Image description

গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বর্তমান বাংলাদেশের চলমান রাজনীতিতে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তা সমাধানের একমাত্র পথ হচ্ছে রাজনৈতিক ঐক্য। এই ঐক্যের ভিত্তি হচ্ছে, আমাদের জাতীয় চেতনা, যা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, বাহাত্তরের সংবিধান এবং চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা।

রোববার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে বলেও তিনি সতর্ক করেন।

গণফোরামের জাতীয় কাউন্সিল-২০২৪ পরবর্তী পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা ও সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে কামাল হোসেনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সভাপতি পরিষদের সদস্য আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী ৷

লিখিত বক্তব্যে কামাল হোসেন বলেন, সময়ের প্রয়োজনে আকাঙ্ক্ষা পূরণে সংবিধান সংশোধন বা যুগোপযোগী করা রাষ্ট্রের জন্য চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের অর্জিত ও মীমাংসিত বিষয়গুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হলে তা আমাদের অগ্রসরমাণ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বাধাগ্রস্ত করবে। এ ব্যাপারে আমাদের সকলের দায়িত্বশীল হওয়া কর্তব্য।

এর আগে ড. কামাল হোসেন তার স্বাগত ভাষণে বলেন, আমরা সারাজীবন ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেছি। জনগণের ঐক্যের বিরুদ্ধে তারা সব সময় ষড়যন্ত্র চালিয়ে যায়। ভালো কাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের আভাস সব সময়ই থাকে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেই এই সব মোকাবিলা করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, জনগণের ঐক্যকে সংহত করেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে। জনগণকে নিয়েই আমাদের সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। দুর্নীতি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে দলের সভাপতি মোস্তফা মহসিন মন্টু প্রশ্ন রাখেন, বাহাত্তরের সংবিধানের কবর রচনার কথা যারা বলছে তারা কি বুঝে বলছে, নাকি না বুঝে বলছে? বাহাত্তরের সংবিধান ৩০ লাখ শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সংবিধান। সংবিধান নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারে না। এতে সংবিধানের সংকট না, যারা অপব্যবহার করেছে তাদের সংকট। সংবিধান নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধ, রাষ্ট্র সংবিধান নিয়ে বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করছে তাদের এমন বিষয় থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

এ পরিস্থিতিতে জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যেতে না পারলে ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান বিফলে যাবে বলে মন্তব্য করেন মন্টু।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন—গণফোরামের সভাপতি পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট এস এম আলতাফ হোসেন, সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ কে এম জুগলুল হায়দার আফ্রিক, অ্যাডভোকেট সুরাইয়া বেগম, কোষাধ্যক্ষ শাহ নূরুজ্জামান প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে দলের নবগঠিত কমিটি ঘোষণা করা হয়। নবগঠিত কমিটিতে মোস্তফা মহসিন মন্টুকে সভাপতি ও ডা. মো. মিজানুর রহমানকে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ২০ সদস্য বিশিষ্ট সভাপতি পরিষদ ও ১০ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেছে দলটি।

কমিটি ঘোষণা শেষে দলটির সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মিজানুর রহমান বলেন, আন্দোলনে যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল সেখানে আবারো অনৈক্য দেখা দিয়েছে। আমরা একাত্তরে একটি রাষ্ট্র নির্মাণ করেছিলাম আর ২৪-এ আমরা স্বৈরাচার উৎখাত করেছি। কিন্তু আজকে দেখতে পাচ্ছি, বাহাত্তরের সংবিধান কিংবা মুক্তিযুদ্ধের মতো মীমাংসিত ইস্যুগুলো আবারো সামনে আনা হচ্ছে। সংবিধান পরিবর্তন করা যাবে না তা নয়। কিন্তু বাহাত্তরের সংবিধানের কবর রচনা করা হবে—এমন অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্যের দ্বারা বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না।

মানবকণ্ঠ/এসআরএস