Image description

আমরা বলি বটে, সময়ই সবকিছু ঠিক করে দেয়। তবে কখনো কখনো বেহুদা, বেঠিক পথেও চালিত করে। চলতে বাধ্য করে। ঠিক-বেঠিকের ঘেরাটোপে ঘুরতে ঘুরতে হাপসে গিয়ে, সে এসে দাঁড়ায় ক্লান্তির বারান্দায়। শ্রান্তিকে পাশ কাটিয়ে অজাত শত্রুর মতো যে হাসে মিটিমিটি— তার নামই ‘সময়’। সসীমকে তোয়াক্কা না করা, একরোখা সুকুমার শয়তান। এর আঁচলে বাঁধা পড়ে রহস্য মানবের তকমা নিয়ে পাঁচ বছর আগে বিদায় নিয়েছেন, আধুনিক বাংলা কবিতার এক দ্যুতিদীপ্ত কবি ‘আল মাহমুদ’। 

১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোরাইল গ্রামে জন্ম নেয়া মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ স্রেফ কবিতার টানে, কবি হওয়ার বাসনা থেকে রাখালের হাত ছেড়ে রাষ্ট্রের রাজধানী ঢাকায় এসেছিলেন। তার ভাষ্যে—‘আমি ঢাকায় এসেছিলাম খদ্দরের পিরহান গায়ে, পরনে খদ্দরের পাজামা, পায়ে রাবারের স্যান্ডেল এবং বগলের নিচে গোলাপফুল আঁকা ভাঙা ছুটকেস নিয়ে। আমি আমার ছুটকেসে নিয়ে এসেছিলাম বাংলাদেশের সবগুলো নদী, পাখি, পতঙ্গ, নৌকা, নর-নারীসহ বহমান আস্ত এক বাংলাদেশ।’ 

বাংলা কবিতার নিঃসঙ্গ এক শেরপা ‘আল মাহমুদ’ যার কাব্যের অনন্ত নীলিমাজুড়ে আমরা শুনতে পাই সত্যিই হাজারো পাখির কলতান। যাদের ডানার সঞ্চার দেখেই বোঝা যায়, অই উঁচু উঁচু মগডাল ছেড়ে তারা যেতে চায়— ছন্দের ঢেউয়ে ভেসে, কাহিনির উঠোন পেরিয়ে আনোখা আকাশের ওপারে। কবিতায় তার বোধের পরিশোষণ, আলঙ্কারিক চাতুর্য, কৃত্-কৌশল, লোকজ ও লোকায়ত জীবনের আচার, বাহার। শহুরে প্রবণতার মধ্যেই হুটহাট ঢেলে দেন ভাটি অঞ্চলের ভয়াল দর্শন। যে দেখায় ছলকে ওঠে গ্রামীণ আবহ। নদীনির্ভর জনপদ। সেই সাথে বাংলার চিরন্তন প্রেম-বিরহের অপূর্ব আখ্যানমালা। আল মাহমুদ তার সুচারু বাগ্মিতায় এখানেই জ্যোতিষ্ক-সমান। 

১৯৬৩ সালে এই কবি কবিতার জননমূলে নিজের ভাবনার ওপর ভরসা করে মেধার মোড়কে মুড়ে অনুধাবনী সরলরেখাটি যথাসাধ্য সাহসের সাথে প্রোথিত করেছেন তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘লোক লোকান্তর’-এ। যা তাকে এক খাবলায় তুলে এনে বসিয়েছিল স্বনামধন্য কবিদের সারিতে। সাহিত্যে, বিশেষত কবিতায় পাঠকপ্রিয়তার অর্থই হলো— পাঠকের সাথে কবির কবিতার পরিপূর্ণ যোগাযোগ স্থাপিত হওয়া। আর এ সংযোগ স্থাপিত হয় কবিতার মধ্যে সৃষ্ট সংবেদনশীলতার মাধ্যমে; যা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়গ্রাগ্য হয়ে শীতল সরের মতো পাঠকের শরীরে, মনে, মগজে প্রলেপের মতো পুরু হতে থাকে। সে চকিতে চমকে ওঠে। আবেগে আপ্লুত, আনন্দে আন্দোলিত হয়। 

১৯৬৩ থেকে ১৯৬৬। চমকের পর চমক। বারুদের মতো তপ্ত, বিষের মতো বাকহারা, আল মাহমুদ একের পর এক উপহার দিয়েছেন, সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা কবিতায় অপর জাতের কবিতার সন্ধান দিয়ে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা পেয়েছি ‘কালের কলস’ ‘সোনালি কাবিন’। বলি, আর কী চাই? কবিতাই অস্তিত্ব ধারণের সারাত্সার, যেখানে কবিতাই বিশ্ববিধানের চরমতম সার্থকতা, সেখানে আল মাহমুদের আলোচ্য কাব্যগ্রন্থগুলো পাঠান্তে তাকে অসার্থক বলি কোন সাহসে! কেননা লাজেরও তো লজ্জা আছে। এ কথা সত্যি, সঞ্চার-স্পৃশ্যতা ও সংবেদ-পাচ্যতা কবিতাকে তিরের মতো পাঠকের হূদয়ে বিদ্ধ করে মাটিতে নামায় ঘন ছায়ার স্বরূপে। তখন হঠাৎই মিশে যায় রোদ। প্রকৃতির প্রলয়ে পাল্লা দিয়ে থিতু হয় সময়। 

সত্যিকারেই সম্মোহিত করার মতো সুরের সুগন্ধ ধেয়ে এসেছিল আল মাহমুদের কবিতায়। বিশেষ করে ‘সোনালি কাবিন’-এ তার উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল অবধারিতের মতো। এখানে মাহমুদের কবিতা নতুন করে ভাবায়, দোল দেয়। 

‘ভালোবাসা দাও যদি, আমি দেব আমার চুম্বন, 
ছলনা জানি না বলে আর কোনো ব্যবসা শিখিনি; 
দেহ দিলে দেহ পাবে, দেহের অধিক মূলধন? 
আমার তো নেই সখী যেই পণ্যে অলংকার কিনি।’ 

আমরা জানি কবিতার মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি করা কবির অন্যতম উদ্দেশ্য। এই কৌতূহল অকিঞ্চিত্কর হলেও অতীব বিস্ময়কর কোনো কিছু উন্মোচনের প্রণোদনা দিয়ে থাকে। বিস্ময়— তা সে যে অর্থেই হোক, কবিতার জন্য অপার সৌন্দর্যের আধার। মাহমুদের ‘সোনালি কাবিন’ পড়ে বিস্ময়ে বিস্মিত হতে হয়। চেনা-অচেনা আবেগ এখানে মিলেমিশে একাকার। প্রেমের পরশমাখা বাক্যের আনাচে-কানাচে পড়ে আছে কত না থর থর কম্পমান ভয়। আবেগের আসমানি রং। মান-অভিমানের মর্মভেদী মদিরায় ভরা কাহিনির কলতান। কবি আল মাহমুদের এ যেন এক অন্তর পোড়ানো আর্তনাদ। স্তব্ধ রাত্রিতেও উৎসব ফেরতা নিভৃত বাঁশির সুরে জেগে ওঠে অনাবশ্যক রাখালের গ্রাম। সফেদ কুয়াশাকে ভেদ করে নেমে আসে অচেনা নারীর হাত। কণ্ঠ চিনে, দস্যুতা নয়; কাব্যের কুহকজালে মাহমুদ তাদের ডেকে নিয়ে যান উত্তরাধিকার ও ঐতিহ্যের নিরঙ্কুশ সততা দিয়ে। 

একজন কবি, যিনি তার উপলব্ধির অঢেল ঐশ্বর্যের আরক রসে জারিত করে তৃণমূল পাঠক তথা মানুষের কাছে দেশকে, মাটিকে, আলাভোলা পথের পথিককে, চেনা-অচেনার ফাঁদ থেকে, জগতের সকল ধ্রুম্রতাকে ধরাশায়ী করে স্পষ্ট ও দৃশ্যতর করে তুলবেন, যার প্রেরণায় আউলা অক্সিজেনে ভর করে বাঁচার মন্ত্র পাব আমরা। কত কত অভিজ্ঞতার অভিঘাত ছিটকে এসে মরচে পড়া বোধকে শাণিত করবে। তিনিই তো বিলাবেন বোধির অমৃত প্রসাদ—এ চাওয়া কি একজন কবির কাছে অনেকটা? আমি বলব, এটা প্রত্যাশিত। এই সূত্রে আল মাহমুদ কিন্তু বিপুল অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন আমাদের। 

কবিমাত্রই স্বপ্নপ্রবণ ও সৌন্দর্য সচেতন। কাব্যসাধনার সরল শামিয়ানার নিচে মাহমুদ থরে থরে বিছিয়েছেন তার প্রকৃতিপ্রেম, নিসর্গপ্রীতি, নারীপ্রেম এবং অতি অবশ্যই মানবতাবাদী চেতনার চারুকারুময় মুক্তাদানা। তিনি উচ্চারণ করেন: 

‘কবিতা তো ছেচল্লিশে বেড়ে ওঠা অসুখী কিশোর 
ইস্কুল পালানো সভা, স্বাধীনতা, মিছিল নিশান।’ 

কোনো দ্বন্দ্ব নয়, বিশ্বাসের বাতাসে পরাজিত মানুষের পক্ষে তার এই তাগাদা স্বাধীনতা অনুভবের নতুন এক সিগনেচার। খাঁটি বাংলার বিক্ষিপ্ত উপাদানগুলো মাহমুদ একত্রিত করেছেন, প্রকাশ করেছেন তার কবিতায়। দিনের পরে দিন চলে গেছে, চেতনাকে তুঙ্গে তুলে তাদের অসংলগ্ন বালির মতো উড়িয়ে দিয়েছেন অসীম শূন্যে, এই আশায়— একদিন তারা ঝুরঝুর করে ঝরে পড়বে, বাক্য-বন্ধনীর অবয়ব নিয়ে গঠিত হবে রহস্যতাড়িত বাংলা কবিতায়। 

এখন প্রশ্ন হলো— তাকে নিয়ে, এই যে বাঁকা চোখের আস্ফাালন। পড়ন্ত বেলায় হৃৎপিণ্ডের পীড়ন, আমাদের স্তম্ভিত করে, হতবুদ্ধি করে। স্বামী পরিত্যক্তার ব্যালোট গলায় ঝুলিয়ে হেঁটে যায় যে অপরূপ সুন্দরী, পুরুষ মাত্রই আমরা কি তা দেখব না? ফালসা গাছের আড়াল থেকে লুকিয়ে-চুবিয়ে; কতটুকু আলতায় রঞ্জিত তার পা’খানি! বলি— এ দেখায় কলঙ্ক নেই। এ অনেকটা অশিক্ষিতের অব্যক্ত বেদনার মতো; বাম পাশে হাত রেখে অনুভব করে বুকের ডানদিকে মায়াবী এক চিন চিন ব্যথা। 

আমাদের চোখে পড়ে না, এত সামান্য, এত সহজ আর ঠিক সেখানেই আল মাহমুদ দেশজ সংস্কৃতির অপার সম্ভার সাজিয়ে, লোকায়ত বিশ্বাসের সাথে আধুনিকতার এক মহান মেলবন্ধন তৈরি করেছেন। নেতৃত্বে তিনি সাজিয়ে রেখেছেন তার নিজস্ব কমপোজিশনের শ্যাওলায় মোড়ানো সবুজ ঘুঁটিগুলো। যা উদ্ধারে নাগালের বাইরে গিয়ে নয়, নয় কোনো কামুফ্লাজের আশ্রয়ে, বরং এখানে তার নৌকা ভেসে যায় তর তর করে চিরচেনা বাঙালি রমণীর জন্ম-অজন্মের দিকে। 

‘সোনালি কাবিন’-এ আল মাহমুদ সত্যিই বিধৃত করেছেন এদেশের অপার নৈসর্গিক সৌন্দর্য-মহিমা এবং নারীর রূপ। বিশ্বমাতৃসুধার স্নিগ্ধতায় সরল সাঁকোর মতো একে অন্যের সাথে জুড়ে দিয়েছে যা। কবিতায় তার প্রতিধ্বনিত হয়েছে বাঙালির আবহমানকালের ইতিহাস। লাল মেঘের মধ্যে যে মাঝি গুণ টেনে চলেছেন, তিনিই আল মাহমুদ। নারীর উষ্ণ প্রেমে কখনো তিনি উন্মত্ত শবর, কখনো বা নিছক আলাভোলা কবি। 

বাংলার হাজার বছরের শোষণের সুপ্ত থাবাকে কবিতার মন্ত্র দিয়ে তিনি চিরতরে বিলীন করতে চেয়েছেন। যেখানে প্রকৃত দ্রষ্টার মতো সর্বসাধারণের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাহমুদ বলতে চান— এসো, আমাকেও করো কাতারবন্দি। অলস দুপুরে রেইন ট্রির তলায় শুয়ে শুয়ে আমরা যে পিঁপড়েদের যাওয়া-আসা দেখি, আপাত মনে হতে পারে এ যাওয়া, এ আসা একহারা। তাই কি? হয়তো নয়। খুব খুঁটে খুঁটে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়— এখানেও আছে দুঃখ, জরা, সুখ কিংবা শোকের স্রোতধারা। কেননা যে কবি উচ্চারণ করতে পারেন— 

‘একমাত্র কবিতাই দিতে পারে মানুষের আত্মার 
সতেজ সবুজ খাদ্য আর না চাইতেই ভরগ্লাস ডাবের সিরাপ।’ 

সেই কবি আল মাহমুদ শব্দ, উপমা, উেপ্রক্ষা তথা বিষয়বস্তুতে এক হেঁচকায় আমূল বদলে দিলেন, গেলেন। দুঃসাহসিক প্রথাভাঙা বাংলাকাব্যে এমনই মোচড় দিলেন, তাতে করে আমরা কী হইনি বিপন্ন, ক্ষত-বিক্ষত কিছুটা হলেও? তার ‘আরব্য রজনীর রাজহাঁস’ ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’ ‘অদৃষ্টবাদীদের রান্না-বান্না’ ‘মায়াবী পর্দা দুলে উঠো’ এক কথায় অচেনা আর্তনাদের ভয়াবহ রূপ। মাথা নিচু করে বেশ্যাকে প্রণাম করলে অজান্তেই তিনি যেমন থ মেরে যান, আল মাহমুদের কাব্যচেলাও বিশ্বাসের দ্বৈতসত্তায় দুলেছেন। জানি, এ এক প্রখর ধাক্কা বটে। বস্তুকে বাদ দিয়ে অলৌকিকতাকে পরম আধেয় ধরে আল মাহমুদের পরবর্তী উত্থান দিশাহীন দশার মধ্যে দিয়ে ধাবিত হয়েছেন। মাহমুদ কি তাতে করে পরাজিত বা বিকলাঙ্গ হয়ে গেছেন? এই প্রশ্নে যে যার কালিতে উত্তর দিয়েছেন, বাট কলমটা সেই একই। 

তবে আল মাহমুদ নিজেই বলেছেন ‘বাংলাদেশের প্রকৃতি, নদী, খাল-বিল, এই কামার-কুমার, জেলে— এই যে একটা স্থানিক সৌন্দর্য, কৃষক পরিবার থেকে আসা। শেকড়টা রয়ে গেছে গ্রামে। এগুলো যেমন আমার কাব্যে এসেছে তেমনি মুসলিম পরিবার বা সমাজে খুব ঘোরাঘুরি করত, যেমন: ‘কাবিন’ একটি শব্দ। ভয়ে কেউ ব্যবহার করতে চায়নি, অথচ কী মিষ্টি আর আধুনিক শব্দ। ডিমকে আন্ডা, কলসকে ঠিলা। ফলে, কবিতা হলো বৈচিত্র্যপূর্ণ।’ 

এ কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলা কবিতায় আল মাহমুদ সত্যিই এক মাইলস্টোন। যাকে স্পর্শ না করে, মুখ ঘুরিয়ে চলে যাওয়া নান্দনিক অর্থে কোনো কাব্য-মাস্তানের পক্ষেও সম্ভব নয়। দিন যাবে, যুগের পরে আছড়ে পড়বে নতুন যুগের কবি। দলে, উপদলে, নয়া উপনিবেশের ধ্যান-ধারণার সাথে হাত মেলাবে প্রকৃত আধুনিকতার চেতনা। বুর্জোয়ারাই বা থেমে থাকবে কেন? রক্তাক্ত চোখে সরল সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত হবে উপ, অপ-এর জটিল আর জং-ধরা রাজনীতি। টুইস্টের পর টুইস্ট। শ্লীল আর অশ্লীলের বিভাজন কষতেই কেটে যাবে সারটা জীবন। 

বসন্তের বসন পরে দূর গ্রামে পলাশের প্যাশনে তীব্র যে জন— নর কিংবা নারী, পাণ্ডিত্যের ভোঁতা ছুরি ফেলে সে পড়বে ‘সোনালি কাবিন’ মৃদুমন্দ মোমের আলোতে। সত্যের সিঁড়ি বেয়ে ব্যক্তি আল মাহমুদ কোথায় কতখানি টিকে থাকবেন, সে চিন্তা ব্যক্তিরা করুক। জাতির তাতে যাবে আসবে না কিছুই। তবে অই যে দূরে এলাচ বন, যেখানে একটি গানই বেজে বেজে ঢুকে যাচ্ছে শিরার ভেতরে, যে শুনছে, যে হাঁটছে, সে হবে গন্ধবণিক। ভোরের বাতাসে রিমঝিম চুড়ির শব্দে যে রুমাল ছড়িয়ে দিল এইমাত্র দিগন্তে কেউ, সে জানে পাণ্ডিত্য নয়, মৌলিকতাই হলো কবির প্রধান অস্ত্র। দুলে দুলে, উড়ে উড়ে, দেশ থেকে দেশান্তরে চলে যাচ্ছে এলাচের গন্ধমাখা রুমালটি। 

জানি কেউ নয়, আল মাহমুদ একদিন আপনিই পাবেন। ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষয়ে যাবে, ছিঁড়ে যাবে। রং হবে তামাটে। পড়েন— এর সুতো পড়বে খসে। তবু এই রুমালটি সযত্নে রেখে, আনোখা নারীর জন্য না হয় পাঠাবেন একখানা চিঠি। তাতে লেখা থাকবে— ‘বিনয়ের সাথে বলছি, আমি বন্ধুত্ব কামনা করি না কারো। আধুুনিক মানুষ বলে নিজেকে দাবি করি। আধুনিক মানুষের কোনো বন্ধু থাকে না।’

বন্ধু না থাক, ভালোবাসা থাকে। আর কে না জানে, ভালোবাসা ছায়ার মতো বিকশিত হয়। কালের কলসে ভরে তা যদি রাখা যায়, একদিন দিগ্বিদিক ছড়িয়ে যাবে তা, এ তো নিশ্চিত। মায়ার মতো আটকে থাকবেন আল মাহমুদ মনের পরতে পরতে। ঠিক যেন গাছের মতো চুপচাপ শেকড়ে বাঁধা। নিম্নাঙ্গ স্থানু। যেটুকু নড়াচড়া, বেড়ে ওঠা, মনমরা ওই হাসি— বুঝি এটুকুই প্রকাশ্যে আঁকা। 

কাজেই তাকে বলতে হয়— 

‘এ বিষণ্ন বর্ণনায় আমি কি অন্তত একটি পঙিক্তও হবো না 
হে নীলিমা, হে অবগুণ্ঠন? 
লোকালয় থেকে দূরে, ধোঁয়া অগ্নি মসলার গন্ধ থেকে দূরে 
এই দলকলসের ঝোপে আমার কাফন পরে আমি কতকাল 
কাত হয়ে শুয়ে থেকে দেখে যাবো সোনার কলস আর বিষের বিবাদ?।’ 


মানবকণ্ঠ/এফআই