প্রয়োজনে হাইকমান্ড যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা সবসময় সততার সঙ্গে পালন করার চেষ্টা করেছি এবং আজীবন করে যাব। এ ক্ষেত্রে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাকেই স্বাগত জানাব।’

জানা যায়, মাত্র আড়াই মাসের ব্যবধানে গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে বিএনপি। এর আগে গত ৭ জুলাই সাইফুল আলম নিরবকে আহ্বায়ক ও আমিনুল হককে সদস্য সচিব করে দুই সদস্যের এই আংশিক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, হাইকমান্ডের কাছে আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিভিন্ন অভিযোগ এসেছে। লিখিত এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই দল ব্যবস্থা নিয়েছে। 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিশৃঙ্খলা রোধ এবং সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ গ্রহণ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সারা দেশে দল ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের তিনশর অধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। কয়েকটি জেলা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির কমিটিও বিলুপ্ত করে হাইকমান্ড। দলটির একাধিক দায়িত্বশীল নেতার মতে, বিশৃঙ্খলা রোধে তারেক রহমানের এমন কঠোর অবস্থান দল ছাড়াও দেশের মানুষের কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।

সংগঠনকে গতিশীল এবং নেতৃত্বের বিকাশে ২০১৭ সালের এপ্রিলে ঢাকা মহানগর বিএনপিকে দুই ভাগে ভাগ করে কমিটি দেয়া হয়। উত্তরে এমএ কাইয়ূমকে সভাপতি এবং আহসানউল্লাহ হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এরপর ২০২১ সালের আগস্টে আমানউল্লাহ আমানকে আহ্বায়ক ও আমিনুল হককে সদস্য সচিব করে উত্তর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়।

এছাড়া সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন, যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এমএ কাইয়ূমও। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মামুন হাসান, মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এজিএম শামসুল হক, মোস্তফা জামান, আক্তার হোসেন, সাবেক সদস্য এবিএমএ রাজ্জাকের নামও শোনা যাচ্ছে।

বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নেতৃত্বের জন্য অনেক নেতাই আলোচনায় থাকলেও ‘ক্লিন ইমেজের’ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন সয়ং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই, দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়—এমন নেতাদের নেতৃত্বে আনতে কাজ করছেন দলের হাইকমান্ড।