খুব দ্রুতই ঘোষণা হতে যাচ্ছে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি'র কমিটি- এমন আলোচনা চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। কিন্তু ঘোষণা হয়নি এখনও। যদিও এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি জেলার কমিটি ঘোষণা করেছে দলটি। কিন্তু সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটির ঘোষণা না আসায় দলটির নেতাকর্মীদের প্রতীক্ষার প্রহর যেন শেষই হচ্ছে না। এদিকে, সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি’র নতুন কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা এখন তুঙ্গে। আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে দলের একাধিক নেতার নামও।
এর আগে ২৩ ডিসেম্বর জেলা বিএনপি’র ১৮টি ইউনিটির শীর্ষ নেতা-কর্মীদের নিয়ে কর্মী সমাবেশ করেছে বিএনপির
চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম। এ সমাবেশের পর থেকেই বেশ জোরেশোরে নতুন কমিটিতে কারা জায়গা পাবেন তা নিয়ে জেলা জুড়ে চলছে চুল ছেড়া বিশ্লেষণ। তবে দল ও নেতাকর্মীদের কাছে যাদের ক্লিন ইমেজ রয়েছে তাদেরই নতুন কমিটিতে প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে- এমন আলোচনা চলছে। জানা গেছে, নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে নানামুখী তৎপরতা ও তদবির করছে পদ-প্রত্যাশীরা৷ আবার যারা জেলা কেন্দ্রিক রাজনীতিতে যারা সক্রিয়, তারা নিজ নিজ বলয় থেকে নেতৃত্ব উঠিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগও রাখছেন তারা। আবার কেউ কেউ লন্ডনেও যোগাযোগ করছেন।
এদিকে জেলার এ শীর্ষ পদ ধরে রাখতে ঘাম ঝরাচ্ছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর সহধর্মিণী বর্তমান জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদ এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির নতুন কমিটির সম্ভাব্য নেতৃত্বের আলোচনায় আহ্বায়ক বা সভাপতি হিসেবে কেন্দ্রীয় তাঁতী দলের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির তাঁতী বিষয়ক সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন ইসলাম খান এবং সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব পদে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামানের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে।
এছাড়া জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ভিপি শ্রী অপর কৃষ্ণ দাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান রঞ্জন, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিরাজগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মোকাদ্দেস আলী, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র টিআর এম নূর-ই-আলম হেলাল খানের নামও আলোচনায় রয়েছে। তবে
সদস্য সচিব বা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন মির্জা মোস্তফা জামান।
দলীয় একটি সূত্র জানায়, সাংগঠনিকভাবে দল গোছানোর পাশাপাশি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে একটু কৌশলী পথে হাঁটছে বিএনপি। এ কৌশলের অংশ হিসেবে কমিটি পুনর্গঠনে দলের তরুণ প্রজন্মের ত্যাগী, পরীক্ষিত ও যোগ্য নেতাদের মূল্যায়নের চিন্তা-ভাবনা করছে দলের হাইকমান্ড। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীরা যদি আঁকড়ে থাকেন, তাহলে দল ও সরকার উভয়ের কাজে ব্যাহত হয়। তাই কমিটি পুনর্গঠনে অপেক্ষাকৃত ত্যাগী নেতাদের জেলা কমিটির শীর্ষ আসনে পদায়ন করা হচ্ছে। আবার যারা দলের আগামী নির্বাচনে এমপি প্রার্থী, তাদের ছোট পদে বা পদেই রাখছেনা দলটি। এই কৌশলে বিগত ১৬ বছরের ত্যাগী ও পরীক্ষিত সব নেতার মূল্যায়নের চেষ্টা চলছে। যাতে দলের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিদের একক আধিপত্য দূর হয়।
জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা জেলা বিএনপিতে এমন নেতা চাই যিনি কর্মীদের ভালোবাসবেন, সুখ দুঃখে পাশে থাকবেন। শুধু পদ নিয়ে নিজের পকেট ভরবেন- এমন নেতা বিএনপির তৃণমূল চায় না।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার আব্দুল মমিন নামের এক বিএনপির কর্মী বলেন, দলের নেতাকর্মীরা দীর্ঘ ১৬ বছর জেলজুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এখন আমরা চাই নতুন ক্লিন ইমেজের রাজনীতি, যিনি মামলা হামলায় নেতাকর্মীর খোঁজ ও সুখ দুঃখে পাশে ছিলেন। তবে হাইব্রিড নেতা দিয়ে যেন কমিটি না হয় সেটা তিনি প্রত্যাশা করেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাকে যোগ্য বলে মনে করবেন, তাকেই দায়িত্ব দিবেন। আমাকে পুনরায় দায়িত্ব দিলে আমি যথাযথভাবে পালন করব। তবে এই কমিটিতে কোনো সুবিধাবাদী নেতাদের স্থান হবে না এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহিন শওকত বলেন, অল্প কিছু দিনের মধ্যে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি কেন্দ্র ঘোষণা করবেন। এতে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত মোতাবেক ত্যাগী, পরীক্ষিত ও যোগ্য নেতারাই স্থান পাবে বলে তিনি জানান।
মানবকণ্ঠ/এসআর
Comments