Image description

বাংলাদেশ রেলওয়েতে নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতির অভিযোগ নতুন কিছু নয়। সোনার হরিণের মতো এ চাকরি পেতে টাকার ব্যাগ নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করেন অনেক চাকরিপ্রার্থীই। এবার ৮০৬ সিপাহী নিয়োগ নিয়ে ফের বাণিজ্যের শঙ্কা দেখা দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে। আর নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে এই শঙ্কার মূলে রয়েছেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের এক কর্মকর্তা, অনিয়মের অভিযোগে যিনি দুদকের মামলা বয়ে বেড়াচ্ছেন আগে থেকেই।  
গত বছরের ২৮ আগস্ট রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীতে ১৮৫ সিপাহি নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক, চিফ কমান্ড্যান্টসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলার আসামিরা হলেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ ফারুক আহমেদ (৬০), রেলওয়ে পূর্বঞ্চলের নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ কমান্ড্যান্ট মো. জহিরুল ইসলাম ভুঁইয়া (৫১), রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ কমান্ড্যান্ট মো. আশাবুল ইসলাম (৩৯), রাজশাহী সদরের সাবেক কমান্ড্যান্ট, ফুয়াদ হাসান পরাগ (৩৩) ও সাবেক এসপিও (পূর্ব) মো. সিরাজ উল্লাহ (৬০)। 
এখন প্রশ্ন উঠেছে, নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে মামলা হওয়া সত্ত্বেও পূর্বাঞ্চলের সেই চিফ কমান্ড্যান্ট জহিরুল ইসলাম আবার হয়ে গেলেন ৮০৬ জন সিপাহি নিয়োগ কমিটির প্রধান। জানা যায়, গত ৩০ জুন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-১ অধিশাখার উপসচিব মো. তৌফিক ইমাম স্বাক্ষরিত আদেশে এই নিয়োগ কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। অথচ আগামী ৩০ মার্চ পূর্বাঞ্চলের এই চিফ কমান্ড্যান্টের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা ১৮৫ সিপাহি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় হাজিরার দিন ধার্য রয়েছে। ওইদিন মামলার চার্জশিট দেওয়ার সম্ভাবনাও আছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে দুদকের ওই মামলার এজাহারে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর ১৮৫ সিপাহি নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে ছিলেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের তৎকালীন নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান ইকবাল হোসেন। যিনি ২০২১ সালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কমিটিতে কমান্ড্যান্ট আশাবুল ইসলাম সদস্য সচিব ও কমান্ড্যান্ট জহিরুল ইসলাম, এসপিও সিরাজুল্লাহ, কমান্ড্যান্ট ফুয়াদ হাসান পরাগকে সদস্য করা হয়। 
পরের বছর ২০১৮ সালে চট্টগ্রামের আরএনবির ট্রেনিং একাডেমি ও রাজশাহীতে মৌখিক ও শারীরিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। মৌখিক ও শারীরিক পরীক্ষায় তাদেরই উত্তীর্ণ দেখানো হয়, যারা ৬-৭ লাখ টাকা দিতে পেরেছেন। ওই সময় নিয়োগ পাওয়া পাঁচজন সিপাহির সঙ্গে কথা হয়। এর মধ্যে দুজন চট্টগ্রামের, অন্যরা রাজশাহী অঞ্চলের। এদের মধ্যে চট্টগ্রামের দুজন ৬ লাখ টাকা, অন্য তিনজন সাড়ে ৬ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়োগ থেকে পাওয়া ঘুষের ১৩ কোটি টাকা রেলের শ্রমিক নেতা ও কমিটিতে থাকা লোকজন ভাগাভাগি করে নেন। এর মধ্যে বেশিরভাগ টাকা নেন কমিটির আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন। 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আগামী মার্চ মাসের শেষের দিকে দুদকের মামলার হাজিরার কথা রয়েছে বলে স্বীকার করেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আরএনবি চিফ কমান্ড্যান্ট জহিরুল ইসলাম ভুঁইয়া। তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে ১৮৫ সিপাহি নিয়োগে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি। এরপরও দুদকের চট্টগ্রাম অঞ্চলের এক কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্ত করছিলেন। কিন্তু সেই তদন্ত চলাকালেই দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক সিরাজুল হক স্বপ্রণোদিত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।’ 
নিয়োগ কমিটিতে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় আমাকে নিয়োগ করে আস্থা রেখেছে। এখনও সিপাহি নিয়োগের এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়নি। এরই মধ্যে একটি পক্ষ এই নিয়োগ কমিটি থেকে আমাকে সরাতে চায়। 
এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম জাহাঙ্গীর হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, নিয়োগ কমিটি করেছে মন্ত্রণালয়। তাই যাদের নিয়োগ কমিটিতে রাখা হয়েছে, তাদের বিষয়ে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দেবে। পরে এ বিষয়ে জানতে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবিরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।