টানা তাপপ্রবাহের পর গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি হয় চট্টগ্রামে। এতে যে শুধু তাপপ্রবাহ কমেছে তা-ই নয়, কমেছে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির লবণাক্ততাও। এ ছাড়া শুকিয়ে যাওয়া কাপ্তাই লেকেও পানি জমেছে কিছুটা। সে সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে কার্পজাতীয় মা মাছ নমুনা ডিমও ছেড়েছে। তবে এই বৃষ্টিতে উঁকি দিচ্ছে প্রাণঘাতী ডেঙ্গু।
এই বৃষ্টির পর গত বুধবার চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের এক প্রতিবেদনে ডেঙ্গু ভয়াবহতার বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়। এতে বলা হয়, বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। এ সময় ২৪ ঘণ্টার হিসাবে, চট্টগ্রাম মহানগরে ১১৪ জন এবং উপজেলা পর্যায়ে ২০৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর তথ্য প্রকাশ করেন সিভিল সার্জন।
একইভাবে গত বৃহস্পতিবার সিভিল সার্জনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ওইদিন থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম মহানগরে ১১৮ জন এবং উপজেলা পর্যায়ে ২০৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। একইভাবে সর্বশেষ শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রাম মহানগরে ১২১ জন এবং উপজেলা পর্যায়ে ২১৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন।
সর্বশেষ প্রতিবেদনের হিসাব অনুযায়ী, আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগীর ৭৭ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে এবং ১২ জন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অন্যান্য হাসপাতালে ৩২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৪২ জন ভর্তি হয়েছেন পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। আর আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৯, মিরসরাইয়ে ১৬, সীতাকু-ে ৫, সন্দ্বীপে ১, ফটিকছড়িতে ২২, হাটহাজারীতে ৭, রাউজানে ৭, বোয়ালখালীতে ২২, কর্ণফুলীতে ১০, চন্দনাইশে ২৮, সাতকানিয়ায় ১৩ ও লোহাগাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন।
আর এই তিন দিনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ নগরে ৩৩৩ জন এবং উপজেলা পর্যায়ে ৬২৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন, যা উদ্বেগজনক হিসেবে বিবেচিত বলে মন্তব্য করেন চট্টগ্রাম জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক শেখ ফজলে রাব্বি।
তিনি বলেন, এখনও মে মাস। বৃষ্টি হওয়ায় ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছে। তবে জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে। এটা একটি প্রাণঘাতী ভাইরাস রোগ। সচেতন হলে এটি প্রতিরোধ করা যায়। এ জন্য আমাদের প্রথম দরকার ঘর-বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখা। এডিস মশা যেহেতু স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে তাই বাসার ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোসা কিংবা পরিত্যক্ত টায়ার থাকলে সেগুলো দ্রুত সরিয়ে ফেলা।
তিনি বলেন. আমাদের লক্ষ রাখতে হবে যেন বাথরুমে বা অন্য কোথাও পাঁচ দিনের বেশি পানি জমানো অবস্থায় না থাকে। এ ছাড়া ঘুমানোর আগে মশারি টাঙিয়ে নিতে হবে। কারও জ্বর হলে অবশ্যই ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। অবস্থা বেশি সিরিয়াস হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মশা প্রতিরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এডিস মশা যাতে বংশ বিস্তার করতে না পারে সে হিসেবে চসিক নগরীর নালা-নর্দমা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চালাচ্ছে। একই সঙ্গে মশক নিধনে প্রয়োজনীয় ওষুধ ছিটানো জোরদার করা হয়েছে।
Comments