Image description

সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের উল্লেখ করে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, বাংলাদেশিদের একটা লাশ পড়লে ওপারের দুইটা লাশ ফেলতে হবে। শনিবার দুপুরে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা মাল্টিপারপাস অডিটরিয়াম হলরুমে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকের প্রশ্নে এ কথা বলেন তিনি।

’২৪–এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণে এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এসময় সীমান্তের বাংলাদেশি নাগরিকদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান নুর। 

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, ‘ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বলে দিতে চাই, আপনারা শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর যে খেলা শুরু করেছেন, সেটা বন্ধ করুন। অন্যথায় আপনাদের জন্য সেটা শুভ হবে না। সরকারকে অনুরোধ জানাব সীমান্তবর্তী মানুষকে সামরিক ট্রেনিং দিন, প্রয়োজনে বিজিবিদের সঙ্গে তারাও কাজ করবে। তবুও ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের দেশের একটা লাশ পড়লে ওপারের দুইটা লাশ ফেলাতে হবে।’

নুর আরও বলেন, ‘আজকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের সঙ্গে ‘‘গোলাগুলি’’ হয়েছে। আমাদের বিভিন্ন সীমান্তে তারা কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার অপচেষ্টা করেছে। আমাদের কিছু ভূমি দখলের পাঁয়তারা করছে তারা। কারণ শেখ হাসিনা সরকার অনেক ক্ষেত্রে তাদের সুযোগ করে দিয়েছিল। কিন্তু আমাদের পরিষ্কার বার্তা, আমরা বেঁচে থাকতে, এই দেশের ১৮ কোটি মানুষ এই দেশের ১ ইঞ্চি জমিও ভারতকে দখল করতে দেবে না।’

নুরুল হক নুর বলেন, ‘যে ফ্যাসিস্ট সরকার গণ-অভ্যুত্থানে এতগুলো মানুষকে হত্যা করে রাজপথে রক্ত ঝরিয়েছে, গুলি করেছে এবং বাংলাদেশের মতো স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রকে বিদেশি তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছে; সেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার নৈতিক ভিত্তি ও নৈতিক অধিকার নেই। এ দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের কবর রচনা হয়েছে।’

নুরুল হক বলেন, ‘সরকার শতাধিক পণ্যে কর এবং শুল্ক বাড়িয়েছে। টিস্যুতে, ওষুধ, রেস্টুরেন্টে, মোবাইলের কথা বলবেন সেখানেও ভ্যাট–ট্যাক্স বাড়িয়ে দিয়েছে। শুল্ক ও কর বাড়ার এই গণবিরোধী সিদ্ধান্ত মানুষের জন্য আরও ভোগান্তি হবে। এমনিতে মানুষের হাতে টাকা নেই, দেশের বিনিয়োগ নেই, নতুন কর্মসংস্থান নেই, এই আন্দোলন সংগ্রামে বিভিন্ন শিল্প খাতে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন সরকার মানুষকে কীভাবে স্বস্তি দেবে, কীভাবে মানুষের এই কষ্টে আগুন নেভানোর জন্য পানি ঢেলে দেবে, সেইটা না করে সরকার পেট্রোল ঢেলে দিয়েছে।’

কিছুদিন পর মানুষ প্রতিক্রিয়া দেখাবে উল্লেখ করে নুরুল হক নুর বলেন, ‘সরকার যা ইচ্ছা তাই করবে, গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নেবে আমরা সেটাকে সমর্থন দেব না।’

স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে নুর বলেন, ‘আজকে একটা প্রথম সারির পত্রিকায় পড়েছিলাম দেশের ৬৫ ভাগ মানুষ জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন চায়। আমরাও দলের পক্ষ থেকে বলেছি জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি স্থানীয় নির্বাচন দেওয়া হয় তাহলে মানুষের মধ্যে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে। মানুষের রাজনৈতিক সম্পর্কে একটা ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। কিন্তু নির্বাচিত রাজনৈতিক দল এককভাবে সরকার গঠন করে তখন তারা স্থানীয় নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করবে।’

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আইনি, রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সকল বৈধতাদানের জন্য একটি ঘোষণাপত্র প্রয়োজন ছিল উল্লেখ করে নুরুল হক নুর বলেন, ‘বিগত দেড় দশকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের যে দুঃশাসন সেটা কার্যত বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে একটি সংকটে ফেলেছিল। যার ফলে এই গণ-অভ্যুত্থান অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। এই গণ-অভ্যুত্থানের আইনি, রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সকল বৈধতাদানের জন্য একটি ঘোষণাপত্র প্রয়োজন।’

গণঅধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির উচ্চতর পরিষদ ও রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সমন্বয়ক হানিফ খান সজিবের সভাপতিত্বে ও গণঅধিকার পরিষদ রংপুর জেলার সাবেক ভারপ্রাপ্ত শেরে খোদা আসাদুল্লাহর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন গণঅধিকার পরিষদ রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা মোন্নাফ, রংপুর বিভাগীয় সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক ইব্রাহিম খোকন, কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য হাজী মো. কামাল হোসেন, আমিনুল ইসলাম, ছাত্র অধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, যুব অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এরশাদুল হক, ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মামুনুর রশিদ, ছাত্র অধিকার পরিষদের রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম শিশির প্রমুখ।